রাকিব হোসেন, শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধিঃ- করোনা দুর্যোগের আলোচনা ও সমালোচনাকে হার মানিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে লাউখোলা আইজ উদ্দিন সরদার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দূর্সাহসিক কার্যকলাপ। এই করোনা দূর্যোগের মূহুর্তেও লোভ-লালসায় ফেঁপে-ফুলে উঠেছেন লাউখোলা আইজ উদ্দিন সরদার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। পরীক্ষার নামে কৌশল ও চাপ প্রয়োগ করে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। এরকম কুরুচি পূর্ণ অভিযোগ রয়েছে লাউখোলা আইজ উদ্দিন সরদার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
শিক্ষা অফিসের সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ অক্টোবর জাজিরা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস নতুন সিলেবাস পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ ছিল ‘সরকার দেশের সকল স্কুলের ষষ্ঠ হতে নবম শ্রেণির জন্য পুনর্বিন্যাসকৃত নতুন সিলেবাস প্রকাশ করেছেন। এর ভিত্তিতে শীঘ্রই অ্যাসাইনমেন্ট (মূল্যায়ন পরীক্ষা) অনুষ্ঠিত হবে। কাজেই সকল শিক্ষার্থীদেরকে এই সিলেবাসটি (জেডটিএসপি) এই ফেসবুকের পেজ হতে ডাউনলোড করে নিয়মিত অধ্যায়ন করার জন্য বলা হলো। আগামী নভেম্বর মাসে অ্যাসাইনমেন্টের কাজ শুরু হবে। এখন থেকে শিক্ষকগণ এই নতুন সিলেবাস অনুযায়ী অনলাইন ক্লাস গ্রহণ করবেন’।
বিদ্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, ওই বিদ্যালয়ে ৭৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১২০ টাকা, সপ্তম শ্রেণিতে ১৩০ টাকা, অষ্ঠম শ্রেণিতে ১৪০ ও নবম-দশম শ্রেণিতে ১৫০ টাকা করে বেতনসহ বিভিন্ন বকেয়া টাকা ধরা হয়েছে এই রশিদে।
এই বিজ্ঞপ্তি পেয়ে জাজিরা উপজেলার লাউখোলা আইজ উদ্দিন সরদার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস ছালাম মিয়া বিদ্যালয়ের ৭৩০ জন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার ৩৭০ টাকা পর্যন্ত বকেয়া পাওনার রশিদ ধরিয়ে দিয়েছেন। রশিদ ধরিয়ে দিয়েই থেমে থাকেননি তিনি। প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায়ও করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ।
বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থী ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগণ বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে রশিদ অনুযায়ী বকেয়া পাওনা পরিশোধ করছেন। রশিদে উল্লেখিত টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অনেককে প্রধান শিক্ষকের সুপারিশের জন্য লাইন ধরতে দেখা গেছে।
বিদ্যালয়ের পাওনা পরিশোধ করে ফেরার পথে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া ও আসমা জানায়, ৩ হাজার ৩৭০ টাকার বকেয়া পাওনা রশিদ ধরিয়ে দিয়েছে স্কুল থেকে। প্রধান শিক্ষকের কাছে ২ হাজার টাকা করে দিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট এনেছে। এই টাকার জন্য তাদের অভিভাবকের কাছে অনেক গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছে। এবং
দাদন শিকদারের নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে ইলিয়াছ জানায়, আমরা দুই ভাইবোন এই স্কুলে পড়ি। আমার ৩ হাজার ৩৭০ টাকা ও আমার বোনের ২ হাজার ৮০০ টাকা বকেয়া পাওনা ধরেছে। আমার বাবা একজন ইট ভাটার শ্রমিক। তার এখন কোন কাজকর্ম নাই। অনেক কষ্ট করে আমাদের সংসার চলে। এই অবস্থায় অনেক কষ্ট করে অর্ধেক টাকা জোগার করে স্যারের কাছে অনুরোধ করে দিয়ে আসলাম।
এছাড়াও আরো একজন অষ্টম শ্রেণী শিক্ষার্থী লিয়ার বাবা আলতু মাদবর জানায়, বাড়িতে আমার মেয়ে টাকার জন্য কান্না কাটি করে। করোনা সংকটে বেকার হয়ে পড়েছি। আমার সংসার চলছে না। এই অবস্থায় স্কুলের বকেয়া টাকার জন্য স্যারে চাপ দিয়েছে। খুব বেকায়দায় আছি।
প্রধান শিক্ষক আব্দুস ছালাম মিয়া বলেন, ২০১২ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত এই বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলাম। এক বছর হলো পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষক হিসেবে আছি। আপনাদের এই বিষয়ে কোন তথ্য নিতে হবে না। আমি আপনাদের সাথে আলাদা কথা বলব।
এই বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার এমারত হোসেন মিয়া বলেন, এই বিষয়ে ইতোমধ্যে এই এলাকার চেয়ারম্যান ও ওই বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ফোন করেছিল। বিষয়টি জাজিরা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে দেখার জন্য বলেছি। সরকার বকেয়া বেতন নিতেও বলেনি বা না নেয়ার জন্যও বলেনি। এই বিষয়ে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে একটা পরিপত্র জারি হতে পারে। তখন সরকারের সিদ্ধান্ত জানা যাবে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply