রাকিব হোসেন, শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি: শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলায় সাব-রেজিস্টারের কাছে দলিল লিখকসহ জমি ক্রেতা-বিক্রেতারা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। গোসাইরহাট উপজেলা সাব-রেজিস্টার মোঃ খায়রুল বাশার পাভেলের বিরুদ্ধে সাব-কবলার দলিল আটকে রেখে প্রকাশ্যে ঘুষ গ্রহণসহ ব্যাপক স্বেচ্চাচারিতা, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিটি সাব-কবলা দলিলসহ অছিয়ত, আমমোক্তারনামা দলিল করার ক্ষেত্রে নগদ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয় সাব-রেজিস্টার মোঃ খায়রুল বাশার পাভেলকে। কাঙ্খিত টাকা না পেলে কোন দলিলে স্বাক্ষর করেন না সাব-রেজিস্টার মোঃ খায়রুল বাশার পাভেল। দলিল হওয়ার পরও অতিরিক্ত ঘুষের জন্য মাসের পর মাস দলিল গ্রাহককে না দিয়ে আটকে রেখে হয়রানী করে সাব-রেজিস্টার মোঃ খায়রুল বাশার পাভেল।
উক্ত গোসাইরহাট উপজেলার সাব-রেজিস্টার মোঃ খায়রুল বাশার পাভেলের এই অনৈতিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে গোসাইরহাট উপজেলার সাব-রেজিস্টার অফিসের দলিল লিখকরা, জেলা রেজিস্টার এবং আইন ও বিচার মন্ত্রীর বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
গোসাইরহাট উপজেলা সাব-রেজিস্টার অফিসের দলিল লিখক সমিতির ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোসাইরহাট উপজেলা সাব-রেজিস্টার মোঃ খায়রুল বাশার পাভেল সাব-কবলা দলিলসহ অছিয়ত, আমমোক্তারনামা দলিল করার ক্ষেত্রে নগদ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা না দিলে দলিলে স্বাক্ষর করে না। স্বাক্ষর বিহীন সেই দলিল তিনি তার টেবিলের ড্রয়ারে রেখে খাসকামরায় চলে যান। তার চাহিদা মোতাবেক টাকা দিতে না পারলে দলিল হবে না বলে জানিয়ে দেন তিনি ও তার কর্মচারীরা। তার অফিসের করণিক নজরুল ইসলামের মাধ্যমে তিনি এ সকল অনৈতিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। এবং নিয়মিত অফিস না করার অভিযোগও উঠেছে সাব-রেজিস্টার খায়রুল বাশার পাভেলের বিরুদ্ধে।
গোসাইরহাট উপজেলা সাব-রেজিস্টার অফিসের দলিল লিখক সমিতির ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোঃ খায়রুল বাশার পাভেল গত ১ বছর ৪ মাস ধরে গোসাইরহাট উপজেলায় সাব-রেজিস্টার হিসেবে কর্মরত আছেন। এখানে যোগদানের পর থেকেই এই অনৈতিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন গোসাইরহাট উপজেলা সাব-রেজিস্টার অফিসের দলিল লিখকরা। উক্ত অফিসে গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া ইউনিয়নের মাছুয়াখালী এলাকার মৃত সিরাজুল হক বেপারীর ছেলে শহীদুল ইসলাম বেপারী ২০২০ সালের জুন মাসের ১১ তারিখে একটি দলিল সম্পন্ন করেন যার দলিল নং-১০৭২। এছাড়াও একই উপজেলার দাসের জঙ্গল এলাকার মৃত বকুল কর্মকারের ছেলে অনিল কর্মকার ২০২০ সালের ২৪ অক্টোবর একটি দলিল সম্পন্ন করেন যার দলিল নং-সি ১১১-৮। সাব-রেজিস্টারকে চাহিদা মোতাবেক উৎকোচ দিতে না পারায় দীর্ঘদিন তাদের দলিল আটকে রাখা হয় এবং অবশেষে মোটা অংকের ঘুষ দেয়ার পর তাদের দলিল দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগিরা। এছাড়াও একই উপজেলার শাখওয়াত হোসেন চুন্নুসহ অসংখ্য লোকের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে গোসাইরহাট উপজেলা সাব-রেজিস্টার খায়রুল বাশার পাভলের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে কোন দলিল লিখক কোন প্রকার প্রতিবাদ করলে তার লাইসেন্স বাতিল করাসহ বিভিন্ন হয়রানি করার হুমকি প্রদান করেন সাব-রেজিস্টার খায়রুল বাশার পাভেল।
গোসাইরহাট উপজেলা সাব-রেজিস্টার অফিসের দলিল লিখক মোঃ আর্দেশ আলী বলেন, আমাদের বর্তমান সাব-রেজিস্টার মোঃ খায়রুল বাশার পাভেল গোসাইরহাট উপজেলায় যোগদানের পর থেকে ঘুষ, দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেও কোন ফল পাইনি। বার বার আমরা হয়রানির শিকার হচ্ছি। জমির সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতারাও ব্যাপক হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে গোসাইরহাট উপজেলা সাব-রেজিস্টার মোঃ খায়রুল বাশার পাভেল তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার অফিসে কোন অভিযোগ থাকলে তারা আমাকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানাবে। আমাকে না জানিয়ে দলিল লিখকদের অন্দোলন করে কি লাভ হবে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply