বিশেষ প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন। শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয়েছে ‘কুমড়ো বড়ি’ তৈরির কাজ। প্রতিবছর এ সময় গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ বাড়িতে ঐতিহ্যবাহী এ বড়ি তৈরির রেওয়াজ রয়েছে।
বাজারে এখন বিভিন্ন কুমড়ো বড়ি কিনতে পাওয়া গেলেও চালকুমড়া বা মূলার সঙ্গে মাষকলাইয়ের ডাল মিশিয়ে তৈরি এ বড়ি স্থানীয়দের খুবই প্রিয়।খা্দ্য হিসাবে সুস্বাদু।
শার্শা উপজেলার বেনাপোল গ্রামের সাহানারা বেগম বলেন ।প্রতি বছর শীত এলেই চালকুমড়া ও মাষকলাইয়ের ডাল দিয়ে বড়ি তৈরি করি। ওই বড়ি রোদে শুকিয়ে কৌটায় ভরে অনেক দিন রাখা যায়। তরকারিতে এ বড়ি দিলে খুব সুস্বাদু হয়।ভর্তা খেতে মজা পাই।বাচ্ছারাও পছন্দ করেন ।
বড়ি তৈরির পদ্ধতি জানালেন উত্তর বারোপোতা গ্রামের গৃহবধূ হাছিনা বেগম ৩৮ তিনি বলেন, বড়ি দেওয়ার আগের দিন মাষকলাইয়ের ডাল (স্থানীয়দের ভাষায় বলে ঠিকরী কলাই) খোসা ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। “সন্ধ্যায় চালকুমড়ার খোসা ছাড়িয়ে ভেতরের নরম অংশ ফেলে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর কোরানি দিয়ে কুমড়া কুরিয়ে মিহি করে পরিষ্কার কাপড়ে বেঁধে সারারাত ঝুলিয়ে রাখতে হবে। এতে কুমড়ার পানি ঝরে যাবে। পরদিন ভোরে ডালের পানি ছেঁকে মিহি করে বেটে পেস্ট তৈরি করতে হবে। পানি ঝরানো কুমড়ার সঙ্গে প্রায় সমপরিমাণ ডাল ও হালকা লবণ মেশাতে হবে। পরে কড়া রোদে পরিষ্কার কাপড়, চাটাই বা নেটের ওপর ছোট ছোট করে বড়ি হাতদিয়ে দিতে হয়।
এই বড়ি ভালো করে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করলে অনেকদিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যায় বলে শামীমা জানান।
জামতলার ঝরনা খাতুন (৩৩) বলেন, “শীত না পড়লি বড়ি যুত (ভাল) হয় না। যত বেশি শীত পড়বে তত বড়ির স্বাদ হবে। খাতি ভালো লাগবে।”
গাজীপুর গ্রামের জুলেখা (৩৫) বলেন, কুমড়ো বড়ি তেলে ভেজে মাছের তরকারি বা সবজিতে দিলে স্বাদ অনেক বেড়ে যায়।
সামটা গ্রামের ছকিনা বেগম (৫৫) বলেন, শীত এলেই একে অপরকে বড়ি দিতে সহযোগিতা করা তাদের গ্রামের রেওয়াজ। বছর পঁচিশেক আগে শ্বশুর বাড়িতে এসে তিনি শাশুড়ির কাছ থেকে এ রেওয়াজ শিখেছেন।
“তবে নতুন প্রজন্মের মেয়েরা এসব শিখতে কিম্বা বড়ি তৈরি করতে আগ্রহী না। তারা এই রেওয়াজ থেকে যেভাবে পিছিয়ে পড়ছে, তাতে আগামী কয়েক দশক পর এটা হারিয়ে যাবে বলে মনে হয়।
বেনাপোল বাজারের মুদি দোকানদার জাহামত ইসলাম বলেন এখনও বাজারে নতুন বড়ি আসেনি তবে ভারতের সোয়াবিনের বড়ি আছে; যা দুই শত টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে
বলে জানান।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply