কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি (দুসস)- এম. সোহাইল চৌধুরীঃ কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও ইউনিয়নের দরগাহপাড়া গ্রামে পৈতৃক নিবাসে থাকা এক অসহায় ৩ সন্তানের জননী আরেফা তার পাষণ্ড স্বামীর অমানুষিক নির্যাতন থেকে বাঁচতে চায় ।
ঈদগাঁও পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না বলে অসহায় নারী আরেফার অভিযোগ।
জানা গেছে, ঈদগাঁও দরগাহপাড়া গ্রামের দিনমজুর ছৈয়দ আলমের মেয়ে আরেফা আক্তারের সাথে প্রায় ১৪ বছর আগে দেশের প্রচলিত আইন ও ইসলামী শরীয়া মোতাবেক বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসের চর এলাকার জারজিস প্রকাশ জসিমের সাথে।
জারজিসের নানা অপকর্ম ও নির্যাতনের কারণে শ্বশুরবাড়িতে বেশিদিন থাকতে পারেনি আরেফা। এক পর্যায়ে পৈতৃক ভিটীবাড়িতে এসে আশ্রয় নেয়। সেখানেও জারজিস উড়ে এসে গেঁড়ে বসে। সন্তানরা পিতৃহারা হবেন এই আশংকায় বার বার স্বামীকে সংশোধনের সুযোগ দিলেও সেই পথে হাঁটেনি বর্বর জারজিস বরং ঘরজামাই থেকে দিনদিন আরো বেপরোয়া হয়ে র্যাব- ডিবি সোর্স পরিচয়ে চাঁদাবাজি,ইয়াবা কারবার’সহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
এক পর্যায়ে সে আরেফার পৈতৃক ভিটি জমি থেকে কিছু অংশ তার (জারজিস) লিখে দিতে আরেফা ও আরেফার পিতা ছৈয়দ আলমকে হুমকি ধমকি দিয়ে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। আরেফা দর্জি কাজ করে দু-চার জমালে সেই টাকায়ও ভাগড়া দিয়ে ইয়াবাসেবনের প্রয়োজন মেটায় সে।
স্বামী নির্যাতনের শিকার আরেফা আক্তার জানান, অতিসম্প্রতি তার স্বামী জারজিস ওরফে জসীম ইয়াবা ব্যবসা ও সেবনের সাথে জড়িয়ে পডে । বাড়িতে সন্তানদের সামনে ইয়াবা সেবন ও বেচাকেনা চলছে প্রতিদিন।
বাধা দিতে গেলেই শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন । ২০ ডিসেম্বর রাতে অভিযুক্ত জারজিস ইয়াবা সেবন করার সময় বাঁধা দিতে গেলে তাকে লম্বা কিরিচ দা দিয়ে খুণ করতে চায়। ওই সময় তার শোরচিৎকারে আশপাশের প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে আরেফাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে এবং পাষণ্ড জারজিসকে ওই ঘরের একটি রুমে আটকে রেখে পুলিশকে খবর দেয়া হয়।
ঘরে আটকে থাকা ধুরন্ধর জারজিস ওরফে মলই জসীম ইত্যবসরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে তাকে উদ্ধার করার আবেদন জানায় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেস বুকেও আমাকে মেরে ফেলবে, আমাকে বাঁচান বাঁচান বলে অভিনয় করে সাহায্য চান। এসআই শামীমের নেতৃত্ব ঈদগাঁও পুলিশতদন্ত কেন্দ্রের একদল পুলিশ একটি লম্বা কিরিচ দা’সহ আটকে রাখা জারজিসকে উদ্ধার করে তদন্তকেন্দ্রে নিয়ে যায় বলে ভুক্তভোগী আরেফা ও তার পরিবার এবং এলাকাবাসীসূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে এসআই শামীম বলেন, ট্রিপল নাইনের (৯৯৯) ফোন পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে জারজিসকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। তবে কিরিচ বা দা জাতীয় কোন কিছু উদ্ধারে কথা অস্বীকার করেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ একজন চিহ্নিত ইয়াবা কারবারি, নারী নির্যাতনকারী,সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্ত জারজিস বিভিন্ন সময় র্যাব,ডিবি ও পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধি কর্মকাণ্ড চালানো’ সহ গ্রামের সহজ সরল যুবসমাজকে প্রলোভন দেখিয়ে ইয়াবা কারবারের সাথে জড়িয়ে ফেলেছে।
পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে গভীররাতে কি কারণে ছেড়ে দিল এই নিয়ে দরগাহপাড়া গ্রামে চলছে নানা ধরণের মিশ্রপ্রতিক্রিয়া। ছাড়া পেয়ে অভিযুক্ত জারজিস আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এবং আরেফার সাহায্যার্থে এগিয়ে আসা প্রতিবেশীদের বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছে অবিরত। এই অবস্থায় ৩ সন্তান এবং পিতামাতা,ভাইদের নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে বলে জানান নির্যাতিত আরেফা আক্তার।
অভিযোগ ওঠা জারজিস জসিমের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও মোবাইল বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।স্থানীয় বাসিন্দা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমাণ্ডের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হাকিম নূকী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন আমাদের উপস্থিতিতেই পুলিশ তাকে লম্বা কিরিচ’সহ ধরে নিয়ে গিয়ে রাতের আধাঁরে ছেড়ে দেয়।
এ ব্যাপারে ঈদগাঁও পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের আইসি আব্দুল হালিমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা হবে এই কথার উপর আমি মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে । যদি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা না হয় আমি আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করব।
ভুক্তভোগী পাষণ্ড স্বামীর নির্যাতন থেকে নিজেকে ও তার পিতামাতা ভাইবোনদের বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে এবং জারজিসের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করতে পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে একটি এজহার দাখিল করেছে।
এলাকাবাসীর দাবি বহিরাগত জারজিসের কারণে শান্তিপূর্ণ দরগাহপাড়া এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা, নিরাপত্তাব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। সে এলাকায় গড়ে তুলেছে ইয়াবা কারবার, অসামাজিক কার্যক্রম ও অপরাধের সংঘবদ্ধচক্র। এই মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে সরেজমিনে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি করেন এলাকাবাসী ও আপামর জনগণ ।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply