বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হুদা পাখি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারের শাহাদাত হওয়ার পরে সাহাপুর গ্রাম থেকে ১১০সিসি মোটর বাইক চালিয়ে পাবনা গিয়ে পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ওয়াজউদ্দিন (উদ্দিন) এবং রফিকুল ইসলাম বকুল সাহেবের সাথে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে রাজনীতি করতেন। তার পরিবার একটি আওয়ামী লীগের পরিক্ষীত আওয়ামী পরিবার। বিষয়টি পাবনা জেলার এমন কোন নেতা কর্মী নেই যারা নুরুল হুদা পাখি সাহেবকে চিনেন না। পাখি সাহেবের রাজনৈতিক আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে তার ছোট ভাই রবিউল আলম বুদুকে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় করেছিলেন তত্কালীন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ।
ঈশ্বরদী কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন কেউ ভয়ে ছাত্রলীগ করতো না। সময়টি তখনকার, যখন ১৫ আগষ্টের পট পরিবর্তন হয়েছিল। সে সময়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ছিলেন না। অতঃপর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে আসবেন বিষয়টি জেনে তখনকার পাবনা ঈশ্বরদীর তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা রবিউল আলম বুদু নেতাদের নিয়ে সংঘঠিত হতে থাকেন। সেই সময়ে রাকসু নির্বাচনে অন্যান্ন ছাত্র সংগঠনগুলো বেইমানী না করলে রবিউল আলম বুদু রাকসু ভিপি নির্বাচিত হতেন। সে’সময়ে রাকসুর ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাসী বাহিনী রবিউল আলম বুদুর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলরুমে আছেন নিশ্চিত জেনে রুমের ভেতর আগুন লাগিয়ে দেয়। কিন্তু ভাগ্যক্রমে সেদিন আমির আলী হলের অন্য রুমে ছিলেন তিনি। যার কারণে বেঁচে যান রবিউল আলম বুদু। পরেরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে বুদু সাহেবকে দেখে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে তাকে নির্মম ভাবে আহত করে শিবিরের সন্ত্রাসীরা। পরেরদিন হলে ঢুকার সময় শিবিরের সন্ত্রাসীরা বুদু সাহেবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। ভাগ্যক্রমে সেদিও রবিউল আলম বুদু বেঁচে যান। বারবার তার উপর এহেন হামলার কারণ, তিনি ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন বলে।
জাতির জনকের কন্যা দেশে আসার পরে রবিউল আলম বুদু ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে কতদিন প্রহরীর মতো থেকেছেন তার জলন্ত স্বাক্ষী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরাসরি বাই নেমে রবিউল আলম বুদুকে চেনেন ও জানেন।
রবিউল আলম বুদু আইন শাস্ত্রে অধ্যায়ন শেষ করে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে যোগদান করেন। তখন বুদু সাহেব অনুধাবন করেন সুপ্রিম কোর্টে তেমন কোন যোগ্যতাসম্পন্য আওয়ামীমনা আইনজীবী নেই। যে ক’জন ছিলেন তারাও নিজেদের আওয়ামী লীগের পরিচয় দিতে কুন্ঠাবোধ করতেন।
১৯৯১ সালে বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর সুপ্রিম কোর্টের উকিলদের বসার ২নং হলে শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটুক্তি করেছিল বিএনপি পন্থী আইনজীবীরা। তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাঁক তরুণ ছাত্রলীগ কর্মী রবিউল আলম বুদু সাহেব এর নেতৃত্বে বিএনপি পন্থী আইনজীবীদের সেই সভা পণ্ড করেদেয়। এর পর থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মিরা সুপ্রীম কোর্টে রবিউল আলম বুদুর নেতৃত্বে সংঘটিত হতে থাকেন। বুদু সাহেব একজন শতভাগ কর্মী বান্ধব নেতা হিসেবে সকলের কাছে সমাদৃত। সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে দিন-রাত খেটে আওয়ামীপন্থী প্যানেলকে বিজয়ী করার জন্য তার চেষ্টা প্রসংশনিয়। যখন বুদু সাহেব নিজেই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেন তখন নব্য আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা কেউ তার পাশে এসে নির্বাচন করেননি। কিন্তু, শেখ হাসিনা বার কাউন্সিলের নির্বাচনে নমিশনের দেওয়ার পরে রবিউল আলম বুদু বিপুল ভোটে বিজয়ী হন।
এ সংক্রান্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, পাবনা ৪ আসনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রবিউল আলম বুদু সবদিক থেকে একজন যোগ্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত।
কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এমন একজন যোগ্য ব্যক্তিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন না দিয়ে, বুদু সাহেব এর ছেলের বয়সী গালিব শরীফ নামে একজন প্রবাসী অযোগ্য অজানা যার বিগত দিনে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই। যার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার ও অর্থ লগ্নি করার মতো বিষয় লোকমুখে শোনা যায়, এমন একজন নাম সর্বস্ব ব্যাক্তিকে ঐতিহাসিক পাবনা ঈশ্বরদীর ৪ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দিয়ে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা কিসের ইঙ্গিত দিয়েছেন তাহা বোধগম্য নয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের কাল রাতে জাতির পিতা সহ পরিবারের লোকদের হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে অমানিশার অন্ধকার নেমে এসেছিল। সে সময়ে বাংলাদেশের মাটিতে আওয়ামী লীগের নাম উচ্চারণ করা ছিল অপরাধ। সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের গুটিকয়েক যে ক’জন দুঃসাহসী নেতৃত্বের অগ্র ভূমিকায় যারা ছিলেন তারাই আজকের বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অবহেলিত, কোনঠাসা! যার জলজ্যান্ত উদাহরণ একসময়ের রাকসু ছাত্রলীগের তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা রবিউল আলম বুদু।
রবিউল আলম বুদু জাতির পিতার হত্যা মামলার একজন আইনজীবী, ওয়ান ইলেভেনের সময় সাবেক আইন মন্ত্রী শফিক আহমেদ এর সাথে সবসময় যুক্ত ছিলেন। তিনি তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রয় করে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। এমন বিষয় পাবনা ঈশ্বরদীর মানুষের মুখে মুখে।
দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের পাশে থেকে জীবন যৌবন অর্থ সম্পদ বিষর্জন দিয়েও আজ সু-সময়ে দুরে ঠেলে দেওয়া বঞ্চিত নেতা রবিউল আলম বুদু। কেনো কি কারণে তার উপরে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক? আওয়ামী লীগের এমন হঠকারী সিদ্ধান্তে স্তম্ভিত পাবনা ঈশ্বরদীর সাধারণ মানুষ।
মোহাম্মদ আহসান হাবীব
ব্যাবস্থাপনা পরিচালক, সম্পাদক ও প্রকাশক,
দুরন্ত সত্যের সন্ধানে (দুসস)
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply