এম শহিদুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ
অনুষ্ঠিতব্য টাঙ্গাইলের কালিহাতী পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভয় দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানেসন্ধিহান বিএনপি। এমন পরিস্থিতির উপর দৃস্টি রেখেই প্রতীক পেয়ে প্রচার-প্রচারণায় নেমেছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নানা ধরণের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা। তবে পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা পাল্টাপাল্টি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনেরও অভিযোগ করছেন।
এবার এ পৌরসভায় ৩ মেয়র প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নুরুন্নবী সরকার, বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র আলী আকবর জব্বার এবং আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী (বহিষ্কৃত) স্বতন্ত্র প্রার্থী নারিকেল গাছ প্রতীকের মো. হুমায়ুন খালিদ।
প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষাসহ নতুন নতুন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। অত্যাধুনিক নাগরিকসেবা সম্পন্ন ডিজিটাল পৌরসভা গঠনের অঙ্গীকার রয়েছে তাদের। এছাড়াও পৌরসভার পানীয় জল, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও রাস্তাঘাটের উন্নয়নসহ দুর্নীতিমুক্ত আধুনিক ও জবাবদিহিমূলক পৌরসভা গঠনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন বিএনপি আর আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী।
সরেজমিনে জানা যায়, কালিহাতী পৌরসভায় মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। নৌকার প্রার্থী নুরুন্নবী সরকার আওয়ামী যুবলীগের উপজেলা শাখার সভাপতি। দলের ৭ মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে তিনি পেয়েছেন নৌকার টিকিট। স্থানীয় সংসদ সদস্য হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারির আশির্বাদও রয়েছে তার উপর। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ উপজেলা নেতৃবৃন্দ এ পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার পক্ষে মিটিং, মিছিলসহ সভায় অংশ নিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী নুরুন্নবী সরকার জানান, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে নৌকার ব্যাপক জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আগামি ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোটাররা তাকে নির্বাচিত করবেন। তিনি নির্বাচিত হলে পৌরবাসীর কল্যাণ এবং শান্তির জন্য সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, মাদকমুক্ত ও পরিকল্পিত পৌরসভা প্রতিষ্ঠা করবেন।
বিএনপি প্রার্থী আলী আকবর জব্বার জানান, ধানের শীষের প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র কালিহাতী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি। তিনি অধুনালুপ্ত কালিহাতী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌর প্রশাসক ও দুই বারের নির্বাচিত মেয়র। তিনি দীর্ঘদিন পৌরবাসীর সেবা করেছেন। তাদের দুঃখ-দুর্দশায় পাশে দাঁড়িয়েছেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হলে তিনি আবারও নির্বাচিত হবেন।
তার অভিযোগ, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় আওয়ামীলীগ প্রার্থী ও তার কর্মী-সমর্থকরা উগ্রতা ও ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছেন। ধানের শীষের প্রচারণায় বাঁধা দিচ্ছেন, মাইক ভাংচুর করছে, মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। অভিযোগ দিলেও রিটার্নিং অফিসার কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেননা। এতে নির্বাচনে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হবে এমনটা আশা করা বাতুলতা মাত্র। তবুও তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন না বলেও জানান তিনি।
অপর দিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী মো. হুমায়ুন খালিদ জানান, বর্তমানে বহিষ্কৃত হলেও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ছিলেন তিনি। তিনি সৎ আর আওয়ামী লীগের জন্য নিবেদিত হওয়ায় আওয়ামীলীগের বর্তমান ও সাবেক ত্যাগী নেতারা প্রকাশ্য ও গোপনে তার পক্ষে কাজ করছেন। এছাড়া পৌরসভায় তার বংশের আধিক্য বেশি। নিকটাত্মীয় ও ব্যক্তি ইমেজের কারণে তিনি সব ধরণের মানুষের কাছে পছন্দের প্রার্থী।
ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হলে তাকে পরাজিত করার শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর নেই। সততা ও ন্যায়-নীতির কারণে ভোটাররা তাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করবে।
কালিহাতী পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা তানজিন অন্তরা জানান, নির্বাচনী প্রচারণায় বাঁধা ও গাড়ি ভাংচুরের বিষয়ে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষ থেকে গত ১ ফেব্রুয়ারি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি ফৌজদারী কার্যবিধি লঙ্ঘন সংক্রান্ত বিধায় তিনি থানা পুলিশকে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি জানান, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আগামি ১৪ ফেব্রুয়ারি এ পৌরসভায় সকলের সহযোগিতায় সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
উল্লেখ্য চতুর্ধ ধাপে অনুষ্ঠেয় কালিহাতী পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ৩ জন, সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ১০জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ পৌরসভার ১২টি কেন্দ্রে মোট ২৮ হাজার ৬৫৫জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে মহিলা ভোটার ১৪ হাজার ৬৩৯ জন আর পুরুষ ১৪ হাজার ১৬ জন।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply