আনোয়ার হোসেন নিজস্বপ্রতিনিধিঃ যশোরের বাসের ভিতর হেলপার বাপ্পি হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রানা সরদার (২১) নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। সদর শহরের লোহাপট্টি যৌনপল্লির এক মেয়ের সঙ্গে দুই জনের প্রেম ঘটিত কারণে এই হত্যাকাণ্ড বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গতকাল রবিবার (১৭ ই নভেম্বর) বিকালে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগা মোড় থেকে বাঘারপাড়া থানা পুলিশের সহায়তায় যশোরের ডিবি পুলিশ তাকে আটক করে। তার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। আটক রানা যশোর সদরের হোগলাডাঙ্গা গ্রামের মৃত আরিফুল সরদারের ছেলে।
এই ঘটনায় নিহতের পিতাঃ গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার শংকরপাশা গ্রামের ইদ্রিস আলী
যশোর কোতয়ালি থানায় রানাসহ অজ্ঞাত ২/৩ জনের নামে একটি হত্যা মামলা করেন।
যৌনকর্মী প্রেমিকার সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলায় বাসের মধ্যে লুকিয়ে ভিতরে গিয়ে ঘুমন্ত হেলপার বাপ্পিকে (২৩) ছুরিকাঘাতে খুন করে তারই সহকর্মী আরেক হেলপার রানা সরদার (২১)। রানা যশোর সদর উপজেলার হোগলাডাঙ্গা গ্রামের মৃতঃ আরিফুল সরদারের ছেলে। পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর রানা সরদার এই হত্যার কারণ জানায়।
আটক রানা যশোরের জুডিসিয়াল আদালতের বিচারক গোলাম কিবরিয়ার কাছে এই হত্যার কথা স্বীকার করেছে। আদালত তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করে।
পুলিশ সূত্রে জানাগেছে, যশোর সদর লোহাপট্টি এলাকার যৌনপল্লীতে বসবাসকারী সাদিয়া আক্তার পপির সাথে মাস দেড়েক আগে পরিচয় হয় রানা সরদারের। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রানা ও নিহত বাপ্পি একই বাসের হেলপার। ফলে রানাও তার সহকর্মী বাপ্পির সাথেও সাদিয়া আক্তার পপির পরিচয় করিয়ে দেয়। মাঝে মধ্যে রানা ওই যৌনপল্লীতে যাতায়াত করতো। পরিচয়ের সূত্র ধরে নিহত বাপ্পিও মোবাইল ফোনে কথা বলতো যৌনকর্মী পপির সাথে। এই বিষয়টি বুঝতে পারে রানা। বেশ কয়েকদিন দুই জনের ফোন ব্যস্ত থাকায় রানার সন্দেহ হয়। সে মনে করতো তাকে বাদ দিয়ে বাপ্পির সাথে পপির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এই নিয়ে দুইজনের মধ্যে বাকবিতন্ডাও হয়েছে। ফলে রানা ক্ষোভে বাপ্পিকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, তারা ঘটনা জানার পরপরই হত্যার মোটিভ উদঘাটনের জন্য তৎপর হয়। তারা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে রানাকে মোবাইল ফোনসহ আটক করে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে এই হত্যার কথা স্বীকার করে।
তারা দুইজনেই একই বাসের (সরদার ট্রাভেলস ঢাকা মেট্টো-ব-১৫-৯৭৯৮) হেলপার সেই বাসটি গত ১৫ই নভেম্বর রাতে মনিহার এলাকার তালতলা মনির উদ্দিন পেট্রোল পাম্পের সামনে রাস্তার ওপরে রাখা ছিলো। বাসের চালক ও সুপারভাইজার বাড়িতে চলে যান। বাসের মধ্যে একাই ছিলেন নিহত বাপ্পি। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৫ই নভেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাসের জানাল দিয়ে ভিতর ঢোকে রানা। সাথে নেয় একটি চাকু। বাসের মধ্যে ঘুমিয়ে ছিলেন বাপ্পি। ঘুমন্ত বাপ্পিকে চাকু দিয়ে আঘাত করে রানা। একের পর এক চাকু দিয়ে আঘাত করায় বাপ্পি নিস্তেজ হয়ে পড়েলে।বাসের মধ্যেই চাকু ফেলে রানা ফের জানালা দিয়ে বাইরে বের হয় এবং পালিয়ে যায়। গতকাল ১৬ই নভেম্বর সকালে চালক এনামুল হোসেন এবং সুপারভাইজার উজ্জল ঢাকায় যাওয়ার জন্য বাসের কাছে যায়। কিন্তু দরজা বন্ধ দেখতে পান। পরে জানালা দিয়ে উকি মেরে দেখেন ইঞ্জিন কভারের ওপর রক্ত লেগে আছে। সে সময় বাসের ম্যানেজারসহ শ্রমিক নেতাদের সংবাদ দেন। পরে পুলিশ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসের দরজা খুলে বাপ্পির মরদেহ দেখতে পায়। সেখান থেকে একটি রক্তমাখা চাকুও উদ্ধার করে। পুলিশ বাসটি জব্দ করে থানায় নেয় এবং হেফাজতে নেয় চালক ও সুপারভাইজারকে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply