আনোয়ার হোসেন নিজস্বপ্রতিনিধিঃ যশোর ও নড়াইল মহাসড়কের পিচ গলার ঘটনার তদন্তে দুদক। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন দুদক কর্মকর্তারা। এ সময় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুদকের উপপরিচালক আল আমিন বলেন, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নির্দেশে যশোরওনড়াইল সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে গলা পিচ পরীক্ষা করেছেন। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত লিপিবদ্ধ করে তারা প্রধান কার্যালয়ে পাঠাবেন। তদন্তের স্বার্থে এখনই বেশি কিছু বলতে পারছেন না।
সওজ সূত্র জানায়, সওজ সাধারণত সড়কে ৬০-৭০ গ্রেডের পিচ ব্যবহার করে। এর গলনাঙ্ক ৪৮ থেকে ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে পিচ গলার কথা। কিন্তু তার আগেই পিচ গলে যাচ্ছে।যশোর, চুয়াডাঙ্গা সহ আশপাশের কয়েকটি জেলার ওপর দিয়ে বইছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। চলতি মৌসুমে যশোরে সর্বোচ্চ ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে প্রচণ্ড তাপে ওই মহাসড়কের বিটুমিন গলতে শুরু করে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিটুমিন গলার ছবি ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনাটি জানাজানির পর মহাসড়কে ব্যবহৃত বিটুমিনের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেন দুদক। গতবৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নির্দেশে যশোর-নড়াইল মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে সড়কের গলা পিচ পরীক্ষার পাশাপাশি সড়কের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে দেখেন দুদকের কর্মকর্তারা।
এ সময় দুদকের সমন্বিত সদর জেলার কার্যালয় যশোর উপপরিচালক আল আমিন, সহকারী পরিচালক চিরঞ্জন নিয়োগী, সহকারী পরিদর্শক সাফিউল্লাহসহ সড়ক বিভাগের দুজন সহকারী প্রকৌশলী উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে জানিয়েছেন।
সড়ক বিভাগের তথ্যমতে, চার মাস আগে যশোর-নড়াইল আঞ্চলিক মহাসড়কে কার্পেটিংয়ের কাজ করা হয়। যার প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ কোটি ৫৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। যশোর শহরের মণিহার মোড় থেকে ভাঙ্গুরা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কে সংস্কারকাজ করে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মাসুদ হাইটেক’। গত বছরের ডিসেম্বরে ওই কাজ শেষ হয়।
যশোর-নড়াইল সড়ক ঘুরে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়কের যশোর শহরতলীর ঝুমঝুমপুর অংশে বিটুমিন গলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সড়কে যান চলাচলের সময় বিটুমিন চাকায় লেগে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও যানবাহনের চাকার দাগ বসে যাচ্ছে সড়কে। সড়কে চলাচলকারীদের অভিযোগ, সংস্কারের সময় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। সড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকার অধিকাংশ স্থানে বিটুমিন গলে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন এ জন্য নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের দায়ী করেছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মুরাদ হোসেন বলেন, ‘রোদ গরমে দুপুর থেকে রাস্তার পিচ গলতে শুরু করে। দুপুরের পর রাস্তার পিচ যেন কাদায় পরিণত হয়। রিকশার চাকা আটকে যায়। এতে রাস্তা এবড়ো থেবড়ো হয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে সওজের ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি করেন এলাকাবাসী।
সওজের যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠলে বিটুমিন নরম হতে শুরু করে। সেখানে যশোরে তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রির ওপরে আছে এ জন্য বিটুমিন গলছে। সড়কে নিম্নমানের কোনো সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন। বলেন, ‘দুদক তদন্ত করছে। অনিয়ম হলে তদন্তে বেরিয়ে আসবে আসল ঘটনা।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply