মাহমুদুল হাসান,যশোর জেলা প্রতিনিধিঃ যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল ইউনিয়ন ভূমি অফিস এখন অনিয়ম-দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। অফিসটির ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ আবু সাঈদ মোল্যার লগামহীন ঘুস গ্রহনে অতিষ্ট এলাকাবাসী। মুজিববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় ভূমীহীন দের জন্য জমি সহ ঘর প্রদানে বিপুল অঙ্কের উৎকোচ গ্রহন, নামপত্তনে ঘুস গ্রহন, খাজনা পরিশোধে মুড়ি বইয়ের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে অর্থ বানিজ্য, লাখ লাখ টাকার চুক্তিতে খাঁস জমি বন্দবস্তের ব্যাবস্থা করা, জাল পর্চা তৈরী করে দেওয়া, নামপত্তনের সময় জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পত্তির অংশ বাড়ানো কমানো সহ বিবিধ অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে সাঈদ মোল্যার বিরুদ্ধে।
গত ( ৩০ আগস্ট) বেনাপোল পৌরসভার অন্তর্গত দিঘীরপাড় ওয়ার্ডের ভাড়াটিয়া ভূমিহীন অসহায় ওদুদের স্ত্রী মোছাঃ পারুল (৪০) অভিযোগ জানিয়ে বলেন, বেনাপোল নায়েবের স্ত্রী বিউটি মারফত শার্শা উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেতে নায়েবের বাসায় গিয়ে ৭ হাজার ৫শত টাকা দিই। পরে বিউটি ফোনে ছবি ও ভোটার আইডি কার্ড তার বর সাঈদের কাছে জমা দিতে বললে আমি সে মত বেনাপোল ভূমি অফিসে গিয়ে কোরবানী ঈদের আগে নায়েবের নিকট জমা দিয়ে আসি। ঈদের পর নায়েবের বউ আমাকে ফোনে বলে তোমার ঘর জমি চলে এসেছে তুমি নায়েব কে আরো ২৫ হাজার টাকা দিয়ে এসো না হলে ঘর অন্য মহিলা পাবে। আমি তাকে জানাই আমি অসহায় ওতো টাকা যোগাড় করার ক্ষমতা আমার নাই, আমার ঘর লাগবে না। যে ৭ হাজার টাকা নিয়েছেন সেটা ফেরত দেন।
একি এলাকার আনোয়ারা সহ অনেক মহিলার কাছ হতে ঘর পাওয়ার ব্যাবস্থা করার নামে বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়েছেন বলে আরো জানান তিনি।
এ বিষয়ে নায়েব সাঈদ মোল্যার সাথে মুঠো ফোনে সাংবাদিক পরিচয়ে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে ফোনকল কেটে দেন তিনি। এ ঘটনায় বিউটি তার লোকজন নিয়ে দিঘীরপাড় ভূক্তভোগী পারুলের বাড়ি গিয়ে গোলযোগ সৃষ্টি করেন বলে জানা গেছে। ঘটনার প্রত্যক্ষ দর্শী গাড়ী চালক বিল্লাল ভূমিহীনদের বাড়ি দেওয়া নিয়ে দুস্থ মহিলা পারুলের কাছ হতে টাকা নেওয়া নিয়ে ঝঁগড়া বাধার সত্যতা স্বীকার করেন।
বেনাপোল ভূমি অফিসের বিতকির্ত নায়েব আবু সাঈদ মোল্যার দূর্নীতি ও ঘুস বানিজ্যের সত্যতা যাচায়ে সরেজমিনে খোঁজ খবর নিলে বেনাপোল ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী শাহিনুর রহমান জানান, ২০১৯ সালের শেষের দিকে তার বৈধ্য ৪টি দলিলের নামপত্তন করাতে বেনাপোল ভূমি অফিসে গেলে নায়েব সাঈদ মোল্যা তার কাছে ১৯ হাজার টাকা দাবী করলে জরুরী দরকার হওয়ায় তার কথা মত আমি তাকে ১৯ হাজার টাকা প্রদান করি। ১ টি জমির মাত্র নামপত্তন হলেও বাকীগুলো আজও হাতে পাইনী।
খোঁজ নিলে বারংবার ডেট নিচ্ছে বলে তিনি আরো জানান।
দূর্নীতির তথ্য অনুসন্ধান কালে বেনাপোল বাজারের রেলস্টেসন রোড সংলগ্ন একটি সরকারী খাঁস জমির কিছু অংশ বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সরকারী জমি প্রভাবশালী এক ব্যক্তিকে দখল নিতে দিয়েছে নায়েব। সরকারী দোকান ঘর বন্দোবস্ত দেওয়ার নামে বিভিন্ন ভাসমান ব্যবসায়ীদের নিকট হতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও এখনো পর্যন্ত ভূক্তভোগীরা বরাদ্দের ঘর পায়নী। বেনাপোল ভূমি অফিসে খাজনা পরিশোধে এলাকার সাধারন জনগন মাসের পর মাস ঘুরে হয়রানী হলেও নায়েব সাঈদকে টাকা দিয়ে নকলনবীশরা কাজ সম্পন্ন করান আধা ঘন্টায়।
চাকরী সুত্রে ২০১৫ সালের দিকে বদলী হয়ে বেনাপোল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যোগ দেন নায়েব সাঈদ মোল্লা। যোগদানের পর হতেই নানা অনিয়ম ও ভূমিসেবা গ্রহনকারীদের জিম্মি করেই অর্থ হাতাচ্ছেন তিনি। বেনাপোলে দীর্ঘ বছর ধরে চাকুরী সময়ে ১বার বদলী হওয়া খবর ছড়ালেও উর্দ্ধতনদের ম্যানেজ করেই বেনাপোল ভূমি অফিসে সে বহাল রয়েছে। বর্তমান তার অনিয়ম ও অপকর্মে অতিষ্ট এলাকাটির ভূমি সেবা গ্রহণ কারীরা।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply