এম শহিদুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে টাঙ্গাইলে। প্রথম ধাপের ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে। পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে প্রার্থীরা দৌড়ঝাপ শুরু করছেন। টাঙ্গাইলে পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে পৌরসভার সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যাপক তৎপরতা শুরু করছেন। ফলে টাঙ্গাইলের রাজনীতিতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
টাঙ্গাইল পৌরসভা দেশের প্রাচীন পৌরসভার একটি। ১৮৮৭ সালের ১ জুলাই এ পৌরসভাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৫ সালে টাঙ্গাইল পৌরসভা ‘গ’ থেকে ‘খ’ এবং ১৯৮৯ সালে ‘খ’ থেকে ‘ক’ শ্রেণীতে উন্নতি লাভ করে।
আসন্ন পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ গোছাতে ভোটারদের কাছে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজেদের তুলে ধরছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। করছেন গণসংযোগও। সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য প্রার্থীরা জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। বর্তমান মেয়রসহ অর্ধডজন মেয়রপ্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের যারা প্রচারণা চালাচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর রহমান মিরন, প্যানেল মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুজ্জামান খান সোহেল, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল হক আলমগীর, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ রউফ, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক সোলায়মান হাসান, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদের ছেলে আহমদ সুমন মজিদ।
অপরদিকে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে এখন পর্যন্ত জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. মাহমুদুল হক সানুর নামই শোনা যাচ্ছে। বিগত নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন। এবারও তিনিই নির্বাচন করবেন বলে দলটির একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে শহর জাতীয় পার্টির সভাপতি আহসানুল হক খান আছু গণসংযোগ শুরু করেছেন।
নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য মেয়র ও পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর এবং মহিলা কাউন্সিলর পদে নতুন পুরোনো মুখ মিলে প্রায় ১০০ জন প্রার্থীর সক্রিয় তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের প্রচারণা ও তৎপরতা বেশি দেখা যাচ্ছে।
টাঙ্গাইল পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর রহমান মিরন বলেন, আমি তিনবার টাঙ্গাইল পৌরসভার জনগণের বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছি। দল আমাকে আবারো মনোনয়ন দিলে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করবো এবং সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত শহর গড়ে তুলবো।
টাঙ্গাইল পৌরসভার বর্তমান প্যানেল মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুজ্জামান খান সোহেল বলেন, দীর্ঘদিন যাবত আমি টাঙ্গাইল পৌর এলাকার গণসংযোগ করে যাচ্ছি। এতে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও জনগণের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে মেয়র নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার তিলোত্তমা টাঙ্গাইল শহর উপহার দেবো।
শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল হক আলমগীর জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন দলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে। সে কারণে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়াও তিনি কয়েক যুগ ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দলের জন্য আন্দোলন, সংগ্রাম, লড়াই ও জেল খেটেছেন। দায়িত্বশীল কর্মী বিবেচিত হলে তিনি দলের মনোনয়ন পাবেন।
জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান সানু বলেন, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের কোনও বিকল্প নেই। জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করলে পৌর এলাকার যানজট নিরসন ও জলাবদ্ধতা দূর করবো। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন সাধন করবো।
টাঙ্গাইল শহর জাতীয় পার্টির সভাপতি আহসান খান আছু বলেন, ইতোমধ্যে দলের হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পেয়েছি। মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেলে জনগণের ভোটে আমি নির্বাচিত হবো। দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে কথা হচ্ছে জোটের ব্যাপারেও।
নির্বাচিত চেয়ারম্যানের কাছে জনগণের চাওয়া কি? জানতে চাইলে ১৬ নং ওয়ার্ডের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ ওয়ার্ডে বিশেষ করে মাদকসেবীদের প্রবণতা অনেক বেশি। এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিং এবং বখাটেদের উৎপাত রয়েছে। ওয়ার্ডের ভিতরের রাস্তাগুলো এখনও কাঁচা রয়েছে। অল্পবৃষ্টি হলে কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এছাড়াও গ্যাস ও সাপ্লাইয়ের পানির স্বল্পতা রয়েছে। এমন প্রার্থী বেছে নেবো যিনি এসব সমস্যার সমাধান করবেন।
পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ জানান, এই ওয়ার্ডের রাস্তা, যানজট, জলাবদ্ধতা ও মাদকের সমস্যাটা সবচেয়ে বেশি। এই ওয়ার্ডের প্রায় সব রাস্তায় বৃষ্টি হলে চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ ওয়ার্ডে সব রাস্তায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। এ সমস্ত সমস্যার সমাধান যিনি করবেন তাকেই আমরা ভোট দিবো।
পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুর আহসানউল্লাহ জানান, এই ওয়ার্ডের যানজটই মূল সমস্যা। যানজট নিরসনে যিনি কাজ করবেন আমরা তাকেই ভোট দিবো।
উল্লেখ্য, টাঙ্গাইল পৌরসভায় মোট ভোটার ৯৪ হাজার ৬৪৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৬ হাজার ১৩০ জন এবং মহিলা ভোটার রয়েছে ৪৮ হাজার ৫১৪ জন।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply