নিজস্ব প্রতিবেদকঃ মিরপুরের দারুস সালাম এলাকায় পাওনাদারের বাসায় বাথরুমে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করা প্রতারক কথিত সচিব পরিচয় দানকারী রেজাউল করিমের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ায় তার বড় ভাই মোঃ. শফিকুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করেছে প্রশাসন।
রাজধানীর মিরপুর দারুস সালাম থানা এলাকার উত্তর বাজার পাড়া খাঁটা মাসুদের ১৪৯ নং বাড়ির দ্বিতীয় তলার ভাড়াটিয়া মো. নাসির হাওলাদারের ফ্লাটের টয়লেট থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় নিজেকে সচিব পরিচয় দানকারী রেজাউল করিম নামে এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করেছিল দারুস সালাম থানা পুলিশ।
ঘটনার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত ২৩ জানুয়ারি দিবাগত ভোর রাতে নিহত ব্যক্তি রেজাউল করিমের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে দারুস সালাম থানার পুলিশ। কথিত রয়েছে নিহত ব্যক্তি নিজেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব বলে পরিচয় দিতেন।
উল্লেখিত ঘটনা থেকে জানা যায়, উক্ত ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া মো. নাসির হাওলাদার ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর থানার পিংড়ি গ্রামের মৃত মনসুর আলী হাওলাদারের ছেলে। তিনি পেশায় একজন ইলেকট্রনিক পণ্যের শোরুম ব্যবসায়ী। এছাড়াও তিনি দারুস সালাম থানা “মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড” কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও দিন বদলের সময় নামে একটি পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার।
মো. নাসির হাওলাদারের বিরুদ্ধে উক্ত হত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমি একজন ব্যবসায়ী। পাশাপাশি দারুস সালাম থানা মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও দিন বদলের সময় নামে একটি পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার। আমি রেজাউল করিমের নিকট ৯ লাখ টাকা পেতাম। তিনি আমাদের কামরাঙ্গীরচর এর বায়ান্নটি বাড়ির মিউটেশন করিয়ে দেওয়া বাবদ ২০১৮ সালে আমার কাছথেকে ৯ লাখ টাকা নেন। এই টাকা আত্মসাৎ করে তিনি দির্ঘ দিন আত্নগোপনে থাকেন।
তিনি আরও জানান, গত ২৩ জানুয়ারী ২০২৩ তারিখে হাইকোর্টে তার সঙ্গে আমার দেখা হয়। তিনি টাকার বিষয়ে সমাধান করে দিতে চান এবং আমার সঙ্গে আমার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে আসেন। রাত ১২ টা পর্যন্ত বিভিন্ন আলাপ আলোচনা হয়। পরে রাত হয়ে গেলে আমি তাকে আমাদের বাসায় থেকে যাওয়ার কথা বলি। তিনি আমাদের বাসায় যাওয়ার পর খাওয়া দাওয়া করে রাত ২ টায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে আমার বোন বাথরুমে গেলে দরজা ভেতর থেকে আটকানো পায়। অনেক ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে আমাকে ডাকলে আমি ঘুম থেকে উঠে দরজা ভেঙে দেখি তিনি টয়লেটের ভেন্টিলেটরের সঙ্গে মাজার বেল্ট পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। আমি তাকে কোনরকম মারধর বা বকাঝকা করিনি। পরে আমি সকালবেলা দারুস সালাম থানায় যাই এবং থানা পুলিশকে অবহিত করি। থানা পুলিশ এসে লাশ মার্গে নিয়ে যায়। স্থানীয়রা আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে যে, আমি তাকে হত্যা করেছি। কিন্তু আমি এ ধরনের কোন কাজ করি নাই। এ বিষয়টি নিয়ে তার কোন এক আত্মীয় আমার নামে মিথ্যা হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
বিষয়টি নিয়ে দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, ‘বাগবাড়ির বাজার পাড়ায় একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি গলায় ফাঁস নিয়ে আত্নহত্যার খবর প্রাপ্ত হয়ে থানার ফোর্সসহ আমি সেখানে যাই এবং এসি স্যারও পরিদর্শনে যান। লাশের সুরতহাল করার পর লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসলেই আমরা বলতে পারব। এ বিষয়ে থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আরো খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুবরণ করা কথিত সচিব পরিচয় দানকারী বিভিন্ন মানুষের কাছথেকে নিজেকে সচিব পরিচয় দিয়ে প্রতারনা করে প্রায় ৭০-৮০ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। একপর্যায়ে মানুষের কাছে তার প্রতারণা ও নিজেকে ভুয়া সচিব পরিচয় দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পেয়ে যায়। এর প্রেক্ষিতে বিভিন্ন লোকজনের দেনাপাওনার কারণে মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন প্রতারক কথিত ভুয়া সচিব পরিচয় দানকারী রেজাউল করিম। যারফলে সে নিজে হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা পথ বেছে নেয়।
ময়না তদন্ত শেষে আত্মীয় স্বজনদের অনেক খোঁজাখুঁজি করার পর তাহার বড় ভাই মো. শফিকুল ইসলাম, গ্রাম- কান্দানিয়া হরিণহাটা, থানা-ফুলবাড়ীয়া, জেলা-ময়মনসিংহ এর কাছে লাশ হস্তান্তর করেছে প্রশাসন। অতঃপর তার নিজ এলাকায় লাশের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
এ সংবাদ লিখা পর্যন্ত ময়না তদন্তের রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply