বছরে আলুর সব ধরনের চাহিদা পূরণের পরও ২০ লাখ টন আলু উদ্বৃত্ত। অতিরিক্ত মুনাফার আশায় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট আলুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
দুসস ডেস্কঃ আলুর মৌশুমে কোনো কোনো সময় আলুর খুচরা মূল্য দেখা যায় ১৫ টাকা। আবার হঠাৎ করেই আলুর দাম বেড়ে যায়। গতকাল প্রতি কেজি আলুর পাইকারি মূল্য ছিল ৪০ টাকা। আর খুচরা বাজারে তা ৫০ টাকা। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, তাহলে কী আলুর সংকট রয়েছে। আর এ কারণেই কি আলু দাম হঠাৎ বেড়েছে।
কিন্তু প্রকৃত তথ্য তা নয়। বছরে আলুর সব ধরনের চাহিদা পূরণের পরও ২০ লাখ টন আলু উদ্বৃত্ত থাকে। ফলে সংকটের কোনো প্রশ্ন-ই নয়। উৎপাদনের সঙ্গে বর্তমানের আলুর মূল্যবৃদ্ধির সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক অন্য কোথাও। সরবরাহের বড় কোনো সংকট না থাকলেও অতিরিক্ত মুনাফার উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ীরা আলুর দাম বাড়িয়ে রাখছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের হিসাব মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার ৫০০ টন (উৎপাদনের ২৫ ভাগ আলুর বীজ ও অপচয় ধরা হয়েছে)। ১৫ লাখ রোহিঙ্গা এবং ৩ লাখ বিদেশি-সহ মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটি ২৯ লাখ ৮৬ হাজার ৩৭২ জন হিসাবে আলুর চাহিদা ৮৯ লাখ ৯২ হাজার টন থেকে সর্বোচ্চ ৯১ লাখ ৯ হাজার টন। সে হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকে অন্তত ২০ লাখ টন। আর গতকাল পর্যন্ত কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষিত আলু রয়েছে ২৬ লাখ ৫৩ হাজার টন।
কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাংলাদেশে ক্রমশ আলুর ফলন ও উৎপাদন বাড়ছে । ২০২১-২২ অর্থবছরে হেক্টর প্রতি ফলন ছিল ২১ দশমিক ৮৬ টন। আর ঐ বছর মোট উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮০০ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে হেক্টর প্রতি ফলন ছিল ২৪ দশমিক ৫৭৫ টন। আর মোট উৎপাদন ১ কোটি ১১ লাখ টনেরও বেশি।
শুধু দেশের চাহিদা পূরণই নয়। আলু উদ্বৃত্ত থাকায় প্রতি বছর আলু রপ্তানিও করছে বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সাল থেকে এটিডিপি (এ্যাগ্রোবেজ্ড টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম)-এর উদ্যোগে বাংলাদেশ থেকে সিংগাপুর, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে ১২৬ টন ফ্রেশ আলু রপ্তানি হয়। ২০০৭ সালে রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার টনে। ২০১১ সালে বাংলাদেশ থেকে সাতটি প্রাইভেট কোম্পানির মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার টন আলু রপ্তানি করা হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশ থেকে মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, সিংগাপুরসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ৮০ হাজার টন আলু রপ্তানি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৪ সালে ১ লাখ ৮০ হাজার টন এবং ২০২৫ সালে ২ লাখ ৫০ হাজার টন আলু রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
যেখানে আলুর এই চিত্র। সেখানে কেন আলুর দাম বাড়বে। আলু নিয়ে কাজ করেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের এমন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেশে ১ কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ৮ টাকা থেকে ১১ টাকা পর্যন্ত। পরিবহন, প্যাকেজিং আরতদারিসহ ১২ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ে যায়। হিমাগারে থাকলে খরচ বেশি। কখনো কখনো ভোক্তার হাতে আসার আগ পর্যন্ত ১৮ থেকে ২০ টাকাও পড়ে যায়। তবে সেটা ব্যতিক্রম।
আলুর মূল্য ২৩ থেকে ২৫ টাকা হলেও কৃষক বা অন্যান্য ব্যবসায়ীদের লাভ থাকে। এর চেয়ে বেশি মূল্যের জন্য সিন্ডিকেট দায়ী।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত বছরের এই সময়ে বাজারে আলুর কেজি ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা, যা এ বছর ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। সেই হিসাবে গত এক বছরে আলুর দাম বেড়েছে ৩৪ শতাংশের বেশি।
কাওরান বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বগুড়ায় কেজি ৩৫ টাকা ৪০ পয়সা দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এরপর পরিবহন, শ্রমিকসহ নানা ধরনের খরচ আছে। এ কারণে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে এ তথ্য সঠিক নয় বলে মনে করেন কোল্ড স্টোরেজের মালিকরা।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু গণমাধ্যমে বলেন, আলুর সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই। তবে গতবারের চেয়ে আলুর উৎপাদন ২০ শতাংশ কম হয়েছে। প্রথম দিকে চাষিরা আলু কোল্ড স্টোরেজে না রেখে নিজেরাই দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেছিল। ঐ সময় কৃষকরা বেশি লাভবান হয়েছিল। এখন যারা কাওরান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে যারা আলুর ব্যবসায়ী আছেন তারা দাম বাড়িয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। তিনি জানান, বগুড়ায় সাদা আলু ৩০ টাকা এবং লাল আলু ৩১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেখান থেকেই বিভিন্ন স্থানে আলু যাচ্ছে। আলু বিক্রি না করে ‘ধরে রাখলেই দাম বাড়ানো যায়’, যারা আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন তারা এই কৌশলেই দাম বৃদ্ধি করছে বলে মনে করেন তিনি।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply