নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঘুষ না দেয়ায় মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কোনাবাড়ি থানা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে।
তিনি কোনাবাড়ি থানায় যোগ দেয়ার পর থেকে একের পর এক অপরাধ করে বেড়াচ্ছেন। এর আগেও তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ উঠলে তা তদন্ত করে প্রমানিত হয়। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে পুলিশের উধ্বতনের কাছে অভিযোগ জমা দেয়া রয়েছে।
রুহুলের বিরুদ্ধে আরো একজন ভুক্তভোগী মোঃ লাল মিয়া (৬২) নামে এক বৃদ্ধা গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি অপরাধ (উত্তর) বিভাগে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রুহুল আমিন ইমন (১৮) নামে এক যুবককে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন।
কোনাবাড়ি থানার মামলা নং-৬-৪/২/২০২৪ ধারা মাদক। গত ৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৫টার সময় কোনাবাড়ি থানা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এসএআই) রুহুল আমিন ও তাদের সঙ্গীয় ফর্মা (সোর্স) শরিফ মিলে ইমন এবং নয়ন নামে দুই যুবককে আমবাগ লালঘাট ব্রিজের কাছে থেকে আটক করে। এরপরে তাদেরকে ধরে নিয়ে মিতালী ক্লাব সংলগ্নে ইমনের বর্তমান ঠিকানার ভাড়াবাসায় এসে মাদকদ্রব্যের কথা বলে ঘরে প্রবেশ করেন ওই দারোগাসহ বেশ কয়েক জন সোর্স।
এরপর তাদের ঘরে থাকা বিভিন্ন আসবাবপত্র বিছানা, আলমারি, শোকেস তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ইমনদের বাসায় মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত কোনো কিছুই পায়নি পুলিশের ওই সহকারী উপ-পরিদর্শক।
এ পর্যায়ে তাদের ঘর তল্লাশি শেষে কিছু না পেয়ে এএসআই রুহুল আমিন ও তার সঙ্গে ফর্মা (সোর্স) মিলে ঘরে থাকা স্টিলের আলমারি থেকে নগদ তিন হাজার টাকা, শোকেস এর ড্রয়ার থেকে আট আনা স্বর্ণের একটি চেইন, আট আনা ওজনের একজোড়া স্বর্ণের কানের দুল, তিন আনা ওজনের একটি আংটি এবং ব্যবহৃত অপ্পো ব্রান্ডের পুরাতন মোবাইল সেট নিয়ে যায়।
পরে পুলিশের সঙ্গে থাকা সেই সোর্স ইমনের মায়ের কাছে টাকা দাবী করে। টাকা না দিলে ভুক্তভোগীর নাতী ইমনকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে বলে রুহুলের সঙ্গে থাকা ওই সোর্স হুমকী দিয়ে যায়।
ইমনের দাদা লাল মিয়া লিখিত অভিযোগে আরো জানান, গত ৫ ফেব্রুয়ারি আনুমানিক রাত দেড়টার দিকে রুহুলের সোর্স মোঃ শরিফ (২০) বাসায় আসেন এবং ১নং আসামি ইমনের মা রাশেদা বেগমের কাছে (৫০) পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবী করেন। ওই সোর্স ইমনের দাদা লাল মিয়াকে বলেন, ৫০ হাজার টাকা দিলে থানা থেকে তার নাতী ইমনকে ছেড়ে দেয়া হবে।
ভুক্তভোগী লাল মিয়া বলেন, আমার ছেলে নুর আলম ও নাতী ইমনসহ পরিবার নিয়ে বর্তমান ঠিকানায় দুই বছর যাবৎ বসবাস করছি। এই এলাকার কেউ বলতে পারবে না যে, আমার নাতী মাদকের ব্যবসা করে বা মাদক সেবন করে।
ওই বৃদ্ধ আরো বলেন, ইমন বাসায় সুইং মেশিন চালিয়ে প্যান্ট ও গেঞ্জির কাজ করে কোনো মতে সংসার চালিয়ে আসছে। আমি এবং আমার পরিবারের কেউই কখনো মাদকদ্রব্য সেবন, গ্রহণ এবং ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই।
অথচ সন্দেহ বশত পুলিশ রাস্তা থেকে আমার নাতীকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে টাকা দাবী করেন। মূলত টাকা না দেয়ার কারণে আমার নাতিকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে জেলে প্রেরণ করেছেন রুহুল দারোগা।
সিসি ক্যামেরায় সংরক্ষিত ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। ওই ভিডিও ফুটেজে এএসআই রুহুল আমিনসহ সোর্সদের দেখা গেছে ইমনের বাসায় ঢুকতে। ভিডিও ফুটেজে ইমনকে মারপিট করার শব্দও শোনা যায়।
ইমনের বাবা নুর আলম বলেন, আমার ছেলে ইমনের সঙ্গে মিতালী ক্লাব উত্তরপাড়া এলাকার নয়ন (১৯) কেও গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বলেন, নয়নকে ১৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে চালান দেয়ার কারণ হচ্ছে, নয়নের পরিবারের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছে রুহুল দারোগা।
তিনি আরো বলেন, আমি গরীব মানুষ বিভিন্ন ঝুট-গুদামে লেবারের কাজ করে কোনো মতে সংসার চালাই। সেদিন পীরের দরবারে ছিলাম। বাসায় এসে শুনি আমার ছেলে ইমনকে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার করে জেলে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি মেয়ের জন্য আস্তে আস্তে কিছু স্বর্ণের জিনিস করেছিলাম সেগুলোও ওই পুলিশ নিয়ে গেছেন। টাকা দিতে পারিনি বিধায় আমার ছেলেকে মাদক মামলায় জড়ানো হয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, ইমনকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর পরে তারা খুব মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে। দারোগা রুহুল আমিনের এমন কর্মকান্ডে প্রতিকার চেয়ে বর্ণিত বিষয়ে সুষ্ঠ তদন্তের দাবী করছেন ওই পরিবার।
তবে এ ব্যাপারে এএসআই রুহুল আমিনের মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।
(জিএমপি) কোনাবাড়ি থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মহিউদ্দিন ফারুক জানান, অন্যায় করতে পছন্দ করি না, কেউ যদি অন্যায় করে সমর্থনও করি না, পুলিশের কেউ যদি এমন অপরাধ করে থাকে তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আছেন তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবেন।
কোনাবাড়ি-কাশিমপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, আমি একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে ছুটিতে আছি। এএসআই রুহুল আমিনের ব্যাপারে জানালে তিনি বলেন, রুহুলের বিরুদ্ধে এর আগেও একটি অভিযোগ আমার কাছে ছিল, তা তদন্ত করে অপরাধ প্রমানিত হলে রিপোর্ট দেয়া হবে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply