বিশেষ প্রতিনিধিঃ অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেখিয়ে সাংবাদিকরা বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না। কারণ প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন গাইড তথা নীতিমালার কোথাও এই কার্ড ব্যবহার করে সচিবালয় কিংবা অন্য কোনো সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশের বিধান রাখা হয়নি। তবে পেশাগত কাজে সচিবালয়ে যদি সাংবাদিকদের প্রবেশ করতেই হয় তা হলে সেই পাশ ইস্যু করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পিআইডি ‘র উর্ধবতন কর্মকর্তাদের মধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পিআইডি ‘র পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কোন নীতিমালা বা কোথাও লিখিত নেই যে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী মিডিয়া প্রতিনিধি সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে চিহিৃত বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। বরং অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড হলো মিডিয়া প্রতিনিধিদের পেশাগত স্বীকৃতি এবং সুবিধা। এই কার্ড দিয়ে সংরক্ষিত বা কেপিআইতে প্রবেশ করার সুযোগ নেই। এই বিষয়ে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মোঃ জয়নাল আবেদীন বলেন, বিষয়টি এখন প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। চুড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত বলা যাবে না। আমরা সব শ্রেণীর মিডিয়া সংগঠণের প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করবো। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি ঠিক হবে, যে সব সংবাদকর্মী সচিবালয়ে কাজ করবেন তাদের প্রবেশ পাশ পিআইডি দেবে, না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেবে। আগামী কিছু দিনের মধ্যেই এই বৈঠক আহবান করা হবে। এখনই বিষয়টি চুড়ান্ত হয়েছে বলা যাবে না। এ বিষয়ে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শাবান মাহমুদ বলেন, তথ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। কোন মন্ত্রণালয় সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশ পাশ ইস্যু করবে সেটা ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি বিচার্য বিষয় নয়। বরং দেখার বিষয় হচ্ছে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ইস্যুতে পেশাদারিত্ব, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছেন কি না। সবার আগে দেখতে হবে প্রকৃত অর্থে কার্ডধারি পেশাদার সাংবাদিক কি না। অপর দিকে কমিউনিটির নেতা হিসেবে আমি বলবো, অতীতের ধারাবাহিকতায় সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশে পাশ তথা অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যু করাই যুক্তিযুক্ত হবে। এটা দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৩১ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়টির জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আবু বকর ছিদ্দীকের সভাপতিত্বে একটি আন্তমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় তিনি বলেন, বাংলাদেশ সচিবালয় দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কেন্দ্র এবং একটি সংরক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, কর্মচারি, বিভিন্ন সভায় আগত সদস্য ও দর্শনার্তীসহ প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ সচিবালয়ে আসেন। চার থেকে ছয় হাজার যানবাহন সচিবালয়ে প্রবেশ করে। সচিবালয়ে স্থায়ী কর্মকর্তা কর্মচারি এবং মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সংযুক্ত দপ্তর, অধিদপ্তর, অন্যান্য সংস্থার কর্মকর্তা কর্মচারি যারা সচিবালয়ে সংযুক্ত কিংবা প্রেষণে কর্মরত তাদের অনুকূলে নিরাপত্তা অধিশাখা থেকে প্রবেশ পাশ ইস্যু করা হয়। এছাড়া দর্শনার্থীদের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ দৈনিক পাশ ইস্যু করেন। এছাড়া বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা পিআইডি থেকে সাড়ে ছয় হাজার কার্ড অ্যক্রিডিটেশন কার্ডধারী বিভিন্ন ধরণের মিডিয়া প্রতিনিধি সচিবালয়ে প্রবেশ করেন। যারা সরকারি কোন দাপ্তরিক কাজের সঙ্গে সংযুক্ত নয়। এ ক্ষেত্রে সচিবালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কাজের সুষ্ঠ পরিবেশ সংরক্ষণ করা একান্তই প্রয়োজন। অতিরিক্ত সচিব সভায় আরো বলেন, পেশাগত দায়িত্বপালনের জন্য মিডিয়া কর্মীদের সচিবালয়ে প্রবেশের সুযোগ থাকা প্রয়োজন। তবে সচিবালয়ে যাদের কোন নির্দিষ্ট দায়িত্ব নেই তাদের অপ্রয়োজনে সচিবালয়ে প্রবেশের সুযোগ থাকা উচিত নয়। বিষয়টি সবাইকে উপলদ্ধি করা প্রয়োজন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সভায় সিনিয়র উপ-প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মোঃ ফায়জুল হক মতামত ও সুপারিশ প্রদান করতে গিয়ে বলেন, পিআইডি থেকে বিভিন্ন মিডিয়া প্রতিনিধির জন্য অ্যক্রিডিটেশন কার্ড ইস্যু করা হয়। এই কার্ড স্থায়ী এবং অস্থায়ী প্রকৃতির। এই দুই প্রকার কার্ডের সংখ্যা ৬ হাজার ৫৩১টি। তার মধ্যে স্থায়ী কার্ড হচ্ছে এক হাজার ৩৬৭টি এবং অস্থায়ী কার্ড হচ্ছে পাঁচ হাজার ১৪৬টি। বিভিন্ন কারণে তিন হাজার ২৬৭টি স্থায়ী ও অস্থায়ী আ্যক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে লক্ষণীয় যে প্রতিনিয়ত মিডিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনলাইন পত্রিকার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২৩৫টি। রেজিষ্ট্রেশনের জন্য প্রেরণ করেছে দুই হাজার ২১৭টি। এত বিপুল সংখ্যক কার্ডধারী মিডিয়া প্রতিনিধি যতেচ্ছভাবে অতিগুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশ করছেন। সিনিয়র উপ-প্রধান তথ্য কর্মকর্তা আরো বলেন, কোন নীতিমালায় বা কোথাও লিখিত নেই যে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী মিডিয়া প্রতিনিধিরা সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে চিহিৃত সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। অ্যক্রিডিটেশন কার্ড হলো মিডিয়া প্রতিনিধিদের পেশাগত স্বীকৃতি এবং সুবিধা। এই দিয়ে সংরক্ষিত বা কেপিআইতে প্রবেশ করার সুযোগ নেই। নীতিমালা অনুযায়ি বিভিন্ন পত্রিকার সার্কুলেশন অনুযায়ি মিডিয়া প্রতিনিধিদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। বিস্তারিত আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয় যে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন গাইড তথা নীতিমালায় অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারি মিডিয়া প্রতিনিধি সংরক্ষিত এলাকা বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশের ব্যবস্থা অনুমতি নেই। সেই ক্ষেত্রে প্রধানতথ্য কর্মকর্তা অতিদ্রুত সকল মিডিয়ার শীর্ষ সংগঠণের সঙ্গে সভা করে নীতিমালা অনুসরণ পূর্বক সংবাদ কর্মীদের সচিবালয়ে প্রবেশ পাশ প্রদানের জন্য জননিরাপত্তা বিভাগে প্রস্তাব প্রেরণ করবেন। জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে সচিবালয়ে প্রবেশ পাশ ইস্যু করা হবে। বৈঠকের আলোকে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক, বিগত দুই মাসে কোন এ বিষয়ের সর্বশেষ অগ্রগতি স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাতে পারেনি পিআইডি। ফলে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারছেন না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। বিষয়টি স্বরণ করিয়ে দিয়ে গত ৩১ মার্চ জননিরাপত্তা বিভাগের উপ সচিব মোঃ ফিরোজ উদ্দিন খলিফা তথ্য সচিব, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা, জননিরাপত্ত বিভাগের সচিবের একান্ত সচিব, সচিবালয়ে কর্মরত পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার, জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব রাজনৈতিক-১ এবং অতিরিক্ত সচিব রাজনৈতিক ও আইসিটি’র ব্যক্তিগত সহকারিকে পত্র দেওয়া হয়েছে। ওই পত্রে বলা হয়, গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষে সকল মিডিয়া শীর্ষ সংগঠনের সঙ্গে সভা করে নীতিমালা অনুসরণ করে সংবাদ কর্মীদের সচিবালয়ে প্রবেশ পাশ প্রদানের জন্য জননিরাপত্তা বিভাগে প্রস্তাব প্রেরণের জন্য বলা হয়েছে।
দুসস-বি-প্র-20-04-19
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply