আনোয়ার হোসেন।নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বেনাপোল যশোর থেকে। বঙ্গ বন্ধুর জন্ম শত বর্ষ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের নতুন আবিষ্কার বঙ্গবন্ধু ব্রি ১০০ ধান ক্ষেত এখন শোভা পাচ্ছে যশোর শার্শা উপজেলার বোরো ধান ক্ষেত গুলো। কেউ ব্যক্তি গত আবার কেউ বীজ উৎপাদনের জন্য এ ধান চাষ শুরু করেছেন। ভালো ফলনের আশায় এ ধানের চাষ নিয়ে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন অনেক চাষীরা। কৃষি বিভাগ ও বিজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গুলো বলছেন, এই ধানে রোগ-বালাই ও পোকা-মাকড় আক্রমণের পরিমাণ কম হওয়ায় অনেক কৃষক ঝুঁকবেন এই ধান চাষে।
শার্শা উপজেলার আলামিন ফিড নামে বিজ উৎপাদনকারী একটি প্রতিষ্ঠান ১ একর জমিতে বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০ ধান পরীক্ষা মুলকভাবে ধান লাগিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন বঙ্গবন্ধু ব্রি ১০০ বোরো মৌসুমের একটি নতুন জাত। এই জাতটি ২০০৬ সালে সংকরায়ণ করা হয় । পরে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা মাঠে ৫ বৎসরের ফলন পরীক্ষা করা হয়। ২০২০ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সী কতৃক ফলন পরীক্ষায় (পিভিটি) সন্তোষ জনক হওয়ায় জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ছাড় করণ করা হয়। ধানের বাড়তি ও রোগ বালাই কম। মনে হচ্ছে ফলন আশানুরোপ হবে। তিনি বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০ ধানের বিজ তৈরী করে দেশে বাজার জাত করবেন। চাষীরা তার কাছ থেকে আগামী বছর হতে বিজ সংগ্রহ করতে পারবেন। অনেক চাষী ইতিমধ্যে বীজ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে তিনি সংবাদকে জানায়।
শার্শা উপজেলার আমলাই গ্রামের ধান চাষী মোঃ রফিক ইসলাম বলেন, শুনেছি বঙ্গববন্ধু ব্রি ১০০ জাতের ধানের ফলন ভালো। বিঘাতে ৩০ থেকে ৩৪ মন ফলন পাওয়া যাবে। যদি এমন ফসল ঘরে আসে সামনের বছর তিনি জমিতে এ ধানের চাষ করবেন।
শার্শা উপজেলার কৃষি অফিসার প্রতাপ মন্ডোল বলেন, ক্ষুধা মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার বঙ্গবন্ধুর আশা পূরণে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর বঙ্গবন্ধু ব্রি ১০০ জাতের ধান উদ্ভাবন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী কেন্দ্রীক জিংক সমৃদ্ধ এ জাত টি উদ্ভাবন করে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বি আর আর আই)। যা তাদের উদ্ভাবিত ৬টি জাতের মধ্যে অন্যতম। এই ধানের চাষ আবাদ দ্রুত কৃষকদের মাঝে সম্প্রসারণ করতে কৃষি বিভাগ ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। পোকামাকড়ের আক্রমণ ও রোগ বালাই কম থাকায় উচ্চ ফলনশীল এ জাতের ধানকে জনপ্রিয় করার লক্ষে কৃষকদের উৎসাহিত করে চলেছে কৃষি বিভাগ। কিছু চাষীদের সার ও বিজ সরবরাহ ও ধান চাষের পদ্ধতি শেখানো হয়েছে।
কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০ ধানের বৈশিষ্ট্য হলো, আধুনিক উফশী ধানের সকল বৈশিষ্ট্য এ ধানে বিদ্যমান। গাছের বৃদ্ধি পর্যায়ে আকার আকৃতি ব্রি ধান ৭৪ এর মতো। ডিগ পাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা এবং পাতার রং সবুজ। পূর্ণবয়স্ক গাছের উচ্চতা ১০১ সেমি, ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন ১৬.৭ গ্রাম। চাল মাঝারি চিকন ও সাদা, জিংকের পরিমাণ ২৫.৭ মি গ্রম/কেজি, চালে অ্যামাইলোজ ২৬.৮ শতাংশ এবং প্রোটিন ৭.৮ শতাংশ।
বাংলাদেশের পেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু ধান ব্রি-১০০ এর জীবনকাল ১৪৮ দিন যা ব্রি ধান ৭৪ এর প্রায় সমান। গড় ফলন ৭.৭ টন/ হেক্টর। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুকুল পরিবেশে হেক্টর প্রতি ৮.৮ টন পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে। এ জাতের ফলন ব্রি ধান ৭৪ এর চেয়ে সামান্য বেশি (৪.৫শতাংশ), ধানের গুণগত মান ভাল অর্থাৎ চালের আকৃতি মাঝারি চিকন এবং ব্রি ধান ৮৪ এর চেয়ে ফলন প্রায় ১৯ শতাংশ বেশি। তাছাড়া জাতটিতে জিংকের পরিমাণ (২৫.৭ মি.গ্রাম/কেজি) ব্রি ধান ৭৪ এর চেয়ে বেশি (২৪.২মি.গ্রাম/কেজি)। যা জিংকের অভাব পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। দেশের যে সকল অঞ্চলে বোরো মৌসুমে জিরা ধান নামক জাতের চাষাবাদ করা হয় সেসব অঞ্চলে এ জাতটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা হতে পারে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply