দুসস ডেস্ক নিউজঃ ১আগস্ট রবিবার সকাল ৮:১৫ ঘটিকা, পরীমনির সাদা রংয়ের একটি হ্যারিয়ার গাড়ি ( ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৫ ৯৬ ৫৩) এসে থামে পুলিশ কর্মকর্তাদের একটি আবাসিক ভবনের সামনে। প্রথমেই গাড়ি থেকে লাল রংয়ের টিশার্ট পরিহিত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নামেন। এরপর সাদা রংয়ের একটি স্লিপিং গাউন পরিহিত অবস্থায় নামেন হালের আলোচিত সমালোচিত নায়িকা পরীমনি। এ সময় তার কোলে ছিল প্রিয় বাদামি রংয়ের কুকুর, ‘কুটু’।
পুলিশ কর্মকর্তাদের বাসভবনের নিচে নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে বাসার চাবি নেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর তারা দুজন লিফটে করে ওই কর্মকর্তার বাসায় যান। এরপর পরীমনির গাড়ি থেকে একটি ট্রলি ব্যাগ ওই কর্মকর্তার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর গাড়িটি চলে যায়।
রাত দেড়টার সময় আবার ওই ভবনের সামনে আসে পরীমনির গাড়ি। চালক কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে গাড়ি নিয়ে সেখানে ঢোকেন। চালক গাড়ি পার্কিং করে তিনি মোবাইলে উচ্চশব্দে গান ছেড়ে শুনছিলেন।
এ পরিস্থিতিতে দায়িত্বরত এক নিরাপত্তা সদস্যের বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হয়। কারণ, পুলিশের নিজস্ব কোন চালক এতো রাতে আবাসিক এলাকার মধ্যে এভাবে উচ্চশব্দে গান শোনার কথা না।
তিনি তখন পরীমনির ওই চালকের কাছে তার পরিচয় আবার জানতে চান। চালক তখন ওই নিরাপত্তা কর্মীকে বলেন, পরীমনির সাথে ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তার বিয়ে হয়েছে বলে তিনি জানেন।
এই গাড়ি আদৌ পরীমনির কিনা তা সন্দেহ করলে, চালক ভাইরাল হওয়া বোট ক্লাবে ক্লাবের ভিডিও ফুটেজ নিরাপত্তা কর্মীদের দেখিয়ে বলেন যে তার গাড়ি ও সেই গাড়ি একই গাড়ি কিনা। তখন উপস্থিত নিরাপত্তা কর্মীরা বিষয়টি বিশ্বাস করে পরিস্থিতি দেখতে থাকে। রাত সোয়া দুইটার দিকে পরীমনি তার কুকুর কুটু এবং ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও সাথে নিয়ে যাওয়া ট্রলি ব্যাগসহ বহুতল ভবন থেকে নিচে নেমে আসেন।
সকালের সাদা পোশাকের পরিবর্তে এ সময় পরীমনির পড়নে ছিল কালো রংয়ের পোশাক আর পুলিশ কর্মকর্তার লাল টি শার্টের পরিবর্তে সাদা রংয়ের টি শার্ট।
পরীমনির গাড়িচালক মোঃ নাজির হোসেন ওই দিনের বিশদ ঘটনা বর্ণনা করে জানিয়েছেন, ওই দিন সকাল ৭টার দিকে পরীমনির ফোন পেয়ে তিনি বনানীর বাসায় যান। সেই বাসা থেকে এক সাথে গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও পরীমনি হ্যারিয়ার গাড়িতে ওঠেন।
এরপর তিনি তাদের ওই পুলিশ কর্মকর্তার সরকারি বাসভবনে নামিয়ে চলে যান। আবার রাতে ফোন পেয়ে সেই ভবনের সামনে যান। তখন তাকে নিরাপত্তা কর্মীরা নানা প্রশ্ন করেছিলেন।
এর আগেও পরীমনি এবং ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা মধ্যরাতে হাতিরঝিল এলাকায় গাড়িতে ঘুরেছেন বলে জানিয়েছেন পরীমনির গাড়িচালক নাজির হোসেন।
গাড়িচালক নাজির জানান তিনি বিষয়টি সঠিক জানেন না, তবে শুনেছেন যে তারা বিয়ে করেছেন।
গোয়েন্দা পুলিশের যে কর্মকর্তার সাথে পরীমনির এমন ঘনিষ্ঠতা সেই কর্মকর্তা পরীমনির দায়ের করা ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় মূল অভিযুক্ত নাসির ইউ মাহমুদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মাদক মামলার তদন্তের তত্বাবধায়ক (সুপারভাইজার)। তাই বিষয়টি নিয়ে পুলিশ ও সরকারের গোয়েন্দা দপ্তরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান বলেন, কোন মামলা সংশ্লিষ্ট নারীকে নিজ বাসায় নিয়ে যাওয়া পুলিশের কোনো ধরনের কোড অব কন্ডাক্টের মধ্যে পড়ে না। এটা খুবই অশোভনীয় ও অপেশাদার কর্মকাণ্ড। এটি কোন স্বাভাবিক ভব্যতার মধ্যে পড়ে না বলে মনে করেন সাবেক পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান।
আলোচিত সেই কর্মকর্তার নাম গোলাম সাকলাইন। তিনি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হিসেবে কর্মরত আছেন। রাজাবাগ অফিসার্স কলোনীর মধুমতি ভবনের সরকারি ফ্ল্যাট।
এই বিষয়ে গোলাম সাকলাইনের বক্তব্যের জন্য, শুক্রবার সারাদিনে তার মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও, সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কোন কর্মকর্তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে গণমাধ্যমের কাছে পরীমনির গাড়িচালকের বক্তব্যের রেকর্ড ও অন্যান্য তথ্য প্রমাণ রয়েছে।
এদিকে, গোলাম সাকলাইন ছাড়াও আরো কোন কর্মকর্তার সঙ্গে পরীমনির ঘনিষ্ঠতা রয়েছে কিনা, সেই বিষয়ে তথ্য নিতে সরকারে উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানা যায়।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply