ভালুকা, প্রতিনিধি ঃ বনবিভাগের লোকজনের হুমকী, হয়রানিসহ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ছয়টি গ্রামের কয়েকশ মানুষ। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার খোলাবাড়ি গ্রামের পন্নাভিটা মসজিদের সামনের খোলা মাঠে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম। সেখানে উপস্থিত বিভিন্ন পেশার মানুষ উথুরা রেঞ্জ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ ও তাঁর লোকদের নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির বক্তব্য তুলে ধরেন। সবশেষে গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে ছয়টি দাবি তুলে ধরা হয়।
দাবি গুলো হলো,স্থানীয়দের ফল-ফসল, বাশ, সবজি আবাদের পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাসের সুযোগ দিতে হবে। হুমকী, হয়রানিসহ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। অবৈধ টাকা নেওয়া ছাড়া থাকার ঘর নির্মাণের সুযোগ দিতে হবে।স্থানীয়দের রেকর্ডীয় জমি ও বন বিভাগের জমির সীমানা নির্ধারণ। সরকারের বন্দোবস্ত দেওয়া জমির নামজারির মাধ্যমে হস্তান্তরের সুযোগ রাখতে হবে।স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বনবিভাগের লোকদের কোন মতবিরোধ হলে বনভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিটির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী করনীয় ঠিক করতে হবে।
আলোচনা সভার বক্তব্য থেকে জানা গেছে,উপজেলার বিভিন্ন মৌজার স্থানীয় ভূমি মালিকদের পাশাপাশি বন বিভাগের দাবিকৃত বেশ কিছু জমি রয়েছে। এসব জমিতে বংশ পরমপরায় স্থানীয় বাসিন্দারা বসবাস করে আসছেন। উৎপাদন করছেন নানা সবজির পাশাপাশি ধান,ফল ও বাশ । সম্প্রতি স্থানীয় বাসিন্দাদের রোপন করা বিভিন্ন জাতের গাছ ও বাশ কাটতে বাধা দিচ্ছে উথুরা রেঞ্জ কর্মকর্তা। নিজেদের ঘর-বাড়ি তৈরির প্রয়োজনে দুই-চারটি বাশ কাটলেই করা হয় হয়রানি। দেওয়া হয় মামলার হুমকী। রেঞ্জ কর্মকর্তার এমন আচরণে চরম বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।বাধা গ্রস্ত হচ্ছে তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে।
স্থানীয় হাফেজী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মোতাহার হোসেন বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে বনবিভাগের দাবিকৃত জমিতে একটি হাফেজি মাদ্র্রাসা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মাদ্রাসায় ছাত্রের সংখ্যা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন করে আরেকটি ঘর নির্মাণের প্রয়োজন। কিন্তু উথুরা রেঞ্জ কর্মকর্তার কাছে গেলে তাঁর সঙ্গে অসৌজন্য মূলক আচরণ করেন এবং মামলার ভয় দেখান। অথচ স্থানীয় সাংসদ সব কিছু জেনে ওই মাদ্রাসার জন্য সরকারি ভাবে ডেউটিন বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছেন।
মামলার ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আলোচনা সভায় মেনজেনা গ্রামের এক কৃষক বলেন, তাঁর বয়স্ক মা এবং স্ত্রী অসুস্থ। সাড়ে আট হাজার টাকার বাশ বিক্রি করেছিলেন তাদের চিকিৎসার জন্য। বন বিভাগের বাধার কারণে বাশ বিক্রির টাকা ব্যাপারিকে ফেরত দিয়েছেন। চিকিৎসা করানো যায়নি তাদের।স্ত্রী এখন বাড়িতে মৃত্যু শয্যায়।
শিক্ষক মাফিজুল মাস্টার বলেন,তাঁর চাচাত ভায়ের থাকার ঘর করার সময় মামলা না করার শর্তে টাকা নিয়েছে উথুরা রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ের লোকজন।পরে ঠিকই ওই ভায়ের নামে মামলা দিয়েছে।
মোঃ রতন নামের এক ব্যক্তি বলেন,সম্প্রতি তিনি তাঁর রেকর্ডীয় জমিতে পুকুরের সংস্কার কাজ করাচ্ছিলেন।ওই সময় বন বিভাগের লোকজন সেখানে উপস্থিত হয়ে এক্সাভেটর জব্দ করে চালকসহ তাদের কার্যালয়ে নিয়ে যায়।পরে ত্রিশ হাজার টাকার বিনিময়ে চালককে ছাড়িয়ে নিয়ে তাঁর পুকুরের সংস্কার করেন। টাকার বিষয়টি তাকে গোপন রাখতে বলেন, এও জানিয়ে দেন প্রকাশ পেলে মামলা দেওয়া হবে।
এসব বিষয়ে উথুরা রেঞ্জ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ মোঠো ফোনে বলেন,সব অভিযোগ মিথ্যা। আমি জেলা বন কর্মকর্তার নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply