টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইল শহরের ক্যাপসুল মার্কেটের পাশের গলি। কয়েকটি দোকান পাশিপাশি রয়েছে। এসব খোলা দোকানগুলোর প্রায় প্রতিটির সামনে তিন থেকে চারজন দাঁড়িয়ে জিনিসের দরদাম করছেন। খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছেন তারা। এছাড়াও থেমে নেই গণজমায়েত অথচ অধিকাংশের মুখেই মাস্ক নেই। নেই কোন শারিরীক দুরত্ব। শীতের আগমনে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে তাদের মধ্যে নেই তেমন কোন সচেতনতা।
মাস্ক না পরা নিয়ে তাদের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করলে নানা অজুহাত দেখিয়ে তারা বলেন, ‘পরা উচিত, মাস্ক আছেও, পকেটে-ব্যাগে আছে। আসলে …’ তারপর মুচকি হেসে তাদের কেউ চলে যান, কেউ চুপ করে থাকেন।
এরকম চিত্র টাঙ্গাইল শহরের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ এলাকার। টাঙ্গাইলে প্রতিদিনই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে কেউ না কেউ। তারপরও মাস্ক ব্যবহারে আগ্রহ দেখা যায়নি রাস্তায় চলাচলরত বেশির ভাগ মানুষের। শারীরিক দূরত্বও মানা হচ্ছে না ঠিকমতো। বিভিন্ন দোকান, চায়ের স্টলে লোক সমাগম হচ্ছে-তাদের মধ্যে নেই করোনা সচেতনতা। মাস্ক ছাড়া, গা ঘেষে বসে চা খাচ্ছেন, গল্প করছেন।
জেলায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৪’শ ৩৩জন। আর মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৯ জন। বাড়িতে ও টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছে ১৭৬ জন। সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩ হাজার ২’শ ৫৭ জন। গতকাল বুধবার ১০ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার আক্রান্ত হয়েছেন ৮ জন। শীতে করোনা ভাইরাস বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা। একই আশঙ্কায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জনগণকে মাস্ক পরিধানসহ আগাম সতর্ক বার্তা জানিয়ে দিয়েছেন। তারপরও অনেকের মধ্যেই সেই সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গাইল শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ক্যাপসুল মার্কেট ও মাহমুদুর হাসান মার্কেটের রাস্তাগুলোতে জনগণের ভীড়ে। সামাজিক দূরত্ব তাদের মধ্যে একদম নেই। একজন আরেকজনের সাথে প্রায় লাগালাগি হয়ে চলাচল করছেন। তাদের বেশির ভাগই মাস্ক ছাড়া। আবার কারো মুখে মাস্ক থাকলেও তা ঝুলে আছে মুখের নিচে থুতনিতে।
বয়োজ্যেষ্ঠ কাউকে দেখা গেছে, তিনি নিজে মাস্ক পড়েছেন, কিন্তু তার সাথে থাকা শিশুর মুখে মাস্ক নেই। রাস্তায় চলাচলরত একাধিক ব্যক্তি বলেন, মাস্ক আছে কিন্তু সেটা পকেটে। কেউ বলেন, এই মাত্র খুললাম। অনেকেই আবার ‘সরি‘ বলে দ্রুত সরে পড়েন।
টাঙ্গাইলের সবচেয়ে বড় বাজার পার্ক বাজার। সেখানেও ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের অধিকাংশই পরছেন না মাস্ক। কাচা বাজারে দেখা যায়, কারো কারো মুখে মাস্ক থাকলেও নাক ও মুখ না ঢেকে নিচে নামিয়ে রেখেছেন। আর অধিকাংশ ব্যবসায়ীদের মুখে একদমই মাস্ক নেই।
শহরের অনেক জায়গায় মাস্ক বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের ঠিকমত মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। নিরালা মোড়ের মাস্ক ব্যবসায়ী রমজান মিয়া জানান, মাস্কতো করোনার জন্য পরে না। ধুলা-বালির জন্য পরে। এজন্য আমি মাস্ক মুখের নিচে রাখছি।
টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, শীতে করোনার প্রভাব বৃদ্ধি পাবে। তাই আক্রান্ত হওয়ার আগেই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। মাস্ক পরিধান না করলে অবশ্যই করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে। শহরের অনেক লোকই মাস্ক ব্যবহার করছে না। এ নিয়ে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংস্থার লোক নিয়ে মত বিনিময় করেছি। সেই সাথে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছি।
তিনি জানান, সিভিল সার্জন অফিস ৪টি বিষয় নিয়ে কাজ করছে। সেগুলো হলো ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পরিধান করতেই হবে, কিছুক্ষণ পর পর হাত ধোয়া, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা এবং জ্বর ও ঠান্ডা কাশি হলে অবশ্যই করোনা পরীক্ষা করা।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম জানান, শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও পয়েন্ট গুলো- বিশেষ করে যেখানে সামাজিক দূরত্ব নেই সেইসব পয়েন্টগুলোতে অতিদ্রুত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply