চলমান করোনা সংকটে বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরির নিশ্চয়তা সুনিশ্চিত হোক এ.আর.ইমরান ১৮ মে ২০২০, সোমবার করোনা মহামারিতে গোটা বিশ্ব আজ আতঙ্কিত। থেমে গেছে মানব কোলাহল। ভেঙে গেছে আর্থিক ব্যবস্থা। জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে পরিবহন-যোগাযাগ বন্ধ। এক দেশের মানুষ অন্য দেশে যাচ্ছে না, যেতে পারছেও না। এমনকি পাশের বাড়ি কিংবা পার্শ্ববর্তী এলাকাতেও আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় বিশ্বজুড়ে থমকে গেছে মানবজীবন। বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও নেমে এসেছে হতাশার আলো। করোনার কালো ছায়া।
সময়ের পালাবদলে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে সবকিছুই, ততদিনে অনেক কিছু পাল্টেও যাবে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ক্রমাগত ধস নামছে। ছোট বড় প্রায় সব কোম্পানিই বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন। বিশিষ্টজনরা বলছেন, এই ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে চাকরি হারাতে পারেন বহু মানুষ। বিশেষত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা। ঈদুল ফিতরের পর হয়তো লকডাউন আর থাকবে না। অর্থনীতি বাঁচানোর জন্য সরকার সবকিছুই ক্রমান্বয়ে খুলে দেবে। করোনা ভীতি কাটিয়ে স্বাভাবিক হতে থাকবে মানুষের জীবন যাত্রাও। কিন্তু ততক্ষণে বেড়ে যাবে বেকারত্বের সংখ্যা।
প্রকৃতির সৃষ্টি এই উদ্ভট পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে, অঘোষিত লকডাউন এবং সাধারণ ছুটি ঘোষণার ফলে দেশের অধিকাংশ সরকারি এবং বেসরকারি শিল্প-কারখানা, অফিস-প্রতিষ্ঠান কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।যার ফলশ্রুতিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী এখন তাদের স্বীয় চাকরি হারানোর শঙ্কার মুখে পড়েছেন। তার উপর আবার করোনা সংকট মোকাবিলায় অনেক প্রতিষ্ঠানই কর্মী ছাঁটাইয়ের চিন্তায় আছে।
এতে করে বেতন দিতে হবে কম। ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে মনে করছেন প্রতিষ্ঠান মালিকরা। সরকার স্বপ্রণোদিত হয়ে দেশের তথা জনমানুষের স্বার্থে ২৬ মার্চ থেকে পর্যায়ক্রমে সাধারণ ছুটি কয়েক দফা বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত ঘোষণা করেন। পাশাপাশি উৎপাদনমুখী ফ্যাক্টরিগুলো সীমিত আকারে চালু করার নির্দেশ দেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকার ফলে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের চাকরিতে যোগদান করতে পারেনি।
তাছাড়াও গণহারে সকল ফ্যাক্টরি চালু হয়নি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চাকুরীতে যোগদান করতে না পারা এবং বন্ধ থাকা ফ্যাক্টরির মালিকপক্ষ বিভিন্ন এক্সকিউজ ক্রিয়েট করে অনেক কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অব্যাহতি দিয়েছেন। সরকারের দেয়া এই লম্বা ছুটিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও পরিস্থিতির শিকার হয়ে বাড়িতে অলস সময় কাটিয়েছেন এবং ব্যয় করেছেন তাদের হাতে থাকা জমানো পুঁজি। সময়ের পালাবদলে আমরা হয়তো করোনাকে জয় কিংবা নির্মূল করতে পারবো, কিন্তু তাদের কী হবে- যারা চাকরি হারিয়েছেন কিংবা হারানোর শঙ্কায় আছেন? মনে রাখতে হবে- চাকরি হারানো এই মানুষগুলো একা নয়- তাদের ওপর নির্ভরশীল পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটির যদি চাকরি চলে যায় তাহলে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় পুরো পরিবারকেই। সৃষ্ট পরিস্থিতির দায় সরকার কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারেন না।
করোনার কারণে সৃষ্ট এই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মূলত সবকিছুই অচল হয়ে গিয়েছিল। এ কারণেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মচারী ও বিভিন্ন অফিসের চাকুরিজীবীদের বাধ্য হয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে বা বাড়িতেই থাকতে হয়েছে। তাই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে হলেও চাকরি হারানো সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তাদের স্বীয় চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কেবল মৌখিক নির্দেশনা দিলেই এই সমস্যার সমাধান হবে বলে আমি মনে করি না। বরং tactfully বেসরকারি মালিকদের বাধ্য করার নব কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষ আজ বিপর্যস্ত, ক্লান্ত, হতাশ। তবুও তারা দুঃস্বপ্নের মাঝেও স্বপ্ন দেখছে। নিরাশার মাঝেও আশা দেখছে। আত্মবিশ্বাসীরাও আজ হতাশ, তবুও ক্লান্ত মনে ক্লান্তি নিয়েই তাদের পথ চলতে হচ্ছে। এই পথের শেষ কোথায়? সময়ের পালাবদলে পূর্ব গগনে নতুন সূর্যের উদয় হবে, ধুলোয় মিশে যাবে সকল অপশক্তি, জৈব বৈচিত্র্য ফিরে পাবে নতুন উদ্দীপনা, প্রাণবন্ত হবে প্রত্যেকটি জীবন। শেষপর্যন্ত আমরাই জয়ী হবো ইনশাআল্লাহ্।
কিন্তু ইত্যবসরে কোনও চাকরিজীবী যেন চাকরি না হারান, কোনও শ্রমজীবীর যেন কর্ম খোয়া না যায়- তবেই প্রকৃতপক্ষে করোনা পরাভূত করে জাতি হিসেবে আমরা বিজয়ী হতে পারবো।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply