বাংলাদেশের প্রথম রেলপথ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ইলেক্ট্রনিক ট্রেন চালু করতে প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। আধুনিক এই ট্রেনের সুবিধা আরও বিস্তৃত করতে নারায়ণগঞ্জ জেলাকেও যুক্ত করা হচ্ছে এর সঙ্গে। এ জন্য ইলেক্ট্রনিক ট্র্যাকশন নির্মাণে সমীক্ষা শুরু করতে যাচ্ছে রেলওয়ে। সমীক্ষা প্রকল্প সম্পাদন করতে দ্রুত সময়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়ার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান- প্রতিবেশী দেশ ভারত অনেক আগেই ইলেক্ট্রনিক ট্রেন চালু করলেও বাংলাদেশে ইলেক্ট্রনিক ট্র্যাকশন না থাকায় এই ট্রেন চালু করা যায়নি।
২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ইলেক্ট্রনিক ট্রেন প্রবর্তনের জন্য আলোচনা শুরু করে রেলওয়ে। এ সম্পর্কিত একটি সমীক্ষা প্রকল্পের ওপর ওই বছরেই পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে নানা জটিলতায় সেই সময় আলোর মুখ দেখেনি এই প্রকল্প। নানা জটিলতা শেষে সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম সেকশনে ইলেক্ট্রনিক ট্রেন চালু করতে ইলেক্ট্রনিক ট্র্যাকশন নির্মাণে একটি সমীক্ষা প্রকল্প অনুমোদন করে।
এখন সমীক্ষা প্রকল্প সম্পাদনের জন্য একটি অভিজ্ঞ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের কাজ চলছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস.এম সলিমুল্লাহ বাহার। এস.এম সলিমুল্লাহ বাহার জানান, দেশের প্রথম রেলপথ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ইলেক্ট্রনিক ট্র্যাকশন নির্মাণ করা হচ্ছে।
এজন্য সমীক্ষা করতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। আমরা এখন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের লক্ষ্যে কাজ করছি। দ্রুত সময়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হবে। শীঘ্রই শুরু হবে সমীক্ষার কাজ। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের কারিগরি, আর্থিক, পরিবেশগত ও সামাজিক বাস্তবোপযোগিতা বিশ্লেষণ, বিশদ প্রকৌশলগত নকশা প্রণয়ন, বিশদ ব্যয় প্রাক্কলন প্রস্তুত, ডিপিপি ও টেন্ডার ডকুমেন্ট প্রস্তুত, পরিবেশের ওপর প্রভাব মূল্যায়ন, ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন পুনর্বাসন পরিকল্পনাসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করবে। এরপর মূল কাজে হাত দেওয়া হবে।
প্রকল্প সংশ্লষ্ট কর্মকর্তারা জানান- নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ওভারহেড ক্যাটেনারি ও সাবস্টেশনসহ ইলেক্ট্রনিক ট্র্যাকশন নির্মাণের জন্য অনুমোদিত সমীক্ষা প্রকল্পে খরচ হবে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের নভেম্বর থেকে আগামী ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই সমীক্ষা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে। এর মধ্যেই সমীক্ষা সংক্রান্ত কাজ শেষ করা হবে।
সমীক্ষা শেষে মূল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে চলাচল করা ট্রেনগুলো পরিচালনা করতে প্রায় ৩৫ শতাংশ খরচ কমবে। যাতায়াতে সময় কমবে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কমবে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্বন নিঃসরণ কমবে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। এসবের পাশাপাশি প্রকল্পটি রেলওয়ের রাজস্ব আয় বাড়াতেও ভূমিকা রাখবে।
এর কারণ হিসেবে রেল কর্মকর্তারা বলছেন- ইলেক্ট্রনিক ট্রেন সর্বোচ্চ ওজন বহনে সক্ষম এবং পরিবেশবান্ধব। পাশাপাশি এই ট্রেনগুলোর পরিবহন ব্যয়ও কম। মাত্র চার ইউনিট বিদ্যুতে এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া যাবে। প্রতি ইউনিট খরচ ১০ টাকা হলে এক কিলোমিটারে খরচ হবে মাত্র ৪০ টাকা। যেখানে ডিজেল চালিত ট্রেনে প্রতি কিলোমিটার জ্বালানি খরচ হাজার টাকারও বেশি।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply