ওরা গ্রামে বসে কল সেন্টারের নামে ফোন করে প্রতারণা করে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকের কাছ থেকে পিনকোড নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে একাউন্ট থেকে টাকা স্থানান্তর করে ব্যালান্স ‘জিরো’ বানিয়ে দেয়।
নিভৃত পল্লিতে এভাবে প্রতারণা করে কাঁচা বাড়ির স্থানে নির্মাণ করেছে পাকা দালান। প্রতারক শুধু এক বাড়িতে নয়, আশপাশে ১৫০ বাড়িতে গড়ে উঠেছে মোবাইল প্রতারক চক্র। প্রতারণা করা তাদের পেশা এবং এদের খুব একটা গ্রামের বাইরে যেতে হয় না।
বড়ো ধরনের কেনাকাটা থাকলে তারা ঢাকায় এসে কাজ সেরে আবার গ্রামের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। আর এসব গ্রামের বাড়ি থেকে প্রতারকদের সহজে আটক বা গ্রেফতার করতে পারে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানাধীন আজিমনগর ইউনিয়নের মিয়াপাড়া গ্রামে এমন প্রায় ১৫০ প্রতারকের বসবাস। এদের সবার পেশা প্রতারণা। পারিবারিকভাবে বাবা-মা, ছেলেমেয়ে সবাই প্রতারণায় সহায়তা করেন। এক সময় মোবাইল ফোন করে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে চাঁদা দাবি করা ছিল তাদের পেশা।
ঢাকার একটি চাঁদাবাজি সিন্ডিকেট তাদের দিয়ে শুধু নির্দিষ্ট ফোনে ফোন করে শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামে চাঁদা দাবি করত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট গ্রেফতার করলে তারা প্রতারণার কৌশল পালটে ফেলে।
মিয়াপাড়া গ্রামের মোহন সিকদার (৩০) করোনার এই দুর্যোগে মাত্র দুই মাসে ১ কোটি টাকা প্রতারণা করেছেন। গত ৬ জুন মোহন সিকদারসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করার পর এ প্রতারণার কৌশল জানতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ মোহন নিজের জন্য ৫০ ভাগ, সহযোগীদের জন্য ৩০ ভাগ, হান্টার টিমকে ২০ ভাগ এবং স্পুফিং টিমকে নম্বরপ্রতি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কিংবা কথা বলার সময়ের ভিত্তিতে টাকা প্রদান করে থাকে।
প্রতারণার কৌশল হিসেবে এরা মোবাইল কোম্পানি বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিকাশ, ইউক্যাশসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কলসেন্টারের নম্বর স্পুফিং করে। আবার ব্যাংকের এটিএম কার্ডের পিনকোড জানার জন্য ঐ ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ারের নম্বর স্পুফিং করে। প্রথমে এক জন বিকাশ বা ইউক্যাশ বা এটিএম কার্ডের গ্রাহকের মোবাইল ফোনে কল করা হয়।
নাম্বার স্পুফিং বা ক্লোন করায় গ্রাহকরা হুবহু সংশ্লিষ্ট নাম্বার থেকেই ফোন পান। ফোন করে অ্যাকাউন্ট বাতিল, স্থগিত বা সিস্টেম আপগ্রেডের কথা বলে তথ্য, পিন বা ভেরিফিকেশন কোড জেনে নিয়ে অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণে নেয় তারা। প্রতারকদের স্পুফিং নাম্বারের আগে সাধারণত ‘প্লাস চিহ্ন’ থাকে। উদাহরণস্বরূপ কোনো কাস্টমার কেয়ারের নাম্বার যদি ‘১২২১’ হয়, তাহলে প্রতারকদের দেওয়া ফোন কলে নাম্বার হবে ‘+১২২১’।
র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, সম্প্রতি সারাদেশে কলসেন্টারের নামে ফোন দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গোপন পিনকোড জেনে নিয়ে লাখ লাখ টাকার প্রতারণা করা হয়েছে।
মিয়াপাড়া গ্রামে প্রায় ১৫০ জন প্রতারক রয়েছেন। এছাড়া সারাদেশে এ ধরনের সাত-আটটি চক্র রয়েছে। এদের তালিকা করে যেভাবে হোক গ্রেফতার করা হবে। তবে এটা প্রতিরোধ করতে প্রথমেই গ্রাহকদের সচেতন হওয়া জরুরি। কেউ ফোন দিয়ে কল সেন্টারের কথা বললেও তিনি যেন তার একাউন্টের গোপন পিনকোড বলে না দেন।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply