নিজস্ব প্রতিবেদকঃ করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে ভিড় বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে। সাধারণ মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণে পণ্য কিনছেন। ফলে বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। চাল, আটা, মসুর ডাল, ডিম, মুরগি, আদাসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে।
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) বুধবার তাদের দৈনন্দিন খুচরা বাজারদরের প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরেছেন। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, হঠাৎ করেই বাজারে ক্রেতাদের চাপ পড়েছে। করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য কিনে মজুত করছেন। এ কারণে কোনো কোনো পণ্যের দাম বাড়তি বলে তারা জানিয়েছেন।
এদিকে সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে আতঙ্কিত হয়ে কোনো পণ্য অতিরিক্ত কেনার প্রয়োজন নেই। খুচরা বাজারে এরই মধ্যে বিক্রিতে কিছুটা প্রভাব পড়েছে উল্লেখ করে টিপু মুনশি বলেন, একশ্রেণির মানুষ আছে, তারা বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। কিন্তু কেউ যেন স্বাভাবিক কেনাকাটার চেয়ে অতিরিক্ত কেনাকাটা না করে। যে কোনো অপপ্রচার থেকে সতর্ক থাকতে তিনি সবাইর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের মজুত, সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। তাই বাড়তি কেনাকাটার প্রয়োজন নেই।
সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজন মারা গেছেন এটা জানার পর গতকাল থেকে নিত্যপণ্যের বাজারে ক্রেতাদের ভিড় বেশি বেড়েছে। সাধারণ মানুষ প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হতে চাইছেন না। গতকাল রাজধানীতে রাস্তাঘাট, পাবলিক পরিবহনগুলোতে যাত্রী ছিল হাতেগোনা।
এক সপ্তাহের ব্যবধানেই চালের কেজিতে বাড়ল পাঁচ টাকা।
গত এক-দেড় মাস ধরেই চালের বাজার ছিল ঊর্ধ্বগামী। এর মধ্যে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে মানভেদে প্রতি কেজি চালে দুই থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সরু চাল নাজিরশাইল, মিনিকেট কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৪ টাকা, মাঝারি মানের চাল পাইজাম কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা ও মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা কেজিতে দুই টাকা বেড়ে ৩৪ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাওরান বাজারের চাল ব্যবসায়ী রশিদ উদ্দিন বলেন, তার দোকানে অনেক পারমানেন্ট (স্থায়ী) কাস্টমার আছে। এসব কাস্টমার আগে যদি একসঙ্গে ২০ কেজি চাল কিনত, তারাই এখন ৫০ কেজির এক বস্তা চাল কিনছেন। কেউ কেউতো আরো বেশি কিনছেন। ফলে হঠাৎ করেই বাজারে একটা চাপ তৈরি হয়েছে। তাই দামটা বেড়েছে। তিনি বলেন, এখন আমনের মৌসুম শেষ। আর এক-দেড় মাস পর নতুন ধান-চাল উঠবে। এ সময় ক্রেতারা বেশি করে চাল কিনছেন। তবে মূল্যবৃদ্ধিটা থাকবে না। কেনাকাটার ‘হুজুগ’টা চলে গেলেই দাম আবার কমে আসবে।
দাম বেড়েছে মসুর ডাল, ডিম, মুরগি ও আদাসহ আরো কয়েকটি পণ্যের। কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে বড়ো দানা মসুর ডাল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, মাঝারি মানের মসুর ডাল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ছোটো দানা মসুর ডাল মানভেদে ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের হালিতে বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা। গত সপ্তাহে প্রতি হালি ডিম ৩০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল বাজারে তা ৩৩ থেকে ৩৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর তুরাগ এলাকার একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের বিক্রেতা সাদ্দাম বলেন, করোনার আতঙ্কে ক্রেতারা আগের চেয়ে বেশি বেশি পণ্য কিনছেন। বিশেষ করে চাল, ডাল, তেল, ডিম, আটাসহ বিভিন্ন শুকনা খাবার। তিনি বলেন, গতকাল তার দোকানের একজন ক্রেতা বোতলজাত সয়াবিনের পাঁচ লিটারের চারটা বোতল নিয়েছেন। অথচ আগে তিনি একটা করে পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতেন। তিনি বলেন, লাগবে পাঁচ কেজি অথচ ক্রেতা কিনছে ২০ কেজি। তাহলে তো দামে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই।
দাম বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির। কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়ে গতকাল বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। দাম বেড়েছে আদারও। মানভেদে প্রতি কেজি আদার দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। গতকাল বাজারে দেশি আদা ১২০ থেকে ১৩০ টাকা ও আমদানিকৃত আদা ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নিত্যপণ্যের মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আসন্ন পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ্যে চাহিদার কয়েক গুণ ভোজ্যতেল, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, লবণসহ সব পণ্য মজুত করা হয়েছে। এ মজুতের পরিমাণ বিগত বছরের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি।
তিনি বলেন, এবার টিসিবির মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির সক্ষমতা কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে। আগামী এপ্রিল মাসের প্রথম থেকেই টিসিবি ন্যায্যমূল্যে এসব পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি শুরু করবেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এরই মধ্যে বাজার তদারকি জোরদার করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যসচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন, অতিরিক্ত সচিব মো. ওবায়দুল আজম, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রি. জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply