October 7, 2024, 2:25 pm

তথ্য ও সংবাদ শিরোনামঃ
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ভালুকায় বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে ৪টি দোকানঘর পুড়ে ছাঁই বনানীর স্টার কাবাবে কাচ্চি বিরিয়ানির সাথে পচা ও গন্ধ টিক্কা দেওয়ায়র প্রতিবাদে হামলার মামলায় ১১জন গ্রেফতা। সাংবাদিক আমিরুল মোমিনিন মানিক এর উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত সারা বিশ্বকে একের পর এক চ্যালেঞ্জএবারে মাটিতে নয়, হাওয়ায় দৌড়াবে ট্রেন ভারতে দেশের দুই শেয়ার বাজারে বড় পতন, বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ। ভালুকায় শ্বাসরোধ করে মেয়েকে হত্যা; মা আটক ভালুকায় ব্যাটারি চালিত অটোরিকশায় চার্জ দিতে গিয়ে চালকের মৃত্যু সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সরকার সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডাঃ একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মৃত্যুতে ভাসানী অনুসারী পরিষদের শোক প্রকাশ ১৮৮ শতাংশ জমি দখল করে ৬৯ বছরের বৃদ্ধকে জেলে পাঠাল বিএনপি নেতা আহমেদ আযম খান, জমি ফেরত ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন হার্ট অ্যাটাকের ভয় পাবেন না ! বেনাপোল পোর্ট থানায় মামলা, আটক ৫ লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল এর কবিতা শিক্ষকের কণ্ঠস্বর: শিক্ষায় একটি নতুন সামাজিক অঙ্গীকার” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত বিটিএ ও বাকবিশিস’র যৌথ উদ্যোগে ৫ অক্টোবর-২০২৪ ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ পালন। ঢাকার যানজট নিরসনে ইছহাক দুলালের ১১ দফা প্রস্তাবনা পেশ ইতিহাসখ্যাত বহু পরিবারের শেষ কোথায়? অনেকেই জানেন না সিরাজদৌল্লার শেষ বংশধর কোথায়? শত কোটি টাকার মালিক ছালাহউদ্দিন পূর্বাচলজুড়ে দরবেশ আতঙ্ক। সন্ত্রাস চাঁদাবাজ ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জে যুবদলের সমাবেশ। নিত্য পণ্যের দামের চলছে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা, কমার কোনো লক্ষণ নেই, মারাত্মক নাজেহাল অবস্থায় সাধারণ মানুষ। সেপ্টেম্বর মাসে ২৮ জনকে পিটিয়ে হত্যা ধর্ষণ ৪৪ জন। বেনাপোল সীমান্তের চিহ্নিত মাদক সম্রাট বাদশা মল্লিক আটক। ভালুকায় ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতা হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৬৬৬ কোটি টাকা কর দিতে হবেনা, হাইকোর্টে এনবিআর এর মামলা প্রত্যাহার। খুব শীঘ্রই স্থবির হয়ে যাচ্ছে দেশ, দুর্ভিক্ষ আসন্ন, ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১৪%, অনিয়ন্ত্রিত ডলারের দাম, গ্যাস-বিদ্যুতের বিল দ্বিগুণ। কক্সবাজারে উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গোলাগুলি নিহত ১ এবং আহত ৫ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ভারতে কম মূল্যে রফতানি হচ্ছে ইলিশ দোহাই দিচ্ছে পুরনো পরিপত্রের সংশ্লিষ্টরা। গুমের শিকার শামীম চাকুরী হারিয়ে এখন পথে পথে

আশুরার ঐতিহাসিক সম্মানিত, তাৎপর্যপূর্ণ এবং হৃদয়বিদারক ঘটনাবলী।

আশুরার ঐতিহাসিক সম্মানিত, তাৎপর্যপূর্ণ এবং হৃদয়বিদারক ঘটনাবলী।

হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। ‘মহররম’ শব্দের অর্থ সম্মানিত। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর নিকট মাসের সংখ্যা বারো, এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। (সূরা: তাওবা, আয়াত: ৩৬)। এ চার মাসের বৈশিষ্ট্য হলো, যারা বিশেষভাবে এ মাসগুলোতে ইবাদত-বন্দেগি করবে, আল্লাহ তাআলা তাদের বাকি আট মাস ইবাদত করার তাওফিক দান করবেন এবং যারা এ চার মাস নিজেকে গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে, তাদের জন্য বাকি আট মাস যাবতীয় পাপকাজ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হবে।

চন্দ্রবর্ষের বারো মাসের মধ্যে মহররমকেই ‘শাহরুল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর মাস’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর পবিত্র কোরআনে উল্লিখিত সূরা তাওবার ৩৬ নম্বর আয়াতাংশে ‘আরবায়াতুন হুরুম’ অর্থাৎ ‘অতি সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ চার মাস’ বলতে জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব এই চার মাসকেই বোঝানো হয়েছে।

মহররম মাসের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। এই দিনটি সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। এই দিনের বিশেষ তাৎপর্য হলো, এই দিনেই পৃথিবীর বহু ঐতিহাসিক ও অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।

এই দিনেই সৃষ্টি করা হয় আমাদের আদি পিতা হজরত আদম (আঃ) কে, এই দিনেই তাঁকে বেহেশতে প্রেরণ করা হয়, এই দিনেই তাঁকে বেহেশত থেকে দুনিয়ায় প্রেরণ করা হয় এবং এই দিনেই তাঁদের উভয়কে (আদম-হাওয়া) আরাফাতের ময়দানে একত্র করা হয় ও তাঁদের ভুল-ত্রুটি মার্জনা করা হয়। অধিকন্তু এই দিনেই তিনি ইন্তেকাল করেন।

এই দিনেই মুসলিম জাহানের পিতা হজরত ইব্রাহিম (আঃ) কে আল্লাহ তাআলা অশেষ মেহেরবানিতে অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তি দেন, যখন নমরুদ বাহিনী তাঁকে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করে।

এই দিনেই হজরত মুসা কালিমুল্লাহ (আঃ) নীল নদ পার হয়ে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি পান এবং ফেরাউন দলবলসহ নীল নদে ডুবে মারা যায়।

এই দিনেই দীর্ঘ সময় ধরে প্রবল বন্যার পর ‘আদমে সানি’ বা ‘দ্বিতীয় আদম’ উপাধিতে ভূষিত হজরত নূহ (আঃ)-এর নৌকা জুদি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থান করে এবং তিনি ও তাঁর অনুসারী ইমানদার ব্যক্তিরা বেঁচে যান। পক্ষান্তরে যারা তাঁর প্রতি ইমান আনেনি, তারা সবাই মৃত্যুমুখে পতিত হয়।

এই দিনেই ছাহেবে হুত নামে অভিহিত হজরত ইউনুস (আঃ) রাতের অন্ধকারে, পানির গভীরে ও মাছের পেটে এই তিন স্তরের অন্ধকার থেকে মুক্তি পান।

এই দিনেই হজরত আইউব (আঃ) সুদীর্ঘ ১৮ বছর রোগভোগের পর পূর্ণ সুস্থতা লাভ করেছিলেন। তিনি এমন সুস্থতা লাভ করেছিলেন যে তাঁকে দেখে তাঁর স্ত্রীও চিনতে পারেননি। এটা হচ্ছে মহান আল্লাহর মহা অনুগ্রহের ফলমাত্র এবং নবীদের অন্যতম হজরত আইউব (আঃ) এর কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার বহিঃপ্রকাশ।

এই দিনেই হজরত ঈসা মাসিহ (আঃ) জন্মগ্রহণ করেন এবং এই দিনে ত্রিতত্ত্ববাদীদের রোষানল থেকে বাঁচানোর জন্য আল্লাহর অশেষ কুদরতে তাঁকে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়, যা পবিত্র কোরআনে সূরা আলে ইমরানের ৫৫ নম্বর আয়াতে উল্লেখ রয়েছে।

এই দিনেই হজরত মুসা (আঃ) আল্লাহর সঙ্গে তুর পাহাড়ে গিয়ে কথা বলেন এবং ইবরানি ভাষায় নাজিলকৃত প্রসিদ্ধ কিতাব তাওরাতপ্রাপ্ত হন।

এই দিনেই হজরত ইয়াকুব (আঃ) এর অতি স্নেহের সন্তান, পরে মিসরের সম্রাটের স্বপ্নের তাবির বা ব্যাখ্যাকার হজরত ইউসুফ (আঃ) কে বহুকাল পরে ফিরে পান এবং তাঁর সন্তান হারানো বেদনার অবসান হয়।

এই দিনেই রাসুলে আরাবি নবীকুল শিরোমণি, ইমামুল হারামাইন, সাইয়্যদুস সাকালাইন, শাফিউল উমাম, ছাহেবে কাউসার, ছাহেবে কোরআন, হাদিউল উমাম, ইমামুল মুরসালিন জনাবে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সর্বপ্রথম ওহিপ্রাপ্ত হন।

এই দিনেই হজরত সোলায়মান (আঃ) সিংহাসন লাভ করেন। যাতে করে প্রতিদিন তিনি সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর সৈন্যসামন্ত নিয়ে এক মাসের রাস্তা ভ্রমণ করতেন, যা পবিত্র কোরআনের সূরা সাবার ১২ নম্বর আয়াতে উল্লেখ রয়েছে।

এই দিনেই আল্লাহ তাআলা এই পৃথিবীতে সর্বপ্রথম রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করেন।

আশুরার দিনে সংঘটিত সর্বশেষ ঐতিহাসিক ঘটনা হচ্ছে হজরত হুসাইন (রাঃ) এর শাহাদাত। ইতিহাসটা অনেকটা এ রকম যে, কূফাবাসী একের পর এক চিঠি হজরত হুসাইন (রাঃ) এর কাছে পাঠাতে লাগলেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, তারা ইয়াজিদের পরিবর্তে আপনার হাতে বাইয়াত হতে চায়। এক পর্যায়ে অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য মুসলিম ইবনে আকিলকে পাঠানো হয়। তখনো কূফার অবস্থা ছিল শান্ত। তাই কূফাবাসীর আবেগের কোনো কমতি ছিল না। তাই মুসলিম ইবনে আকিল হুসাইন (রাঃ) এর কাছে পত্র লেখে জানান যে, তাদের কথা বাস্তব আপনি কূফায় চলে আসুন। পত্র পাঠানোর পরপরই কূফার শাসক পরিবর্তন হয়। ইয়াজিদের পক্ষ থেকে উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ কূফার শাসক হন। সে ছিল নিষ্ঠুর প্রকৃতির। তার হুমকিতে কূফাবাসী নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসে। এমনকি মুসলিম ইবনে আকিলকেও তারা থাকার সুযোগ দিতে রাজি হয়নি। এক পর্যায়ে তাকে গ্রেফতার করে হত্যা করা হয়। এদিকে এতকিছু হচ্ছে কিন্তু সে সংবাদ মদীনায় পৌঁছেনি। তাই হুসাইন (রাঃ) মুসলিম ইবনে আকিলের চিঠি মোতাবেক প্রস্তুতি নিয়ে রওয়ানা হয়ে যান।

অবশেষে ৬১ হিজরির মহররম মাসের আশুরার দিন কারবালায় শাহাদাত বরণ করেন। তখন তার বয়স ছিল ৫৪ বছর ছয় মাস পনের দিন।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলে করিম (সাঃ) হিজরত করে মদিনায় আগমন করার পর দেখলেন, ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা রাখে। রাসূল (সাঃ) এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, এই দিনে হজরত মুসা (আঃ) ও বনি ইসরাইল শক্রবাহিনী থেকে মুক্তি লাভ করেছিলেন, তাই এই দিনে হজরত মুসা (আঃ) এর শুকরিয়া আদায়স্বরূপ রোজা রেখেছেন। তা শুনে রাসুলে পাক (সাঃ) বললেন, হজরত মুসা (সাঃ)-এর অনুসরণের ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে বেশি হকদার; তাই এই দিনে তিনি রোজা রাখেন এবং অন্যদেরও রোজা রাখার হুকুম দেন। কিন্তু কেবল আশুরার দিনে রোজা রাখলে বাহ্যিকভাবে ইহুদিদের অনুকরণ হয়ে যায়। তাই রাসুলে মাদানি (সাঃ) বলেন, তোমরা আশুরার রোজা রাখো এবং ইহুদিদের সাদৃশ্য পরিহার করো। অর্থাৎ আশুরার আগে বা পরে আরও এক দিন রোজা রাখো। অর্থাৎ মহররমের ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ এই দুই দিন রোজা রাখো।

উম্মুল মুমিনিন হজরত হাফসা (রাঃ) বলেন, রাসুলে পাক (সাঃ) চারটি কাজ কখনো ত্যাগ করেননি। (১) আশুরার রোজা, (২) জিলহজের প্রথম নয় দিনের রোজা, (৩) আইয়ামে বিযের রোজা তথা প্রতি মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখের রোজা, (৪) ফজর ওয়াক্তে ফরজের আগে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ।

হজরত কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলে পাক (সাঃ) ইরশাদ করেন, আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী, আল্লাহ তাআলা এর অছিলায় অতীতের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন। (তিরমিজি)।

হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলে পাক (সাঃ) এরশাদ করেন, রমজানের রোজার পরে মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ, যেমন ফরজ নামাজের পরে শেষ রাতের নামাজ অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাজ সবচেয়ে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন।

এ দিবসে সঠিক ফজিলত অনুধাবন করে সঠিক ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর অশেষ রহমত বা করুণার আশায় মাগফিরাতের প্রত্যাশায়, এই দিনের মহান ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত, রাসুল (সাঃ) প্রদর্শিত পথে এগিয়ে চলার অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়া উচিত।

পরিশেষে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনের দরবারে দোয়া কামনা করি, তিনি যেন আমাদের পবিত্র আশুরার তাৎপর্য অনুধাবন করে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।

সুফী মোহাম্মদ আহসান হাবীব
তাসাউফ সাধক ও গবেষক

আমাদের প্রকাশিত তথ্য ও সংবাদ আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)

Design by Raytahost.com