টাঙ্গাইল থেকেঃ টাঙ্গাইলের মধুপুরে চার হত্যাকান্ড পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সুপরিকল্পিতভাবেই করেছে দুর্বৃত্তরা প্রাথমিক ভাবে মনটাই ধরনা আইন-শৃংখলা বাহিনীর। চাঞ্চল্যকর চার হত্যাকান্ডের ঘটনায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন ভাইকে থানায় তলব করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (১৭ জুলাই) বিকেলে তাদেরকে মধুপুর থানায় নেওয়া হয়। রাতে মধুপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তারিক কামাল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ওই তিনজন হলেন, ওই এলাকার আবু তাহেরের তিন ছেলে জামাল (৩৫), সালাম (২৭) ও সাইফুল (২৩)। তারা সম্পর্কে নিহত ওসমান গনির শ্যালক।
এদিকে গত দুই দিন আগে ওই দম্পতি ও তাদের দুই সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। পূর্ব শত্রুতার জেরে পরিকল্পিতভাবেই এই হত্যাকাণ্ড বলে মনে করছে আইনশৃঙ্ক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনী।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, নিহত ওসমান গনি মিয়ার মূল বাড়ি মধুপুর পৌরসভার পোদ্দারবাড়ি মৌজার গোলাবাড়ি ব্রিজের পাশে। তিনি পুরাতন অটোরিক্সা-ভ্যান কেনাবেচার ব্যবসা করতেন। প্রায় এক বছর আগে তিনি গ্রামের বাড়ি ছেড়ে পৌর এলাকার উত্তরা আবাসিক এলাকায় শ্বশুর বাড়ির কাছে ৬ শতাংশ জমি কিনে একতলা একটি বাড়ি করে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন। তার তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে সোনিয়ার (২০) বিয়ে হয়েছে। মেঝো ছেলে তাজেল (১৬) উপজেলার ভাইঘাট কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষের ছাত্র। ছোট মেয়ে সাদিয়া (৮) টেকিপাড়া আলহোদা মাদ্রাসার ২য় শ্রেণির ছাত্রী ছিলো। তাজেল ও সাদিয়া বাবা-মায়ের সাথেই বসবাস করতো। তাদের গ্রামের বাড়িতে ওসমান গণির মা থাকতেন। তারা মাঝে মাঝে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যেতেন। কদিন আগেও তার স্ত্রী ও ছোট মেয়ে দাদির বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসেছে।
গত দু’দিন ধরে তার বড় মেয়ে সোনিয়া বাবা-মায়ের মোবাইল ফোন বন্ধ পাচ্ছিলো। পরে শুক্রবার সকালে সে তার মামী সালেহা বেগমকে এই বিষয়ে জানায়। সালেহা বেগম ওই বাড়ি গিয়ে বাসার গেটে বাইরে থেকে তালা ঝোলানো দেখতে পান। এসময় জানালা খোলা থাকায় তিনি সেদিক দিয়ে বিছানার উপর ওসমান গনির লাশ দেখতে পান। প্রতিবেশীদের বিষয়টি জানালে তারা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে তালা ভেঙ্গে পাশের রুমে একই খাটের উপর ওসমান গনির স্ত্রী তাজিরুন বেগম ও ছোট মেয়ে সাদিয়ার গলাকাটা মৃতদেহ ও অপর রুমের খাটের নিচে ছেলে তাজেলের গলাকাটা লাশ দেখতে পায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় ব্যাক্তি জানান, ওসমান গনি আগে ভ্যান চালাতেন। এসময় ভ্যান চালানো ছেড়ে রিক্সা-ভ্যান কেনাবেচার ব্যবসা শুরু করেন। খুব অল্প সময়ে তিনি অনেক অর্থের মালিক হয়েছিলেন। তিনি চড়া সুদের ব্যবসা করতেন বলেও তারা শুনেছেন। স্থানীয়দের সাথে তাদের খুব বেশি ওঠাবসা ছিলো না। তবে কখনো ওসমান গনির সাথে কারোর প্রকাশ্যে ঝগড়া বিবাদ হতে দেখেননি বলেও জানান তারা।
মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিক কামাল জানান, ঘটনার পরই টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিব কুমার রায়, মধুপুর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার কামরান হোসেন, টাঙ্গাইলে র্যাব, পিবিআই, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এই ঘটনায় ক্রাইমসিন পরিদর্শনের পর মামলার প্রস্তুতি চলছে। তদন্তের পর হত্যা রহস্য উদঘাটন করা হবে।
এদিকে ঘটনাস্থল থেকে কোন মূল্যবান জিনিস চুরি যায়নি। তছনছ করা হয়নি ঘরের আসবাবপত্র। বাড়ির তিন ঘর থেকে চারজনের মৃতদেহ ও অপর ঘর থেকে একটি রক্তমাখা কুড়াল উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান ওসি।
ঘটনাস্থলে সিআইডি: এদিকে ঘটনার পর ময়মনসিংহের সিআইডির ক্রাইমসিনের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছে।
এই বিষয়ে সিআইডি ময়মনসিংহের পরির্দশক ইউসুফ আলী জানান, ‘প্রাথমিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলেই মনে হচ্ছে। নিহতদের মধ্যেই তিনজনের হাত-পা দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিলো। বাকি একজনের হাত-পা বাঁধা ছিলো না। তাদের দুইজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও বাকি দুইজনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরে চারজনকেই এলোপাথারি কোপানো হয়েছে। তাদের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের পর মৃত্যুর কারন সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
স্বজনদের আহাজারি, এলাকায় শোক: এদিকে চাঞ্চল্যকর এমন ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতের আত্মীয় স্বজনের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। উৎসুক জনতার ভিড় সামলাতে সারাদিনই বেগ পেতে হয়েছে আইনশৃঙ্ক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। আপনজনদের এমন মৃত্যুতে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন ওসমান গনির মা ও বড় মেয়ে। অন্যান্য আত্মীয়দের মধ্যেও চলছে আহাজারি। এমন হত্যাকাণ্ডের দোষীদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনার দাবি তাদের।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (১৭ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে মধুপুর পৌর এলাকার ৫নং ওয়ার্ডের উত্তরা আবাসিক এলাকার (মাস্টারবাড়ি) একতলা একটি বাসা থেকে একই পরিবারের চার জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলেন, ওই এলাকার ভ্যান রিকশা ব্যবসায়ী ওসমান গনি মিয়া (৪৫), তার স্ত্রী তাজিরন বেগম ওরফে বুচি (৩৭), ছেলে তাজেল (১৬) ও মেয়ে সাদিয়া (৮)।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply