এম শহিদুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ফলদা ইউনিয়নের গাড়া এলাকার জহির উদ্দিনের বাড়ি। বয়স আশির কাছাকাছি। গাবাসারা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের ৪৫ শতাংশ জমি ছিল তার। প্রায় ২৫ বছর আগে যমুনার ভাঙনে সব জমি চলে যায় নদী গর্ভে। এরপর গ্রামে অন্যের জমিতে বাড়ি করে বসবাস শুরু করেন তিনি। ২০১৮ সালে সে বাড়িও গ্রাস করে নিয়েছে যমুনা। এরপর আবার অন্যের বাড়িতে বসবাস শুরু। তবে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার জমিসহ ঘর পেয়ে আনন্দিত জহির উদ্দিন। শুধু জহির নয়, তার মতো জেলার ১২টি উপজেলার ১২৭৪টি পরিবার পাচ্ছে এ ঘর।
জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে ৮শ’র মতো ঘরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ১৫ জানুয়ারি প্রথম ধাপে ৫৬৪টি গৃহহীন পরিবারের মাঝে ঘর বিতরণ করা হবে। রোববার (১৭ জানুয়ারি) টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর, গোপালপুর, ধনবাড়ী, মধুপুর, ঘাটাইল ও কালিহাতী উপজেলার ঘর নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি। এসময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ শহিদ উল্লাহ, সহকারী কমিশনার মো. সালাহউদ্দিন আইয়ূবী, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক কাজী জাকেরুল মওলা, কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রহীম প্রমুখ।
জেলা প্রশাসন থেকে জানা যায়, যাদের ভূমি ও ঘর নেই তাদের জমিসহ ঘর দেয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এই কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় সরকারিভাবে ১১৭৪টি পরিবারের মাঝে ঘর দেয়া হবে। এছাড়াও টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ, সংসদ সদস্য, উপজেলা আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান, ধনাঢ্য মানবিক ব্যক্তি ও সরকারি চাকুরীজীবীরা মিলে আরও ১০০ ঘর দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। প্রতিটি ঘরে দুইটা বেডরুম, কিচেন, ইউটিলিটি রুম, টয়লেট, বারান্দাও থাকবে।
ঘর পেয়ে ভূঞাপুরের গাড়াবাড়ি গ্রামের কহিনুর বেগম বলেন, যমুনার বাড়ি ঘর বিলীন হওয়ার পর গত চার বছর অন্যের বাড়িতে ছিলাম। নিজে শ্রমিকের কাজ করে কোনও রকম সংসার চালাচ্ছি। বাড়ি ঘর দেয়ার মতো কোনও টাকা পয়সা ছিল না। তাই অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। সরকারি ঘর পেয়ে আমি খুব আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমি দীর্ঘায়ু কামনা করি।
মধুপুর উপজেলার সরবানু বেগম বলেন, ৩০ বছর আগে আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে যায়। বাবার সম্পত্তি ও ভাইয়েরা গোপনে ভাগাভাগি করে নিয়েছে। প্রায় দুই বছর আমি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলাম। নিজের কোনও বাড়ি ঘর না থাকায় আমি অন্যের বাড়িতে জীবন যাপন করেছি। সরকারি ঘর পেয়ে আমি খুব খুশি।
এ বিষয়ে ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. ইসরাত জাহান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আসলাম হোসাইন বলেন, ভূঞাপুরের গাড়াবাড়ি এলাকায় নদী ভাঙনের শিকার হয়ে বাঁধের পাশে মানবেতর জীবন যাপন করছিল। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি জমিটি খাস। এরপরে ৯৫ শতাংশ জমি উদ্ধার করা হয়। সেই জমিতে গৃহহীন ২৫টি পরিবারের মধ্যে মুজিব বর্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার ঘর করে দেয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী সততা ও আন্তরিকতার সাথে ঘরের কাজগুলো করা হচ্ছে। মানবিক এই কর্মসূচি টাঙ্গাইল জেলায় সফল করা হবে। জেলার ১২টি উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে যখন রঙিন টিনের ঘর উঠবে তখন বাগানের ফুলের মতো ঝকঝক করবে ও ঝলঝল করে জ্বলে উঠবে।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত কোনও অনিয়মের খবর পাওয়া যায়নি। কোথাও কোনও নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করা হলে সেগুলো অপসারণ করে মানসম্মত সামগ্রী ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঘর বিতরণের করার ক্ষেত্রে যাতে কোনও প্রকার লেনদেন না হয় সে জন্য জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভা, আইন শৃঙ্খলা সভাসহ বিভিন্ন সভায় একাধিকবার আলোচনা করা হয়েছে। যাদের ভূমি ও ঘর নেই এবং যারা প্রকৃত-ভাবে ঘর পাওয়ার যোগ্য তাদের মাঝেই ঘর বিতরণ করা হবে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply