ওসি সিদ্ধিরগঞ্জ কামরুল ফারুকের ছত্রছায়ায় নারায়াঙ্গাঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে পদ্মা ও মেঘনা তেল ডিপোতে গড়ে উঠেছে একটি বৃহৎ সক্তিশালি তেল চোরা কারবারিদের সিন্ডিকেট। এই তেল চোরা কারবারিদের সঙ্গে যোগসাজশে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটিকোটি টাকা। এ বিষয়ে আমাদের প্রতিনিধি তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে বেড়িয়ে আসে চমকপ্রদ তথ্য।
সরেজমিন গিয়ে দেখাযায় পদ্মা তেল ডিপোর পাশঘেসে সরাসরি শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় পর্যন্ত একটি সরু রাস্তা রয়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানাযায়, তেল চোরাকারবারিরা এই রাস্তাটি সরাসরি তেলের জাহাজ থেকে চোরাই তেল নামানোর জন্য ব্যাবহার করে থাকে। আর তাদের সহযোগিতা করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিস।
তেল চুরির এই স্থানটিতে গিয়ে দেখা যায় নদীর পাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় তেলের খালি ব্যারেল পড়েরয়েছে। এই ব্যারেলে করেই নোঙরে থাকা তেলের জাহাজ থেকে চোরাই তেল পাচার করা হয়। এছাড়া নদীর পারঘেসে গড়ে তোলা হয়েছে গদিঘর। আমাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে জানা যায় তেল চোরা কারবারির এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন মারুফ নামের একজন তেল চোরাকারবারি।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার একাধিক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসআই ও এএসআই আমাদের প্রতিনিধির কাছে জানান, তেল চোরাকারবারি মারুফ সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি কামরুল ফারুককে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা দিয়ে বহাল তবিয়তে চালিয়ে যাচ্ছে চোরাই তেলের বাণিজ্য। আমরা ওসির অবৈধ দাপটের কাছে নিরুপায় অসহায়। তারমত অদ্ভুত ওসি বাংলাদেশের আর কোন থানায় আছে কিনা আমাদের জানা নেই। এমন ওসি কোন থানায় থাকলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অপরাধ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ব্যাহত হবে বলে মনে করেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অধস্তন অফিসাররা। তাদের দাবী এমন দুর্নীতিবাজ ওসিকে অনতিবিলম্বে অপসারন করে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় মেঘনা অয়েল ডিপোকে ঘিরে গড়ে ওঠা চোরাই তেল সিন্ডিকেট, কোটি টাকার জ্বালানী তেল চুরি, প্রশাসন নিরব ! এখানে শতাধিক চোরাই তেল কারবারী রয়েছে। প্রতিমাসে লাখ লাখ লিটার জ্বালানী তেল পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল ও বিমানের (জেট-ওয়ান) তেল চুরি হচ্ছে। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তেল চোরদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন না করে উল্টো তাদের সাথে খোশগল্প করে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ ।
এ ডিপোর প্রবেশদ্বার সড়কের দুই পাশে প্রায় ১ কিলোমিটার সড়কে গড়ে উঠেছে চোরাইতেলের আস্তানা যা স্থানীয়ভাবে ঘুন্টিঘর বা তেল পল্টির ঘর বা বেড়ার ঘর বলে থাকে। ডিপো থেকে জ্বালানী ট্যাঙ্কলরী বোঝাই করে গন্তব্যে যাওয়ার পথে এ সকল আস্তানায় ট্যাক্সকলরী থামিয়ে তেল চুরি করে বিক্রি করছে। এভাবে চোরাকারবারীরা প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পযন্ত শতাধিক চোরাই তেলের আস্তানায় তেল চুরি করছে ট্যাঙ্কলরী থেকে। এসব আস্তানার মাধ্যমে প্রতিবছর কোটি লিটার জ্বালানী তেল বাইরে বিক্রি হচ্ছে। যার বর্তমান মূল্য কয়েক কোটি টাকা।
গোদনাইলের পদ্মা ও মেঘনা ডিপো থেকে জ্বালানী তেল বহন করে গন্তব্য যাওয়ার পথে ডিপোগেটের দু পাশে তেল চোরদের আস্তানায় ট্যাংকলরী চালকরা কম দামে এসব তেল বিক্রি করছে। অন্য দিকে বাইরে বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও বিমানের জ্বালানী তেল দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। অথচ এই জ্বালানী তেল পরবর্তীতে অকটেন ও পেট্রোলের সাথে মিশিয়ে বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পে বিক্রি করা হচ্ছে ভেজাল তেল। স্থানীয়ভাবে চোরাই তেলের এ ব্যাবসা ‘পল্টি’ ব্যবসা হিসেবে পরিচিত।
আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সংশি¬ষ্ট কর্মকর্তাদের ও কুর্মিটোলাস্থ পদ্মা ডিপোর কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে প্রকাশ্যেই দিনের পর দিন চলছে চোরাই তেল কেনা বেচার এ ব্যবসা। খোলামেলাভাবে এ ব্যবসা করার কারনে যে কোন সময় ঘটতে পারে অগ্নিকান্ডের মতো বড় ধরণের দুর্ঘটনা। জানাযায়, সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলস্থ পদ্মা ও মেঘনা অয়েল কোম্পানীর ডিপো থেকে পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল এর পাশাপশি পদ্মা ডিপো থেকে বিমানের তেলও সরবরাহ করা হয়। বিমানের তেল কুর্মিটোলাস্থ পদ্মা ডিপোতে প্রতিদিন ১০/১২ লাখ লিটার সরবরাহ করা হয়। ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন সরবরাহ করে গড়ে ১৫০ টি ট্যাঙ্কলরী এবং বিমানের তেল রবরাহ করে ১২৭টি নির্দিষ্ট ট্যাংকলরীর মাধ্যমে।
জ্বালানী তেল পরিবহনে নিয়োজিত ট্যাংকলরীর চালকরাই পথে পথে বিক্রি করছে এ তেল। জ্বালানী বিক্রির টাকা থেকে নির্ধারিত হারে টাকা কুর্মিটোলা ডিপোতে তেল বুঝে রাখার দ্বায়িত্বরত কর্মকর্তাদের দিতে হয়। এদিকে বাইরে বিক্রি নিষিদ্ধ জ্বালানী কেনা-বেচার জন্য সিদ্ধিরগঞ্জে গড়ে ওঠেছে শতাধিক আস্তানা। তথ্যমতে বার্মাশীল ও এসও রোড এলাকায় চোরাই তেল কেনার আস্তানা রয়েছে ।
পদ্মা ও মেঘনা ডিপো থেকে বের হওয়ার পর প্রায় ১কিলোমিটার সড়কের উভয় পাশে রয়েছে শতাধিক চোরাই তেলের আস্তানা। এসব আস্তানাকে স্থানীয় ভাবে ‘পল্টি ঘর’ বলা হয়। প্রতিটি পল্টি ঘর পাহাড়ায় তাদের নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। ওই সকল বাহিনীর সদস্যরা প্রতিদিন হাজিরা বাবদ প্রতিজনে ৪শ থেকে ৬শ টাকা পাচ্ছে।
ডিপো থেকে ১২৭ টি ট্যাঙ্কলরীর মাধ্যমে বিমানের জ্বালানী তেল নিয়ে বের হওয়ার পর প্রতিটি ট্যাংকলরীর চালক প্রকাশ্যে এসব পল্টি ঘরের সামনে তেল বোঝাই ট্যাংলরী থামিয়ে প্রতিটি ট্যা্কংলরী থেকে সর্বনিন্ম ৪টিন (৮০লিটার) থেকে হাজার লিটার পর্যন্ত জ্বালানী বিক্রি করে যাচ্ছে। এতে দেখা যায় ১২৭ টি ট্যা্কংলরী থেকে দৈনিক ১০ হাজার ১৬০ লিটার হিসেবে প্রতিমাসে (শুক্রবারবাদে) ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৬০ লিটার যা বছর শেষে এর পরিমাণ ৩১ লাখ ৬৯ হাজার ৯শ২০ লিটার বিমমানের তেল। ডিজেল অকটেন ও পেট্রোল বিক্রি করছে প্রতিটি ট্যাংকলরী থেকে সর্ব নিম্ন ৪ টিন করে ( ৮০ ) লিটার এতে ১৫০ টি ট্যাংকলরী থেকে দৈনিক ১২ হাজার লির্টা মাসে ৩ লাখ ১২ হাজার (শুক্রবার বাদে) যা বছর শেষে দাঁড়ায় ৩৭ লাখ ৪৪ হাজার লিটার।
অপরদিকে শতাধিক ট্যাঙ্কলরী দিয়ে মেঘনা ডেপো থেকে প্রতিদিন পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল ও কেরোসিন তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। এ সকল ট্যাঙ্কলরী সড়কের পাশে থামিয়ে প্রতিটি থেকে ৪ টিন করে ৮০ লিটার তেল বিক্রি করছে। প্রতিমাসে (শুক্রবার ব্যতীত) ২ লাখ ৮০ হাজার লিটার যা বছর শেষে পরিমাণ দাড়াঁয় ২৪ লাখ ৯৬ হাজার লিটার জ্বালানী তেল। যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা।
চোরাই তেল ব্যবসায়ীদের অনেকেরই পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন থেকে পেট্রোল,অকটেন ও ডিজেল কেনা-বেচার লাইসেন্স রয়েছে। এরা এসব লাইসেন্স দিয়ে ডিপো থেকে নামমাত্র ডিজেল পেট্রোল ও অকটেন কিনে এনে তাদের পল্টি ঘরে চোরাইভাবে কেনা বিমানে ব্যবহৃত জেট-এ-ওয়ান অকটের পেট্রোলে ডিজেল ও কোরোসিন মিশিয়ে ভেজাল করে অকটেন ও পেট্রোল হিসেবে বাজারজাত করছে ভেজাল তেল বিভিন্ন পেট্রোল পাম্প গুলোতে। আবার রঙিন কেরোসিন তেলে এক প্রকার রাসায়নিক পাউডার মিশিয়ে কেরোসিনের রং সাদা করে পেট্রোল ও অকটেনে মিশিয়ে ভেজাল তেল বাজারজাত করছে চোরাকারবারীরা। সন্ত্রাসীদের পাহাড়ার কারণে সংবাদকর্মীরাও এসব আস্তানার চোরাই তেল ব্যবসার তথ্য সংগ্রহ করতে যেতে পারে না।
এ অবৈধ ব্যবসা করে বার্মাশীল ও এসও রোড এলাকার অনেকেই একাধিক বাড়ি গাড়িসহ কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। ট্যাংকলরী চালকদের তথ্যমতে, জেট-এ-ওয়ান ডিজেল কেরোসিন চোরাই তেল ব্যাবসায়ীরা এগুলো পেট্রাল ও অকটেনের সাথে মিশিয়ে ভেজাল অকটেন ও পেট্রোল বিক্রি করছে উচ্চমূল্যে । এতে তাদের লাখ লাখ টাকা আয় হয়। এসব চোরাই তেল ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাশীনদের নিয়মিত মোটা অংকের মাসোহারা দিয়ে থাকে। অপর দিকে ট্যাংকলরীর চালকরা তেল ব্রিক্রির টাকা থেকে প্রতি ট্যাংকলরী থেকে ৪টিন (৮০ লিটার) তেল বিক্রির বিনিময়ে কুর্মিটোলা ডিপো কর্মকর্তাদের ৩৫ শ টাকা ও তেল পরিমাপকারককে ৫‘শ টাকা করে দিতে হয় । এর ফলে তেল বুঝে রাখার দায়িত্বে নিয়োজিতরা পথে বিক্রি হওয়া তেল কম না দেখিয়ে চালান বুঝে রাখে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্যাংকলরী চালক বলেন, বাধ্য হয়েই আমাদের তেল বিক্রি করতে হয় । তেল বিক্রি করে টাকা না দিলে কুর্মিটোলা ডিপোতে তেল বুঝে রাখার সময় শর্ট দেখানো হয় ।
পেট্রোল ও অকটেন ও ডিজেল বিভিন্ন পাম্প ও মিলকারখানাতে ট্যাংলরীতে নিয়ে যাওয়ার সময় যে পরিমান তেল চুরি করে চোরাকারবারীদের আস্তানায় বিক্রি করা হয় সে পরিমান তেল অনেক সময় ট্যাঙ্কলরী চালকরা ট্যা্কংলরী চালানোর সময় ঘন ঘন ব্রেক করার কারনে তেল ফুলে উঠে। পরবর্তীতে পেট্রোল পাম্প ও মিলকারখানা তেল খালাস করার সময় কিছু কম হলেও ট্যাঙ্কলরী চালকরা তেল বুজে রাখা লোকদের কিছু ধরিয়ে দিলেই রেহাই পাচ্ছেন। এদিকে তেল চোর সিন্ডিকেটরা তাদের এই অবৈধ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে থানা পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিয়মিত মোটা অংকের টাকা মাসোহারা দেয় বলে তেল চোর সিন্ডিকেটের একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়। তেল চুরির ব্যবসা করে বার্মাশীল ও এসওরোড এলাকার অর্ধশত লোক আজ নব্য কোটিপতি হয়েছে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply