করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট ডেলিভারি দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফকে ৩ দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত। এর প্রথমদিনে আজ সাবরিনা জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার মাধ্যমে জেকেজিকে কাজ পাইয়ে দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে, তিনি জেকেজির চেয়ারম্যান- সে বিষয়টি স্বীকার করেননি।
মঙ্গলবার একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর আগে সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনুর রহমানের আদালতে শুনানি শেষে সাবরিনার তিন দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করা হয়।
তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার হারুন অর রশিদ এ বিষয়ে বলেন, তার কোনো ট্রেড লাইসেন্সই নেই। উনি ট্রেড লাইসেন্সই পেয়েছেন জুন মাসে, তাহলে এপ্রিল মাসে কী করে উনি কাজ করার অনুমতি পেলেন?
পূর্বে যারা আটক হয়েছেন তারা একাধিকবার জিজ্ঞাবাদে জানিয়েছেন, তাদের চেয়ারম্যান সাবরিনা আরিফ। যিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে কাজ এনেছেন। আরিফুল হয় চৌধুরীও জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করতেন তার স্ত্রী সাবরিনা। যিনি জেকেজির চেয়ারম্যান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যেহেতু তাদের ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া অনুমোদন দিয়েছেন, আমরা তাদের সাথেও কথা বলবো।
রিমান্ডে সাবরিনা নিজেকে চেয়ারম্যান না দাবি করলেও এ ব্যাপারে বেশ কিছু প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। সাবরিনার মোবাইল থেকে বেশ কয়েকজনকে চেয়ারম্যান পরিচয়ে মেসেজ করার প্রমাণ পেয়েছেন তারা। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে মিডিয়াতেও এই পরিচয় দিয়েছেন সাবরিনা।
এর আগে করোনাভাইরাস পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ ও ভুয়া ফলাফল দেয়ার ঘটনায় সাবরিনার সম্পৃক্ততার কথা জিজ্ঞাসাবাদে তার স্বামী আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন বলে দাবি করে পুলিশ। বলা হচ্ছে, গ্রেপ্তার প্রত্যেকেই জেকেজির সাথে সাবরিনার সম্পৃক্ততার কথা বলেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. মাহমুদ খান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আরিফ এ–ও দাবি করেন, করোনার নমুনা পরীক্ষার জালিয়াতির ঘটনায় তিনি সাবরিনাসহ চারজনকে চাকরিচ্যুত করেন। তবে একজন সিইও হয়ে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানকে চাকরিচ্যুত করতে পারেন কি না, সে ব্যাপারে জানতে চাইলে আরিফ কোনো উত্তর দিতে পারেননি। কাউকে চাকরিচ্যুতির কাগজপত্রও দেখাতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘ওভাল গ্রুপের সিইও আরিফুল চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় আমাদের জানান, করোনার নমুনা পরীক্ষার জালিয়াতির সঙ্গে তাদের অফিসের কিছু লোক জড়িত ছিল। যখন তিনি এই বিষয়টি জানতে পারেন, তখন তিনি তাদের টার্মিনেট করেন।
মাহমুদ খান বলেন, আমি আরিফ চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলাম, আপনি কাকে কাকে টার্মিনেট করেছেন। জবাবে আরিফ বলেন, আমার ওয়াইফ (সাবরিনা আরিফ চৌধুরী), যিনি চেয়ারম্যান ছিলেন, তাকে আমি টার্মিনেট করেছি। আমি তখন বললাম, আপনি (আরিফুল) যদি সিইও হন, তাহলে কীভাবে আপনার ওয়াইফকে (স্ত্রী) টার্মিনেট করবেন। সিইও চেয়ারম্যানকে টার্মিনেট করতে পারেন কি না।’
সাবরিনা আরিফ চৌধুরী সম্পর্কে পুলিশ কর্মকর্তা মাহমুদ খান বলেন, চিকিৎসক সাবরিনা বারবারই অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি করোনার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার ফলাফল জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত নন। কিন্তু আরিফুল চৌধুরীসহ অন্যরা জানিয়েছেন, জেকেজির সবকিছু ভালোভাবে জানতেন চিকিৎসক সাবরিনা আরিফ চৌধুরী।
তিনি বলার চেষ্টা করছেন, তিনি জেকেজির চেয়ারম্যান নন। কিন্তু তিনিই যে জেকেজির মুখপাত্র, সেটি সবাই জানেন। তিনি নিজে ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রচারণা চালিয়েছেন। কথা বলেছেন। আর তিনি যে জেকেজি থেকে বেরিয়ে গেছেন, এমন কোনো পদত্যাগপত্র তো তিনি জমা দেননি। ওভাল গ্রুপ ও জেকেজি হেলথ কেয়ার কোম্পানির কাগজপত্র জব্দের চেষ্টা করা হচ্ছে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply