আনোয়ার হোসেন, ভালুকা প্রতিনিধি ঃ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে যাত্রা শুরু করলো ময়মনসিংহের ভালুকার রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড নামের কুমিরের খামার। ন্যাশনাল লিজিং ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের বনভোজনের মাধ্যমে।
সূত্রে জানা যায় ২০০৪ সালে ভালুকা উপজেলার হাতিভের গ্রামে ১৩. ৪০ একর জমিতে চৌদ্দটি পুকুর খনন করে রেপটাইলস ফার্ম লিঃ গড়ে তোলেন মোস্তাক আহমেদ ও ব্যবসায়ী মেজবাউল হক। পরে মালয়েশিয়া থেকে ৭৫ টি বড় কুমির সংগ্রহ করে ছাড়া হয় ঐসব পুকুরে।
খামারটিতে কর্মচারী রয়েছে ২৫ জন। খামারে কুমিরের খাবারসহ প্রতি মাসে প্রায় আট দশ লাখ টাকা। কুমিরের চামড়া লেডিস ব্যাগ, বেল্ড শু সহ ওয়ালেট তৈরির কাজে ব্যবহার হয়। ইতালি ফ্রান্স জার্মানি জাপান কুমিরের চাহিদা রয়েছে। ভালুকার কুমিরের খামার থেকে এরইমধ্যে জাপানে পাঁচবার কুমিরের চামড়া এবং ২০১০ সালে জার্মানিতে হিমায়িত পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। জানা যায় দেশের আলোচিত-সমালোচিত ব্যক্তির পিকে হালদার ২০১২ সালে অনেকটাই অন্তরালে থেকে শতভাগ শেয়ার কিনে ভালুকায় রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেডের মালিক হন। পরবর্তী সময়ে তিনি অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে গেলে ফার্মটি ধ্বংসের দিকে চলে যায় পরে ওই কুমির খামার পরিচালনার জন্য গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হাইকোর্টের মাধ্যমে নাঈম আহমেদকে চেয়ারম্যান ও কুমির বিশেষজ্ঞ এনাম হককে ব্যবস্থাপনা পরিচালক করে ছয় সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হয়। এ দিকে আর্থিক জোগান না থাকায় কুমির গুলোর খাবারের সংকট দেখা দেয়। কুমির গুলোর খাবারের জন্য প্রতি মাসে শীত কালে খরচ হয় তিন লাখ টাকা আর গ্রীষ্ম কালে চার লাখ টাকা। তাই ব্যায় নির্বাহের জন্য চলতি মাসে ১৪ ফেব্রুয়ারী খামারটিকে দর্শনার্থীদের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
খামার পরিচালনা পর্ষদের এমডি এনাম হক বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর খামারে এসে দেখি কুমির গুলোর অবস্থা নাজুক, কুমিরগুলোর খাবার ও চিকিৎসার অভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে পরেছে। অনেক কুমিরের শরীরে ঘা। খাবার ক্রয় বা চিকিৎসা করার মত টাকা নেই। এসব সংকটের কথা তুলে ধরলে হাইকোর্টের নির্দেশে ন্যাশনাল লিজিং ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেডকে আরও ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ দেয়। ঋণের ৩৫ শতাংশ ছাড় হয়েছে। ওই টাকা থেকে কুমিরের খাবার কেনা কর্মচারীদের বেতন বিদ্যুৎ বিল সহ জরুরী ব্যয় মেটানো হচ্ছে । এনাম হক বলেন গত 8 মাসে কুমিরের ৯০০ টি বাচ্চা জন্ম হয়েছে। তাই এখন কুমিরের খাবার কিনতে টাকা সংগ্রহের জন্য খামার থেকে শিক্ষামূলক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কামার টিকে পর্যটন আকর্ষণ উপযোগী করতে এরই মধ্যে কিছু সংস্কার কাজ করা হয়েছে আরো কাজ চলছে। এখানে শিশুদের বিনোদনের জন্য হরিণের ব্যবস্থা করা হবে। গড়ে তোলা হবে কুমির রিসার্স সেন্টার ও মিউজিয়াম। ওই খামার থেকে বিদেশে শুধু চামড়া রপ্তানি করার অনুমতি রয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়া চামড়ার পাশাপাশি কুমিরের বাই প্রোডাক্টগুলো রপ্তানি অনুমতি পেলে ওই খামার এর মাধ্যমে বর্তমানের চেয়ে আরো দেড় গুণ রাজস্ব আয় করা সম্ভব। তিনি জানান ওই পর্যটনকেন্দ্র দর্শনার্থী ও কুমির রপ্তানি আয়ের থেকে কেন্দ্রের ব্যয় মিটিয়ে অবশিষ্ট টাকা ধীরে ধীরে ব্যাংক ঋণ শোধ করা হবে।
রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেডের ব্যবস্থাপক ডাঃ আবু সায়েম আরিফ জানান, যে উদ্দেশ্য নিয়ে ফার্ম শুরু হয়েছিল সে কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি, যদি বাংলাদেশ সরকার দেশীয় বাজারে বাইপ্রোডাক্ট গুলো বিক্রি করার অনুমতি দেয় তাহলে কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সম্ভব হবে। ইতিমধ্যে আপনারা জানেন হাইকোর্ট থেকে ছয় সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দিয়েছেন। পর্ষদ ইতিমধ্যেই পর্যটন ব্যবস্থা চালু করেছে, আর পর্যটকরা এখানে এসে অনেক কিছু দেখতে পারবে, জীবন্ত কুমিরের সাথে ছবি তুলতে পারবে। বিলুপ্ত প্রায় লবনাক্ত প্রাণীর ইতিহাস জানতে পারবে। আমরা আশা করছি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হব এ পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply