নিজস্ব প্রতিবেদকঃ গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক ঘোষিত ফলাফলে ঝুড়ি প্রতীকের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী আওয়ামী লীগ সমর্থিত শেখ মো. আলমগীর ছিলেন পরাজিত। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) অনুষ্ঠিত ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন ‘টিফিন ক্যারিয়ার’ প্রতীকের প্রার্থী জুবায়েদ আদেল। প্রিজাইডিং অফিসারের ভুলে ‘ঝুড়ি’ প্রতীকের ভোট ‘ঘুড়িতে’ দেখিয়ে মূলত ‘টিফিন ক্যারিয়ার’ প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল।
যদিও ঝুড়ি প্রতীকের প্রার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে ঘোষিত ফলাফল স্থগিত করেছিলেন রিটার্নিং অফিসার। সোমবার ভোট পুনঃযাচাইয়ে জিতলেন ‘পরাজিত’ ঝুড়ি প্রতীকের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী আওয়ামী লীগ সমর্থিত শেখ মো. আলমগীর। ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে। ঐ ওয়ার্ডে প্রার্থীদের ভোটের ফল পরিবর্তনের যে অভিযোগ উঠেছিল, তা সত্য প্রমাণিত হয়েছে।
নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে ভোট পুনর্গণনার পর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে শেখ মোহাম্মদ আলমগীরকে বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন। ফল বদলে যাওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে দায়ী করেন তিনি। পুরান ঢাকার লালবাগ, বংশাল এলাকা নিয়ে গঠিত এই ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন চার জন। তারা হলেন—শেখ মোহাম্মদ আলমগীর (ঝুড়ি), জুবায়েদ আদেল (টিফিন ক্যারিয়ার), এ এম কাইয়ুম (রেডিও) ও ইরোজ আহমেদ (ঘুড়ি)।
রিটার্নিং অফিসার বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের পর ফল প্রকাশের সময় প্রিজাইডিং কর্মকর্তার ‘ভুলে’ টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীকের প্রার্থী জুবায়েদ আদেলকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিলেন। সেদিন আদেলের টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীকে সর্বোচ্চ ২৪৪৫ ভোট পড়েছে জানিয়ে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল। তখন শেখ আলমগীরের ঝুড়ি প্রতীকে দেখানো হয়েছিল ২২৩৫ ভোট। কিন্তু ফল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আলমগীর তা চ্যালেঞ্জ করে বলেন, আরমানিটোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরুষ ভোটকেন্দ্রে (কেন্দ্র-৫২০) তার প্রাপ্ত (৪৩৯) ভোট ঘুড়ি প্রতীকের প্রার্থী ইরোজ আহমেদের ভোটের সঙ্গে যোগ হয়ে গেছে। অন্যদিকে ঘুড়ি প্রতীকের (২০২) ভোট যোগ হয়েছে তার ঝুড়ি প্রতীকের ভোটের সঙ্গে। ইরোজ আহমেদ ঘুড়ি প্রতীকে ১৬৭৫ ভোট পান বলে ফল ঘোষণার সময় দেখানো হয়েছিল। আরমানিটোলার ঐ কেন্দ্রে তার ঘুড়ি প্রতীকে প্রাপ্ত ভোট দেখানো হয়েছিল ৪৩৯।
রিটার্নিং কর্মকর্তা বাতেন জানান, আরমানিটোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরুষ ভোটকেন্দ্রে ঝুড়ি প্রতীকে ভোট পড়েছিল ৪৩৯ ভোট আর ঘুড়িতে ২০২ ভোট। কিন্তু সেটি উলটে গিয়ে ফল এসেছে। ফলে পুরো রেজাল্টে টিফিন ক্যারিয়ারের প্রার্থী জিতে গিয়েছিলেন। পরে ঝুড়ি প্রতীকের প্রার্থী অভিযোগ দেওয়ার পর এটি যাচাই করে দেখা গেছে প্রার্থী ও প্রিজাইডিং অফিসারের ফলাফল ভিন্ন। আমরা বাধ্য হয়ে ফল স্থগিত করেছি, আর বিধি ও আইন দেখেছি। প্রিজাইডিং অফিসার বলেছেন, তিনি লিখতে ভুল করেছেন, তিনি ক্ষমা চেয়ে লিখিতও দিয়েছেন। ফল যাচাইয়ে আরমানিটোলার ৪৩৯ ভোট ঝুড়ি প্রতীকে যোগ করায় শেখ আলমগীরের ভোট দাঁড়িয়েছে ২৪৭২ ভোট, যা জুবায়েদ আদেলের (টিফিন ক্যারিয়ার) ২৪৪৫ ভোটের চেয়ে বেশি। এছাড়াও এ এম কাইয়ুম (রেডিও) ৭২৩ ভোট ও ইরোজ আহমেদ (ঘুড়ি) ১ হাজার ৪৩৮ ভোট পেয়েছেন। যেহেতু শেখ মোহাম্মদ আলমগীর ঝুড়ি প্রতীকে ৯টি কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ২৪৭২ ভোট পেয়েছেন, সেজন্য সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত হিসাবে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে শেখ আলমগীরকে বিজয়ী ঘোষণা করছি।
ইভিএমে ফল জালিয়াতি মানব না: এদিকে নতুন করে ফল ঘোষণায় আপত্তি জানিয়েছেন প্রথমবার বিজয়ী কাউন্সিলর প্রার্থী জুবায়েদ আদেল। তিনি বলেন, এই ফলাফল আমি মানি না। ইভিএমে জালিয়াতি করে আমাকে পরাজিত করানো হয়েছে।
ইভিএমে শতভাগ সফল-এনআইডি ডিজি: ফলাফল ঘোষণার সময়ে উপস্থিত জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ইভিএম নতুন পদ্ধতি, যার কারণে কিছু কনফিউশন থাকতেই পারে। তবে এটি আগের সব পদ্ধতির চেয়ে নির্ভরযোগ্য। একটি কেন্দ্রে যে কয়টি বুথ থাকবে, তার সব ইনডিভিজুয়াল ফলাফল অডিট কার্ডে সংরক্ষিত থাকে। এছাড়াও এসডি কার্ডে ভোটারসহ, কেন্দ্রের তথ্য সংরক্ষিত থাকে। কেন্দ্রে কতজন ভোট দিয়েছে, কোন প্রতীকে কত ভোট পড়েছে সব তথ্যই সংরক্ষিত থাকে অডিট কার্ডে। দুই সিটির ভোটে ইভিএম ব্যবহারে শতভাগ সফল।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply