এম শহিদুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ সরকারের উন্নয়নের এমন ভরা মৌসুমেও সংস্কারের অভাবে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার মাইজবাড়ী-মাদারিয়া সড়কটি বেহাল হয়ে পড়েছে। দেড় কিলোমিটার সড়কটির দুই অংশের প্রায় ৮০০ মিটার খোয়া উঠে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত আর খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।
ফলে সড়কে চলাচলকারী কয়েক গ্রামের লাখো মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এই পাকা সড়কটি অতি দ্রুত নতুন করে পাকাকরণের দাবি ভুক্তভোগীদের। এ নিয়ে সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে একটি লিখিত আবেদনও করেছে এলাকাবাসী।
জানা গেছে, উপজেলার ফলদা ইউনিয়নের মাইজবাড়ী-মাদারিয়া আঞ্চলিক সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি অত্র ইউনিয়নের বাসিন্দাদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করেছে।
এলাকাবাসী জানান, প্রায় ৫ বছর পূর্বে দেড় কিলোমিটার কাঁচা এ সড়কটির মাঝের অংশ বাদ রেখে মাইজবাড়ী অংশে প্রায় ৪০০ মিটার ও পলিশা অংশে ৪০০ মিটার সড়ক আরসিসি ঢালাইয়ের মাধ্যমে পাকাকরণ হয়। রাস্তাটি ছোট যান চলাচলের উপযোগী থাকলেও হাইড্রোলিক ও ভারী যানযাহন চলাচল করায় সংস্কার করার মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই রাস্তার পাকা অংশ একেবারে নষ্ট হয়ে যায়।
পরবর্তীতে পাকা অংশ ভালো দেখিয়ে সড়কটির মাঝের কাঁচা অংশ ২০১৮ সালে পাকা করে এলজিইডি। তবে প্রায় দেড় কিলোমিটার জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি একসঙ্গে পাকা না হওয়ায় সড়কের সুফল পায়নি এলাকাবাসী। বর্তমানে ভাঙাচোরা এ সড়কটিতে কোন যানবাহন নেই বললেই চলে।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং উপজেলার স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অবহেলা ও অনাগ্রহের কারণে দেড় কিলোমিটার এ সড়কটি একসঙ্গে পাকা হয়নি। বর্তমানে সড়কটির মাঝের অংশ ভালো থাকলেও দুই অংশের প্রায় ৮০০ মিটার সড়কের অনেক জায়গায় ঢালাইয়ের চিহ্নমাত্র নেই। বেরিয়ে এসেছে মাটি। সড়কের ইটের টুকরোগুলো উঁচু-নিচু হয়ে আছে স্থানে স্থানে। এমন অবস্থা যে কেউ প্রথম দেখলে এটি পাকা না কাঁচা সড়ক তার জন্য বোঝা কঠিন হয়ে যায়।
পলিশা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির আলী বলেন, ‘পাকা সড়কটির এই কয়েকশ’ মিটার অংশে দিয়ে এখন হেঁটে যাওয়াও কষ্টকর। মাঝের অংশ পাকা থাকলেও দুই পাশে সংস্কার না হওয়ার কারণে পুরো সড়কটিই এখন এলাকার বাসিন্দাদের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
মাইজবাড়ী এলাকার ভ্যানচালক মানিক মিয়া বলেন, ‘সড়কটি যখন কাঁচা ছিল, তখন সব ধরণের ছোট গাড়ি চলাচল করত। আর এখন পাকা থাকলেও ভাঙা অংশে যাত্রীসহ ভ্যান চালিয়ে যাওয়া যায় না। যাত্রীকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি টেনে নিয়ে যেতে হয়।’
ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর পক্ষে ইউএনও’র কাছে আবেদনকারী ঢাকায় কর্মরত সাংবাদিক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘মাইজবাড়ী-মাদারিয়া আঞ্চলিক সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অত্র ইউনিয়নের এক তৃতীয়াংশ মানুষ এই সড়ক দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত মেরামত বা সংস্কার না হওয়ায় পুরো সড়কটিই এখন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।’
তিনি বলেন, ভাঙা এ সড়কে যারা বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে থাকেন, তারা প্রায়ই নানা সমস্যার সম্মুখীন হন। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী, অসুস্থ রোগী, নারী ও শিশুদের জন্য পুরোপুরি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে রাস্তাটি।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রাসেল বলেন, ‘পৌরসভা সীমান্ত ঘেঁষা ইউপির গুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তা দিয়ে কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করে থাকেন। কিন্তু রাস্তাটির দুই অংশে ভাঙাচোরা থাকায় কেউ এখন এই রাস্তা দিয়ে যেতে চায় না। প্রায় দুই কিলোমিটার ঘুরে টেপিবাড়ী হয়ে মানুষ চলাচল করে থাকেন। মাঝের অংশ পাকা থাকলেও দুই পাশে রাস্তা নষ্ট থাকায় সড়কের সুফল পাচ্ছে না এলাকাবাসী।’
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply