নিজস্ব প্রতিনিধিঃ যশোর বহুল আলোচিত পঙ্গু হাসপাতালএ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ব্যবসায়ী মফিজুর রহমান হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ডা. আব্দুর রউফ। এ হত্যাকাণ্ড টি নিছক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে নানান ভাবে দেন দরবার অপতৎরতা শুরু করেছেন তিনি। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং তদন্তকারী সংস্থা সহ বিভিন্ন দফতরে টাকার খেলায় লিপ্ত হয়েছেন ডাক্তার আব্দুর রউফ। ফলে ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে নানা সংশয়ে রয়েছে নিহতের পরিবার ভয় ভিতিতে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে যশোর সদর শহরের মুজিব সড়কের রেলগেটস্থ যশোর পঙ্গু হাসপাতাল নামে একটি হাসপাতাল নির্মাণ করেছেন বহুলালোচিত ডাক্তার আব্দুর রউফ। যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চাকুরী করলেও তিনি নিজেই যশোর পঙ্গু হাসপাতালেই অধিকাংশ সময় ব্যয় করেন। তিনি যার ফলে সরকারি যশোর সদরহাসপাতাল থেকে অনেক অসহায় রোগী ডাক্তার রউফের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাশাপাশি মাঝে মধ্যে তিনি সদর হাসপাতালে গেলেও মুখ চিনে টাকা ওয়ালা রোগীদের তিনি বিশেষভাবে চিকিৎসা দিবেন বলে নিজের পঙ্গু হাসপাতালেই নিয়ে আসেন। এখানে আনার পর কসাইখানার মত রোগী তার স্বজনদের সাথে চরমভাবে দুর্ব্যবহার শুরু করা হয়। সাধারণ অসহায় রোগীদের জিম্মি করে চিকিৎসার নামে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের বৃদ্ধা আছিয়া বেগমকে পায়ের সমস্যায় ভর্তি করা হয়। রোগীর সাথে দুর্ব্যবহার করার কারণে ৩১ মার্চ সকালে আছিয়া বেগমকে রিলিজ করার জন্য ছেলে মফিজুর রহমান প্রথমে কাউন্টার থেকে হিসাব নিয়ে জানতে পারেন মাত্র তিনদিনে ৮০ হাজার টাকা বিল করা হয়েছে। এত অল্প সময়ে মোটা অংকের টাকা বিল করা এবং তার মায়ের সাথে অসদাচারণ করার বিষয় নিয়ে ডাক্তার রউফের কক্ষে যান মফিজুর রহমান। এই দু’টি বিষয় নিয়ে কথা বলা হলে রউফ উত্তেজিত স্বরে মফিজুর রহমানকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। এরপরে তার পোষা সন্ত্রাসীদের ডেকে এনেই মফিজুর রহমান তুলে দেয়া হয়। দিনের বেলায় প্রকাশ্যে ওই হাসপাতালের ভিতর থেকে একজন লোককে সন্ত্রাসীরা তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটিও ধামাচাপা দিতে হাসপাতালে থাকা ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বন্ধ করে রাখা হয়। আর ওইদিন মফিজুর রহমানকে চাঁচড়া রায়পাড়ার একটি বাড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। পরে তাকে আবার হাসপাতালে আনা হয়। আইন প্রয়োগকারী একটি সংস্থার মোবাইল ফোনের ট্রাকিংয়ে রায়পাড়ার মফিজুর রহমান থাকার বিষয়টি ধরা পড়ে।
এদিকে ঘটনার দুইদিন পর ডাক্তার রউফের হাসপাতালের লিফটের নিচের আন্ডার গ্রাউন্ড থেকে মফিজুর রহমানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হয়। এরপর নিহতের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের সাথে দেনদরবার শুরু করেন ডা. আব্দুর রউফ।
এদিকে মফিজুরের মরদেহ তদন্ত করার সময় এসআই সাইদুর রহমান সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন, লাশের বুকের উপরে ১৮ ইঞ্চি লম্বা গুরুতর ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের রক্তাক্ত চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া বুক, পেট, কোমর হতে হাটু পর্যন্ত জখম ও ভাঙ্গা রয়েছে।
এরপরও ঘটনাটি দুর্ঘনা বলে চালিয়ে দেয়ার জন্য ডা. আব্দুর রউফ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে ভুক্তভোগী পরিবার দাবি করেছেন।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই কাজী আবু জুবাইর বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
যশোরের বিজ্ঞ আইনজীবী কাজী ফরিদুল ইসলাম বলেছেন, এই ঘটনার মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার কোন সুযোগ নাই। যদিও অভিযুক্ত ব্যক্তি দায় এড়াতে নানা কলাকৌশল অবলম্বন করছে বলে শুনেছি। কিন্তু ওখানে যদি দুর্ঘটনাও ঘটে থাকে তাহলে প্রতিষ্ঠান মালিকের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ৩০৪(ক) ধারায় মামলা হতে পারে। ফলে ওই ধারায়ও আসামির বিরুদ্ধে জেলজরিমানা হতে পারে।
অভিযোগের ব্যাপারে ড. আব্দুর রউফ বলেন, অভিযোগ তো অনেক আছে। তবে ময়না তদন্ত বা কোনো সংস্থাকে প্রভাবিত করছি না। যার যার মতো সে কাজ করে যাচ্ছে। দেনদরবারের প্রশ্নই উঠে না
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply