ঋতম্ভরা ব্যানার্জি: গতকাল গিয়েছিলাম শিলচরের চণ্ডী ঘাট চা বাগানের সংলগ্ন চণ্ডী ঘাট পিকনিক স্পটে। শুধু পিকনিক ই নয়, নদীতে নেমে পুণ্যস্নান করতে দেখা গেছে অনেককে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও উত্তর প্রদেশের মুখ্য মন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ যখন প্রয়োগরাজে কুম্ভ স্নান করছেন, মোবাইলে সেই দৃশ্য ধরে অনেকেই দুধের সাধ ঘোলে মিটানোর মতো নদীর অল্প জলেই ডুব দিচ্ছেন ও সূর্য প্রনাম করছেন দেখা গেল।
এরই মাঝে ভারতীয় বায়ু সেনার অধিকারীরা একটি গাড়ি নিয়ে আসরে হাজির। সবুজ বাগিচায় ঘেরা চা বাগানের এই ছোট্ট নদীটি তখন রীতিমত ক্ষুদ্র প্রয়াগ রাজের রূপ ধারণ করেছিল। বায়ুসেনার অধিকারীরা জানালেন তারা আবার আসবেন আগামী রবিবার পিকনিক করতে।
ছোট্ট নদীটির দুপাশে অসংখ্য তাঁবু খাটানো হয়েছে। রীতিমত পরিশ্রম করে চলেছে চা বাগানের ই বহু কর্মচারী এলাকাটি পরিচ্ছন্ন ও সুসজ্জিত করতে।
কী নেই সেখানে ? তাঁবুর পর সুদৃশ্য তাঁবু। কিছু জায়গায় রঙিন মাদুর বিছানো ছিল। নদীতে নেমে প্রচুর শিশু,মহিলা ও পুরুষ নদীগর্ভে খোদাই করে পাথর তুলছিল। তাদের জিজ্ঞেস করে জানা গেল তারা পাথর বেছে তুলে দৈনিক ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা মজুরি পান ঠিকাদারদের কাছ থেকে। ঠিকাদারেরা বিভিন্ন নির্মাণ কাজে এই পাথরগুলো ব্যবহার করেন। সঙ্গে সঙ্গে মাটি খোদাই র জন্য নদীর গভীরতাও বৃদ্ধি পায়।
আমরা একটি গাড়ি করে শিলচর থেকে গিয়েছিলাম সেই পিকনিক স্পটে। যাবার সময় রংপুর , উদ্ধারবন্দ ছড়িয়ে ঐতিহাসিক কাঁচাকান্তি কালীবাড়িতে গিয়ে পূজা দিয়েছি। আমাদের গ্রুপে ছিলেন শিলচরের আয়কর বিশেষজ্ঞ অনুপ দত্ত, ফটো জার্নালিস্ট রজত শুভ্র ভট্টাচার্য, সাংবাদিক উত্তম সি ও আরো অনেকে।
অনুপ বাবুরা উদারবন্ধেই নেমে মাংস, মাছ ও সবজি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটা করেন। গাড়ি তীব্র গতিতে ছুটে চললেও চণ্ডীঘাট চা বাগানের পাহাড়ি অঞ্চলে গতি শ্লথ করতে হয়।
গাড়ির মিউজিক সিস্টেমে গান বেজে ওঠে,” আমরা বাঁধন ছেঁড়ার জয়গানে”, “চলো না দীঘার সৈকত ছেড়ে, ঝাউবনের ছায়ায় ছায়ায়” ” জিন্দেগি এইসে হি পহেলি আয়ে ” ইত্যাদি।
আমরা পিকনিক স্পটে পৌঁছতেই আমাদের একটি তাঁবু ছেড়ে দেওয়া হলো। বিছানো হলো সুদৃশ্য মাদুর। গাড়িতে আগেই বোঝাই করা ছিল শুকনো কাঠের টুকরা। সেগুলি বের করে ইট দিয়ে কৃত্রিম চুলো তৈরি করা হলো।
ব্রেকফাস্টে ছিল ব্রেড বাটার, কলা, ফল ও চা।
অনুপ দত্ত, রাজীব বাবু, রজত শুভ্র ভট্টাচার্য ও আমি রান্নার কাজে হাত লাগালাম। টু ইন ওয়ান এ গান বাজতে শুরু হলো। নাচ গান বাজনার তালেতালে রান্নাও হলো।
বেলা বাড়তেই দেখেছি একের পর এক প্রাইভেট গাড়িতে অনেকেই আসছেন। পিকনিকের সরঞ্জাম নিয়ে। গাড়িতে গড়িয়ে আগেই ছয়লাপ হয়ে গিয়েছিল।
জানা গেল আগামী রবিবার পুরো স্পট ভাড়া দেওয়া হয়েছে বায়ু সেনার কাছে। তারা কার্পেট বিছিয়ে পুরো এলাকা আলোর মালায় সাজিয়ে উৎসব করবেন। স্নান করবেন। পিকনিক করবেন।
সন্ধ্যে নেমে আসতেই আমরা শিলচর ফিরে আসার জন্য রওনা দিলাম। আবার সেই গান, পাহাড়ি টিলার ওপর আশেপাশের চা বাগানের দৃশ্য। অনবদ্য অভিজ্ঞতা। মনে থাকবে বহুদিন।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply