মোঃ শাহিন আলম পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি। কলাপাড়ার ধুলাসার ইউনিয়নে ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ প্রকল্পের ৭৬টি ঘর নির্মাণের অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব ঘর নির্মাণে নিন্মমানের ইট, বালু ও রড ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি যাদের ঘর দেয়া হয়েছে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে চেয়ারম্যানের বেয়াই চেয়ারম্যানের নাম বলে হাতিয়ে নিচ্ছে ৪০০০০ হাজার টাকা করে। উপজেলা ত্রান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিস সূত্রে জানাগেছে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে বেশ কয়েকটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয় কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নে। প্রতি ঘর তৈরিতে ১ লাখ ৭১ হাজার বরাদ্দ এবং পরিবহন খরচ ৪ হাজার টাকা দেয়া হয়। নকশা অনুযায়ী, দুই কক্ষ বিশিষ্ট প্রতিটি ঘর হবে ২০ ফুট লম্বা ও প্রস্থ হবে ৮ ফুট। চারদিকে ইটের দেয়াল আর উপরে ৪৬ মিলিমিটারের রঙিন ঢেউটিন দিয়ে ছাউনি দিতে হবে। ঘরের ছাউনির কাজে মেহগনি কিংবা কড়াই কাঠ ব্যবহার করতে হবে। ঘরের মেঝেতে তিন ইঞ্চি ইটের ঢালাই দিতে হবে। রান্নাঘর ও টয়লেট হবে ১৩ ফুট। কিন্তু বাস্তবে উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের ধুলাসার গ্রাম, গঙ্গামতির চড় ও তারিকাটা গ্রামে এসব ঘর নির্মানের ক্ষেত্রে মানা হয়নি সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া কোনো নিয়ম। ধুলাসার ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ঘর নির্মাণের নানা অনিয়মের চিত্র। নিম্ন মানের ইট, কম সিমেন্ট, কম রড আর নিম্ন মানের টিন দিয়ে এসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এসব নিয়ে কথা বলতে গেলে ঘর বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে অনেকেই মুখ খুলতে চাননা। এসব অনিয়ম মেনেই এই সুবিধা ভোগ করছেন তারা। এসব অনিয়মের বিষয়ে ঘর পাওয়া ভুক্তভোগী বাদল হোসেন বলেন, প্রথমে আমাদের বলা হয় কোন টাকা লাগবে না। পরে চেয়ারম্যানের বেয়াই জসিম মোল্লা ও আল আমিন ঘর পায়িয়ে দিবে বলে আমার কাছে থেকে নগদ ৪০০০০ হাজার টাকা নেয়। ঘর নির্মানের কাজে আমার থেকে ১০০০০ হাজার টাকার সিমেন্ট ও কেনায় জসিম মোল্লা এবং মিস্ত্রিদের খাওয়াতে হয় আমার। এছাড়া তিনি আরো বলেন, সাগরে মাছ ধরে পরিবার চালাই, শুধু মাত্র মাথা গোজার একটু ঠাই পাবার আশায় অনেক কস্ট করে টাকাগুলো দিয়েছি কিন্তুু ঘর নির্মানে দেয়া হয়েছে একেবারে নিন্ম মানের ইট যা হাত দিয়ে চাপ দিলে ভেঙে যায়। ঘর পাওয়া আরেক ভুক্তভোগী আমেনা বেগম জানান, পাঁচ লক্ষ টাকার ঘর সাথে টিউবওয়েল দিবে বলে ছাগল বিক্রি ও কিছু টাকা সুদে এনে জসিম মোল্লাকে ৪০০০০ হাজার টাকা দেই। ঘরের কাজে ব্যবহৃত ইট এতোটাই খারাপ যে ভাড়ি বর্ষা এলে ঘর ভেঙে পরবে। ঘরের কাজে ব্যবহৃত কাঠ আমাদের কিনতে বলছে জসিম মোল্লা। এমনি ঘর নির্মানের ছাউনির টিন আনতে পরিবহন খরচ দিয়ে হয় আমাদের এবং টিনগুলো দেয়া হয় নিন্মমানের। এছাড়াও ঘর পাওয়া আরেক ভুক্তভোগী লালবরু বেগম জানান, কোন ছেলে নাই শুধুমাত্র তিনটা মেয়ে নিয়ে অন্যের বাড়ি বাড়ি কাজ করে সংসার চালাই। কাজ না করতে পারলে চুলায় আগুন জ্বলে না তারপরও জীবনের সব সঞ্চয়টুক ঘর পাবার আশায় জসিম মোল্লাকে ৪০০০০ হাজার টাকা দেই। ঘরের কাজ এখনো শেষ হয়নি, সিমেন্টের জন্য কাজ করতে পারছে না। সিমেন্ট যা দিছে তারপর নাকি আর দিতে পারবে না বলেন জসিম মোল্লা তাই আমার কাছে টাকা নাই যে সিমেন্ট কিনে তারপর কাজ করাবো। বেশি কিছু জসিম মোল্লাকে বললে বলে সরকার যা দিছে তা দিয়েই কাজ করতেছি, ভাল না হলে টাকা খরচ করে সুন্দর করে নাও। ধুলাসার ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অভিযুক্ত জসিম মোল্লা বলেন, আমি ঘর দেবার কে। আমি কারও কাছ থেকে ঘর দেবার না করে কোন টাকা নেইনি। ঘর দিতে পারে চেয়ারম্যান তাই এসব বিষয় আমি জানিনা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে আমাকে জ্বাড়ানো হচ্ছে। ধুলাসার ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জলিল মাষ্টার বলেন, আমার নাম বলে যদি কেউ ঘর দেওয়ার কথা বলে টাকা নেয় তারজন্য আমি দ্বায়ী না। তাছাড়া ঘরের কাজ করায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আমি শুধু তদারকি করছি। ঘর নির্মানে নিম্নমানের ইট, বালু ও রড ব্যবহার হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না নিয়ম অনুযায়ী সব ঠিকমত হচ্ছে। এবিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও আবু মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, সরকারি ঘর বরাদ্দে কাউকে কোন টাকা দেয়া লাগে না, যদি কেউ টাকা নিয়ে থাকে তবে ভুক্তভোগী পরিবার গুলো লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply