আনোয়ার হোসেন নিজস্ব প্রতিনিধিঃ যশোর শহরের বেজপাড়া চারখাম্বার মোড় এলাকায় ফারহানা পারভীন ঊর্মী (২৯) নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একছাত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ গোপনে দাফনের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু মাগুরার শালিখায় গ্রামের বাড়ি নিয়ে রাতে গোসলের সময় শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে পরিবারের লোকজনের সন্দেহ হওয়ায় পুলিশকে সংবাদ দেয়া হয়। পরে পুলিশ তার আপন ভাই ফয়েজ রাজ্জাক ফারদিন (২৩) ও মা আইরিন পারভীন (৫৫)কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসল বিষয়টি জানতে পেরে আটক করে পুলিশ। এদিকে আটক দুইজনই আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার দালাল তাদের জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোরসদর কোতয়ালি মডেল থানায় এক প্রেসব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রেসব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক সার্কেল জুয়েল ইমরান জানান, নিহত ফারহানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় তার মা ও ভাইয়ের সাথে যশোর শহর বেজপাড়ার চারখাম্বার মোড় এলাকার ইমরান কবীরের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। পারিবারিক কলহের জের ধরে তাকে তার ভাই ফারদিন শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর ফারদিন ও তার মা আইরিন পারভীন লাশ গ্রামের বাড়ি মাগুরার শালিখায় নিয়ে যায়। আত্মহত্যা করেছে বলে তাকে দাফনের করার চেষ্টা করা হয়। নিহতোর গোসলের সময় তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। এরপর ফারহানার চাচা রবিউল ইসলাম বিষয়টি শালিখা থানা পুলিশকে অবহিত করেন। শালিখা পুলিশের মাধ্যমে অবহিত হওয়ার পর যশোর কোতয়ালি থানা পুলিশ ফারহানার লাশ উদ্ধার করে যশোর সদর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। একই সাথে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফারহানার ভাই ফারদিন ও মা আইরিন বেগমকে হেফাজতে নেন পুলিশ। তারা হত্যার দায় স্বীকার করলে ফারহানার চাচা রবিউল ইসলামের দায়ের করা মামলায় তাদের আটক দেখানো হয়েছে।
প্রেসব্রিফিং এ জানানো হয়, নিহত ফারহানা মাগুরার শালিখা উপজেলার শ্রীহট্ট গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে। ঘাতক ভাই ফারদিন আমেরিকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের এলএলবির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। গত মঙ্গলবার রাতে যেকোন একটা বিষয় নিয়ে ভাইবোনের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হয়। সে সময় তার বোনকে ফারদিন জোরে ধাক্কা মারে। তার বোন মেঝেতে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পায়। পরে তার উড়না নিয়ে গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, নিহতের বাবা আইনজীবী ছিলেন। ২০১৫ সালে তিনি মারা যান। এরপর থেকে তারা যশোরে ওই ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। ফারহানা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়লে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে বাড়িতে নেয়া হয়। আইরিন পারভীনের পিতার বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ির কারোর সাথে যোগাযোগ ছিলো না। তারা একাই থাকতো। গত মঙ্গলবার রাত তিনটার দিকে ফারহানার লাশ একটি প্রাইভেটকারে করে নিয় বসিয়ে মাগুরার শালিখার শ্রীহট্টি গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু লাশের মাথায় আঘাত দেখে নিহতের দাদা বাড়ির লোকজনের সন্দেহ হলে পুলিশে সংবাদ দেয়া হয়। এরপর জানাগেছে ফারহানাকে হত্যা করা হয়েছে। সে আত্মহত্যা করেনি।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply