বাংলাদেশে প্রথম গবাদিপশুর ওলান ফোলা বা ম্যাসটাইটিস রোগের ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের দাবি করেছেন অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান।
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ গবাদি পশুর ওলান ফোলা বা ম্যাসটাইটিস রোগের ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের দাবি করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন ও মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ৭০ শতাংশ কার্যকারিতাসম্পন্ন ভ্যাক্সিনই সফল হিসেবে বিবেচিত হলেও তার উদ্ভাবিত ভ্যাক্সিনটি প্রায় একশত ভাগ কার্যকর বলে দাবি করেন তিনি।
ড. বাহানুর রহমান জানান, দুগ্ধপ্রধানকারী গবাদিপশুর ক্ষেত্রে ম্যাসটাইটিস একটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ। দেশের দুধের চাহিদার ৯০ শতাংশই পূরণ হয় গরুর দুধ থেকে। এই রোগে আক্রান্ত হলে গাভীর দুধ উৎপাদন আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। তাই ভালো দুধ উৎপাদনের জন্য গাভীর ওলানের সুস্থতা নিশ্চিত করা জরুরি। ব্যাকটেরিয়া ও কিছু ছত্রাকের আক্রমণে এই রোগ হয়।
উচ্চ ফলনশীল গাভীর দুধ উৎপাদন বেশি হওয়ায় ওলানও বড় হয়। ভেজা, নোংরা পরিবেশ এবং দুধ দোহনের পর মাটিতে শুয়ে পড়লে সংক্রমণ বেড়ে যায়। সাব ক্লিনিকেল ম্যাসটাইটিসে দুধ উৎপাদন কমে ও জীবাণু ছড়ায়, ক্লিনিকেল ম্যাসটাইটিসে উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। গাভীর সুস্থতা ও দুধ উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে দেশীয় প্রযুক্তিতে এই ভ্যাক্সিন তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী-ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (বাস-ইউএসডিএ) এই গবেষণায় অর্থায়ন করেছে। অধ্যাপক ড. মো. বাহানুরের নেতৃত্বে গবেষণায় আরও ছিলেন পিএইচডি শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নেত্রকোনা সহ ৯টি অঞ্চলের ৫১৭টি গাভীর নমুনা সংগ্রহ করে এই গবেষণা চালানো হয়েছে। নমুনায় চারটি ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করা হয়েছে: স্ট্রেপ্টোকক্কাস অ্যাগালাক্টিয়া, এসচেরিচিয়া কোলি, স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস ও স্ট্রেপ্টোকক্কাস উবেরিস। চারটি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করায় একে পলিভ্যালেন্ট ম্যাস্টাইটিস ভ্যাকসিন বলা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৪৬.২৩ শতাংশ গাভী ম্যাসটাইটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে ১৭.৯৯ শতাংশ ক্লিনিকেল ও ২৮.২৪ শতাংশ সাব ক্লিনিকেল ম্যাসটাইটিসে আক্রান্ত। ভ্যাক্সিনের দুই ডোজ প্রয়োগে আক্রান্তের হার ৯০ শতাংশ কমে যাবে।
গর্ভাবস্থায় ৫ মিলি করে দুবার ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম ডোজ ৭-৮ মাসে, দ্বিতীয় ডোজ ৯-৯.৫ মাসে। চামড়ার নিচে, ওলানের উপরে ও লেজের গোড়ায় ২.৫ মিলি করে প্রয়োগ করতে হবে। কার্যকারিতা ৫-৬ মাস থাকবে। গর্ভাবস্থায় না দিলে বাচ্চা হওয়ার পরও দেওয়া যাবে। ভ্যাক্সিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
বাণিজ্যিক উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে স্বল্পমূল্যে পৌঁছে দিতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর। ভ্যাক্সিনটি প্রান্তিক খামারিদের জন্য সহজলভ্য হবে, দুধ উৎপাদনের ঘাটতি দূর হবে এবং আমদানি ব্যয় কমবে।
ম্যাসটাইটিসের ব্যাকটেরিয়া জুনোটিক ধরনের, মানুষের মধ্যেও ছড়াতে পারে। ভ্যাক্সিনটি এন্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply