নিজস্ব প্রতিবেদকঃ গণপূর্ত অধিদপ্তরে সিন্ডিকেট চক্র গড়ে তুলে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ আছে নির্বাহী প্রকোশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর বিরুদ্ধে। মিরপুর ডিভিশনের পূর্ত সার্কেলে আইবি বাংলো তৈরির সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চুন্নুর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও সেটি ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। গত বছরের আগস্ট মাসে এই তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করলেও এখন পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। দুর্নীতি, নিয়োগ, বদলি, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, কমিশনের বিনিময়ে কাজ জাগিয়ে নেয়া, কাজ না করে বিল উত্তোলন করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে গণপূর্তের নির্বাহী প্রকোশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর বিরুদ্ধে। বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে অল্প সময়ে গড়েছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ। গণপূর্তের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, গণপূর্ত অধিদপ্তরে একটি সিন্ডিকেট চক্র গড়ে তুলেছেন চুন্নু। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যেমে গণপূর্ত অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। দুর্নীতি ও অনিয়মের টাকায় গড়ে তুলেছেন একাধিক বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। খোজ নিয়ে জানা গেছে, চুন্নু নিজ এলাকা পটুয়াখালীতে গড়ে তুলেছেন নাহিয়ান ব্রীকস ফিল্ড, পটুয়াখালী কলেজ রোডে দুইতলা বাড়ি, পটুয়াখালি সদর উপজেলার কমলাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ধারান্দি গ্রামে পাঁচ একর জমি, পটুয়াখালীতে নেক্সাস নামে একটি গামেন্টসের শোরুম, সাভারে ১০ কাঠার একটি প্লট, ঢাকার ধানমন্ডিতে সেন্ট্রাল রোডে ও বেইলী রোডে দুটি ফ্ল্যাট এছাড়াও রয়েছে নামে বেনামে অসংখ্য সম্পদ। অভিযোগ আছে, গণপূর্ত অধিদপ্তর মিরপুর বিভাগে থাকাকালে সবচেয়ে বেশি কাজ ভাগিয়ে নিয়েছেন চুন্নু। পরবর্তীতে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৪ এসেও বড় বড় কাজ ভাগিয়ে নিচ্ছেন তিনি। এর মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। সাইফুজ্জামান চুন্নু সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর শরীফ আহমেদের কাছের লোক বলে পরিচয় দিতেন। বর্তমানে তিনি গণপূর্ত প্রধান প্রকৌশলীর আস্থাভাজন হয়ে ওঠার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে। গণপূর্তের ঢাকা মেট্রো জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে টাকার বিনিময় বিভিন্ন কাজ ভাগিয়ে নেন। অভিযোগ আছে, আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থায় আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনীতি করতেন চুন্নু। পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেয়া, নিয়োগ বদলি, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ সবই করেন তিনি। খোজ নিয়ে জানা গেছে, মিরপুর পাইকপাড়াস্থ পিডব্লিউডি ট্রেনিং সেন্টারের (পুরাতন) দ্বিতীয় তলার সিঁড়ির পূর্ব পাশের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত কক্ষ ৭ ও ৮ দুটি কক্ষকে আইনি বাংলোতে রূপান্তরের লক্ষ্যে সংস্কার/মেরামত ও আধুনিকায়ন কাজের জন্য ২০২২-২০২৪ অর্থ বছরে অর্থ বরাদ্দ করা হয়। কাজ সম্পন্ন না করে বরাদ্দকৃত অর্থ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে দেয়া হয়। এ থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাইফুজ্জামান চুন্নু কমিশন নেন বলে অভিযোগ আছে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের মিরপুর ডিভিশনের পূর্ব সার্কেলে আইবি বাংলো তৈরির সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত কমিটি করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মুহাম্মদ সোহেল হাসানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। গত বছরের আগস্ট মাসে এই তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করে। মুহাম্মদ সোহেল হাসান গণপূর্ত অধিদপ্তরের মিরপুর ডিভিশনের পূর্ত সার্কেলে আইবি বাংলোতে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জমা দেন। অভিযোগ রয়েছে, কাজ না করে অর্থ উত্তোলন করার অভিযোগে তদন্ত শুরু হলে প্রভাব খাটিয়ে রাতের আঁধারে তড়িঘড়ি করে কাজ করেন সাইফুজ্জামান চুন্নু। গণপূর্ত অধিদপ্তরের মিরপুর ডিভিশনের পূর্ব সার্কেলে থাকাকালীন বদলি হওয়ার আগ পর্যন্ত অর্থ উত্তোলন করেন তিনি। গণপূর্ত বিভাগ-৪ এর নির্বাহী প্রকোশলী মো. সাইফুজ্জামান চুন্নুর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি গগণমাধ্যমকে বলেন, এটা তো পুরনো বিষয়, আর কিছু খুঁজে পেলেন না। আপনি আমার অফিসে আসেন, এই বিষয়ে সামনাসামনি কথা বলবো। এরপর তিন দিন তার অফিসে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি হোয়াটঅ্যাপে বার বার ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মুহাম্মদ সোহেল হাসান গনমাধ্যমকে বলেন, গণপূর্ত অধিদপ্তরের মিরপুর ডিভিশনের পূর্ব সার্কেলে আইবি বাংলো তৈরির সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত হয়েছে। প্রতিবেদনও জমা দেয়া হয়েছে সচিব স্যারের কাছে। সাইফুজ্জামান চুন্নুর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মুহাম্মদ সোহেল বলেন, এ বিষয় স্যার বলতে পারবেন। কথা বলতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব নবীরুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply