এম শহিদুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের কালিহাতী পৌরসভা নির্বাচনের আগেই আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছে সম্ভাব্য ৮ প্রার্থী।
ভোটের মাঠে শক্তি প্রদর্শন করতে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশিরা প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে মিটিং-মিছিল ও মোটারসাইকেল শোডাউন করছেন।
বর্তমান মেয়র আলী আকবর জব্বার বিএনপির একক প্রার্থী থাকায় তিনি এখনও প্রচারণায় নামেন নি।
কালিহাতী পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশিরা হচ্ছেন, কালিহাতী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শরীফ আহামেদ রাজু, উপজেলা আ’লীগের সদস্য মো. আসলাম সিদ্দিকী(ভুট্টু), পৌর আ’লীগের সভাপতি আ.
মালেক তালুকদার, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য মো. হুমায়ুন খালিদ, উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ নুরুন্নবী সরকার, উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান মনির, উপজেলা সৈনিক লীগের আহ্বায়ক শ্রমিক নেতা মো. মিন্টু সরকার এবং পৌর আওয়ামীলীগের সদস্য মানিক দেবনাথ।
সরেজমিনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশিরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার বিষয়ে একমত পোষণ করে জানান, দল যাকে মনোনীত করবে তার হয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করবেন।
মনোনয়ন প্রত্যাশিরা সবাই ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে করোনা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
বার বার কারাবরণকারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহামেদ রাজু জানান, তিনি ১৯৯৫ সালে ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে রাজনীতি শুরু করেন। দলের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় তিনি স্প্রিণ্টারে আহত হন। করোনা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে পৌরসভার সাড়ে ৭শ’ পরিবারের মাঝে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণ সহায়তা দেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারির ঘণিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত আ’লীগ নেতা মো. আসলাম সিদ্দিকী(ভুট্টু) জানান, ১/১১-এর সময় নেত্রীর মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেন।
তিনি দলীয় মনোনয়ন পেলে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে জঙ্গি, সন্ত্রাস, মাদক ও বাল্য বিয়েমুক্ত সকলের বাসযোগ্য পৌরসভা বিনির্মাণ করবেন।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আ. মালেক তালুকদার একটি আধুনিক পৌরসভা বাস্তবায়নের অঙ্গিকার করে জানান, তিনি দীর্ঘদিন যাবত কালিহাতী পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে দলের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করেছেন।
পৌরসভার সকল মানুষের সাথে তার অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক রয়েছে। দল তাকে পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী মনোনীত করলে তিনি বিজয়ী হয়ে পৌরসভার রাস্তাঘাট সহ সার্বিক নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করবেন।
একাত্তুরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপজেলা শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. হুমায়ুন খালিদ জানান, তিনি সব সময় সততার সাথে রাজনীতি করেন। ইতিপূর্বেও তিনি পৌর নির্বাচনে অংশ নিয়ে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।
নিজ গুনেই তিনি পৌরবাসীর আস্থা অর্জন করেছেন। উপজেলায় দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে অংশ নিয়ে তিনি জমি বিক্রি অর্থ ব্যয় করেছেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনি অবশ্যই বিজয়ী হবেন বলে জানান।
কালিহাতীতে দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে উচ্চ কণ্ঠ মোহাম্মদ নুরুন্নবী সরকার জানান, আওয়ামী পরিবারের সন্তান হিসেবে তিনি দলীয় সকল কর্মসূচিতে অংশ নেন।
পৌরসভার মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে তিনি গত দুই বছর ধরে পৌরসভার বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে অংশ নিয়ে প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন।
দল তাকে মনোনয়ন দিলে জননেত্রী শেখ হাসিনার নৌকাকে অবশ্যই বিজয়ী করে ডিজিটাল পৌরসভা গঠন করবেন।
বার বার পুলিশি নির্যাতনের শিকার কারাবরণকারী তরুণ ছাত্রনেতা মো. মনিরুজ্জামান মনির জানান, তিনি আওয়ামী পরিবারের সন্তান।
২০০২ সালে কালিহাতী আরএস পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের জেরে ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে তৎকালীন বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান সিরাজের বিরাগভাজন হওয়ায় তিনি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করতে পারেন নি।
তিনি সব সময় দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। তিনি জানান, ভোটের মাঠে তার জনপ্রিয়তায় তিনি আপ্লুত। দলীয় মনোনয়ন পেলে পৌরবাসী তাকে অবশ্যই বিজয়ী করবে।
পৌরবাসীর আশা-আকাঙ্খা পুরণের অঙ্গিকার করে শ্রমিক নেতা মিন্টু সরকার জানান, তিনি বাবা ও ভাইদের কাছ থেকে ‘জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ শুনতে শুনতে বেড়ে ওঠেছেন।
এক পর্যায়ে ইতালিতে প্রবাস জীবন কাটিয়েছেন। ইতালিতেও তিনি আওয়ামীলীগের হয়ে কাজ করেছেন। দেশে ফিরে স্থানীয় আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।
করোনা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পৌরসভার পাঁচ হাজার পরিবারের মাঝে স্থানীয় সংসদ সদস্য হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারির মাধ্যমে খাদ্য ও নগদ অর্থ সহায়তা বিতরণ করেছেন। সার্বিক বিবেচনায় তিনিই দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
পারিবারিকভাবে আওয়ামীলীগার মানিক দেবনাথ জানান, পৌরসভার ২৮ হাজার ভোটারের মধ্যে সাড়ে ৮ হাজার সংখ্যালঘু। সংখ্যালঘু ভোটারদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে গত নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হন।
করোনা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে তিনি খাদ্য ও নগদ অর্থ সহায়তা করেছেন। এছাড়াও তিনি দুস্থ ও হতদরিদ্রদের পাশে সব সময় থাকেন। সংখ্যালঘু ভোটাররা তাকে একযোগে সমর্থন দিয়েছে।
তিনি সংখ্যালঘু ভোটারের পাশাপাশি দলীয় ও সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন। তিনি দলীয় মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অপরদিকে, কালিহাতী পৌরসভার বর্তমান মেয়র আলী আকবর জব্বার বিএনপির একক প্রার্থী। তিনি উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক।
আলী আবকর জব্বার জানান, তিনি কালিহাতী সদর ইউনিয়নে একবার চেয়ারম্যান, পৌরসভা প্রতিষ্ঠাকালীন প্রশাসক, দুইবার মেয়র নির্বাচিত হন।
তিনি এখনও নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন নি। তবে তফসিল ঘোষণার পর তিনি প্রচার-প্রচারণায় নামবেন।
প্রকাশ, কালিহাতী ইউনিয়নকে ১৯৯৮ সালে পৌরসভায় উন্নীত করা হয়। ১৫ দশমিক ৫২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ‘খ’ শ্রেণির এ পৌরসভার বর্তমান ভোটার ২৮ হাজার ৫৫২জন।
এরমধ্যে পুরুষ ১৩ হাজার ৭৬৯জন এবং মহিলা ১৪ হাজার ৫৮৩জন। আগামি ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এ পৌরসভার নির্বাচনের মেয়াদ পূর্ণ হবে। সে কারণে আগামি ডিসেম্বরে এ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply