দুসস ডেস্কঃ যশোরে দুইটি সহ দেশে ৫০টি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩২ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম চিহ্নিত হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে এসব অনিয়ম হয়েছে বলে সরকারের শিক্ষা অডিট অধিদফতরের নিরীক্ষা পরিদর্শন প্রতিবেদনে (এআইআর) চিহ্নিত করা হয়েছে। গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ এপ্রিল এ নিরীক্ষার কাজ চলে।
জানা গেছে, ৪৩টি সরকারি কলেজ ও সাতটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এসব অনিয়ম হয়েছে। অনিয়মের অভিযোগ ওঠা ৪৩টি সরকারি কলেজের তালিকায় রয়েছে- যশোরের সরকারি এম এম কলেজ, যশোর সরকারি কলেজ, মাগুরার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ঝিনাইদহের সরকারি কে সি কলেজ, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, বান্দরবান সরকারি কলেজ, মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজ, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ, সিলেটের সরকারি এম সি কলেজ, সন্দ্বীপের সরকারি হাজী এ বি কলেজ, টাঙ্গাইলের কুমুদিনী সরকারি কলেজ, ময়মনসিংহের সরকারি আনন্দ মোহন কলেজ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ঢাকার আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, লালবাগ সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, তিতুমীর কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি সংগীত কলেজ, হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারি কলেজ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর সরকারি কলেজ।
তালিকায় আরো রয়েছে- পঞ্চগড়ের মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ, ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ, নাটোরের নবাব সিরাজ-উদ-দোলা সরকারি কলেজ, জয়পুরহাট সরকারি কলেজ, ঝালকাঠি সরকারি কলেজ, নওগাঁর সাপাহার সরকারি কলেজ, ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, নওগাঁ সরকারি কলেজ, মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, কক্সবাজার সরকারি কলেজ, শেরপুর সরকারি কলেজ, মুন্সিগঞ্জের সরকারি হরগঙ্গা কলেজ, দিনাজপুর সরকারি কলেজ, বগুড়া সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ এবং রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান সরকারি ডিগ্রি কলেজ।
সাতটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় হলো, সরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা বিদ্যালয়, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, পঞ্চগড়ের সরকারি বি পি উচ্চবিদ্যালয়, ঝালকাঠি বালক উচ্চবিদ্যালয়, ধানমন্ডি গভ. বয়েজ হাইস্কুল, পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল।
অর্গানোগ্রাম বহির্ভূত মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ব্যতীত মাস্টাররোল শ্রমিক নিয়োগ করে বেতন/অন্যান্য ভাতা পরিশোধ না করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি এক কোটি ৮৩ লাখ ৪২ হাজার ৬০৮ টাকা।
কোন খাতে কতো টাকা অনিয়ম
নিরীক্ষা পরিদর্শন প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অভিযুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে টেন্ডার রেসপনসিভ না হওয়া সত্ত্বেও ‘কোটেশনের’ মাধ্যমে ব্যয় করা হয়েছে তিন কোটি ৪৯ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৬ টাকা, যা মূলত অনিয়ম। পরিপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী খাত ভিত্তিক ক্যাশ বই তৈরি এবং পৃথক পৃথক ব্যাংক হিসাবে হস্তান্তর করা হয়নি দুই কোটি ২৭ লাখ ১৭ হাজার ৬৩৮ টাকা।
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেমিনার তহবিলের আদায়কৃত অর্থের ন্যূনতম ২০ শতাংশ টাকায় সেমিনারের জন্য বই, জার্নাল ও পত্রিকা কেনার কথা থাকলেও তা কেনা হয়নি। এ খাতে অনিয়ম এক কোটি ৮০ লাখ ৫২ হাজার ৫৬৪ টাকা। শিক্ষক-কর্মচারীদের দেয়া সম্মানী ও বিভিন্ন বিল থেকে আয়কর কেটে না রাখায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ৩৭ লাখ ৯৯ হাজার ৪৩০ টাকা। বিল থেকে মূল্য সংযোজন কর কেটে না রাখায় অনিয়ম হয়েছে ৩৭ লাখ ২৯ হাজার ৮৪৮ টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছাত্রীদের উপবৃত্তির অবিলিকৃত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৪৬ লাখ ৬৬ হাজার ৭৪৬ টাকা। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা ৯০ লাখ ৮২ হাজার টাকা এক খাত থেকে আরেক খাতে স্থানান্তর করা হয়েছে। এভাবে ৫৪টি খাতে ৩১ কোটি ৯১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৫৪ টাকার অনিয়ম চিহ্নিত হয়েছে।
উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টিউশন ফি, ভর্তি ফিসহ কয়েক ধরনের ফি আদায় করলেও সরকারি কোষাগারে ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৬৪১ টাকা জমা করা হয়নি। এছাড়া প্রাপ্য না হয়েও ঢাকার বাইরে সংযুক্ত শিক্ষকদের অনেকে বিধিবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত হারে বাড়িভাড়া নিয়েছেন। এতে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৯২ লাখ ৭ হাজার ২৫০ টাকা। বিভিন্ন কাজে শিক্ষক-কর্মচারীদের অগ্রিম বাবদ টাকা দেয়া হলেও তা সমন্বয় না করে অনিয়ম করা হয়েছে ৬৯ লাখ ৬১৮ টাকা।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) উপপরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, অডিট আপত্তি একটি গতানুগতিক প্রক্রিয়া। মন্ত্রণালয় চেক লিস্টে এসব তথ্য হয়তো পায়নি। তাই তাদের এটা ফেস করতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠান অডিটের তথ্যগুলো জমা দিলে এটা নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply