ঢাকায় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ওয়াসার পরিত্যক্ত কূপের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিবছরই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানির যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে রাজধানীতে। বিপরীতে তুলে ফেলা পানির ঘাটতি পূরণে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। তাই মাঝেমধ্যে হওয়া পানি সংকটের হাত ধরে যেন ধেয়ে আসছে ভয়াবহ পরিণতি।
একসময় পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হবারও আশঙ্কা করছেন তারা। ওয়াসা বলছে, বৃষ্টির পানি মাটির নিচে দেয়ার কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে। শতভাগ পানিই আনা হবে শহরের বাইরে থেকে।
প্রতিদিন ঢাকা ওয়াসা ৮৮৭ টি পাম্পের মাধ্যমে ২৫৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করে। এর শতকরা ৬৮ ভাগ মাটির নিচের উৎস থেকে আসে। এছাড়াও শিল্প কারখানা ও বহুতল ভবনে গভীর নলকূপ দিয়ে বিপুল পরিমাণ পানি তোলা হয়। অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে ও স্তর নিচে নেমে গিয়ে কূপ পরিত্যক্ত হয়ে প্রায়ই পানি শূন্য থাকে বিভিন্ন এলাকা।
আশপাশের গ্রামগুলোতে আগে ৮ থেকে দশ ফুট খুঁড়লেই পানি পাওয়া যেত। এখন বেশি খনন করেও বছরজুড়ে ব্যবহার উপযোগী পানিও পাওয়া যায় না কয়েক বছর ধরে। অর্থাৎ পানির স্তর নিচে নামার প্রভাব শহরতলীতেও পড়তে শুরু করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরের মধ্যে ২০০০ পুকুর থাকলেও তিন দশকে টিকে আছে মাত্র শ’ খানেক। খাল ও নদ-নদীগুলো ময়লা-আবর্জনা-বর্জ্যে দূষিত থাকে প্রায় সারা বছর। এ পানি ভূগর্ভে গেলে উপকারের বদলে ক্ষতিই বেশি হবে ব্যবহারকারীদের।
ঢাবি ভূগোল পরিবেশ অধ্যাপক নুরুল ইসলাম নাজেম বলেন, আমাদের বিল্ডিং কন্সট্রাকশন এবং শহর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে যে অনিয়ম চলছে তাতে করে ফাঁকা কিছু থাকছে না। পানি যে চুইয়ে নিচে যাবে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
একদশক ধরে নানা পদক্ষেপের পর মাত্র ৩২ শতাংশ পানি বাইরে থেকে আনতে সক্ষম হয়েছে ঢাকা ওয়াসা। বিতরণ লাইন সম্পন্ন না হওয়ায় এখনও মাটির নিচ থেকেই পানি তোলা হয়। এ কারণে আরও সংকুচিত হচ্ছে হাজার বছর ধরে জমানো ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। ওয়াসার ভাবনা এবার বৃষ্টির পানির বিকল্প ব্যবহার নিয়ে।
ওয়াসা এমডি প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, বেশ কিছু পরিত্যক্ত কূপের মাধ্যমে ঢাকার যে বৃষ্টির পানি তা ধরে নিচে দিতে চাই।
প্রতিবছর ঢাকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। জলাধার তৈরি করে এ পানি ব্যবহার উপযোগী করলে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমানো এবং বহু দূর থেকে শোধন করে পানি আনার খরচও কমবে-এমন অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply