আবু সাঈদ, নাটোর প্রতিনিধিঃ বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন বৈতরণী পার হওয়াও রীতিমত যুদ্ধ জয়। তবে এরপরেই আসল যুদ্ধ নির্বাচনের মাঠ। এ কারণে নির্বাচনে জয়ের আগেই মনোনয়ন পেয়েই সংবর্ধনা গ্রহণের দৃষ্টান্ত খুব বেশি নেই। দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের পাশে পাওয়া এবং মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে জয় লাভের আগেই মনোনয়ন পেয়েই সংবর্ধনা নিয়ে আলোচনায় এসেছেন নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনের প্রার্থী শাহনেওয়াজ মোল্লা। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে তিনি নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঢাকা থেকে উপজেলায় পৌঁছলে তাকে এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
গুরুদাসপুর পৌরসদরের চাঁচকৈড় নাজিম উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ওই সংবর্ধনার আয়োজন করেন উপজেলা আওয়ামী লীগ। ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রার্থী শাহনেওয়াজকে ফুলের মালা গলায় দিয়ে সংবর্ধনা জানান আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা আনন্দ মিছিল নিয়ে বাজার হয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ পার্টি অফিসে আসেন। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনিসুর রহমান ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।
এসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল বারী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি আহাম্মদ আলী মোল্লাসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, মনোনয়ন পেয়েই শাহনেওয়াজ মোল্লাকে সংবর্ধনা দেওয়ায় দলীয় নেতা-কর্মীদের একাংশসহ বিভিন্ন মহলে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকেই বলছেন, দলীয় প্রার্থী হিসেবে যে কেউ মনোনীত হলে ফিরে এসে দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী ও তাদের সমর্থকদের নিজের পাশে ফিরিয়ে আনাকে প্রথম চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন। এরপর অভিন্ন প্রার্থী হিসেবে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের জন্য মাঠে নামেন। কিন্তু, তেমন কিছু না করে এবং ভোটের আগেই বিজয় মালা পরায় ভোটারদের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। ফলে সুষ্টু ভোট হওয়ার ব্যাপারেও সংশয় তৈরি হচ্ছে তাদের মনে। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর এমন আচরণকে তার অনুসারীরা স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন তবে সমালোচনা করছেন অন্যরা।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী সংবর্ধনা দেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভায় দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরেই প্রার্থীকে সংবর্ধনা দেওয়ায় আওয়ামী লগের ভেতরে-বাইরে হচ্ছে সমালোচনা।
তবে জানতে চাইলে সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া এমকে কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এমন ঘটনা নিজ দলের অপরাপর মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ব্যথিত করে যা সামাজিক বা রাজনৈতিকভাবেও গ্রহণযোগ্য নয়।
জেলা মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল ওহাব বলেন, মানবাধিকারের দৃষ্টিতে এমন সংবর্ধনা বা আনন্দ মিছিল শুধু অগ্রহণযোগ্যই নয় বরং তা নির্বাচনি আচরণবিধিকেও দুর্বল করে। এমন ঘটনা রাজনৈতিক ও আইনিভাবেও সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মালেক শেখ জানান, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মনোনয়ন পাওয়াটাকেই প্রাথমিক বিজয় মনে করে এমন কাজ করেন অনেকে। কিন্তু, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে মনে রাখতে হবে, তার মনোনয়ন পাওয়াটাই বড় কথা নয় বরং নিজ কৌশল আর উদারতায় একই দলের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে নিয়ে ভোটের ফলে বিজয়ী হতে হবে। এক্ষেত্রে মনোনয়ন পাওয়ার পর পরই এমন সংবর্ধনা তাতে বাধা, শেষ বিচারে এতে প্রার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমন ঘটনা রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বলেও দাবি করেন তিনি।
জানতে চাইলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আছলাম জানান, এমন বিষয় নির্বাচনি আচরণবিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এতে নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গ হয়েছে মনে করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তমাল হোসেন। তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে মনোনয়নপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহনেওয়াজ মোল্লা বলেন, তিনি মনোনয়ন পাওয়ায় তার অনুসারী ও উপজেলা আওয়ামী লীগ আনন্দে এমন আয়োজন করে। তাকে মনোনয়ন দেওয়ায় ওই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় কমিটির সকলকে কৃতজ্ঞতা জানায় আয়োজকরা। তবে এমন যাতে আর না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছেন তিনি
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply