টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ(দুসস নিউজ)
টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাউলজানী গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে বিবাদমান জমিতে এক পক্ষের ঘর নির্মান ও অপর পক্ষের ভেঙ্গে দেয়ার সময় সৃস্ট সংঘর্ষের সচিত্র প্রতিবেদন করার লক্ষে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ও ছবি তোলার সময় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষের দুর্বৃত্তদের অমানবিক হামলার শিকার হয়েছেন বাংলা ট্রিবিউনের টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি ও বাসাইল প্রেসক্লাবের যৃগ্ম সাধারন সম্পাদক এনায়েত করিম বিজয় নামের এক সাংবাদিক। হামলার সময় সেখানে কয়েকজন পুলিশ সদস্য থাকলেও তাদের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক।
রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে জেলার বাসাইল উপজেলার কাউলজানি ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বিবাদমান একটি জমিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের নির্মাধীন ঘর ভেঙ্গে দেবার সময় গ্রামের দুই পক্ষের বাদানুবাদের সময় ছবি তুলতে গেলে এ হামলা চালানো হয়।
হামলার খবর পেয়ে বাসাইল প্রেসক্লাবে সাংবাদিকরা তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে গিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে নিয়ে এসে বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করালে সেখান থেকে টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়। বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধী রয়েছেন।
বাসাইল প্রেসক্লাবের সাংবাদিক ও টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট জাফর আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক কাজী জাকেরুল মওলাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ের প্রেস ক্লাবের নেতারা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করে অবিলম্বে হামলায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেন।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে কাউলজানি ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন একটি জমি নিয়ে পরিষদের সঙ্গে গ্রামের একটি সংখালঘু পরিবারের বিরোধ চলছিল। রোববার সকালে ওই জমিতে পরিবারটি ঘর তোলার চেষ্টা করে। এ সময় স্থানীয়রা তাদের বাধা দেন। কাউলজানি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান চৌধুরী হবিও স্থানীয়দের সঙ্গে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে একদল ঘর নির্মানের পক্ষে ও অপরপক্ষ তাদের বাধা দিতে থাকেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বেধে যায়।
ঘটনাস্থলে পেশাগত দায়িত্ব পালনে গিয়ে ছবি তুলছিলেন বাংলা ট্রিবিউনের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি এনায়েত করিম বিজয়। উত্তেজনা সৃষ্টি হলে কিছু লোক উদ্দেশ্যমূলকভাবে সাংবাদিক বিজয়ের গায়ে হাত তোলেন। তারা সাংবাদিক বিজয়কে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। তবে মাথায় হেলমেট থাকায় তিনি কোনোমতে প্রানে রক্ষা পান। স্থানীয় চেয়ারম্যান তাকে উদ্ধার করে ইউনিয়ন পরিষদের অফিস কক্ষে নিয়ে আসেন। পরে বাসাইলের সাংবাদিকরা এসে তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। বর্তমানে তিনি টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আহত সাংবাদিক এনায়েত করিম বিজয় বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান খবর দেয়ায় আমি সেখানে গিয়ে ঘটনাস্থলের ছবি তুলছিলাম। হঠাৎ অনেক লোক জড়ো হয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে আমাকে ছবি তুলতে দেখে কিছু লোক এসে অতর্কিত ভাবে আমার উপর হামলা করে। আমাকে কিল ঘুসি এমনকি লাঠি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। এক পর্যায়ে আমি মাটিতে পরে গেলে লাথিও মারে। মাথায় হেলমেট থাকায় আমি কোনোমতে প্রাণে রক্ষা পাই।’ এমতাবস্থায় স্খানীয় চেয়ারম্যান ফিরানোর চেস্টা করেও ব্যার্থ হন।
ঘটনাস্থলে থাকা বাসাইল থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) বিল্লাল বলেন, ‘দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। দুই পক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। আমরা তিনজন বাইরে ছিলাম। এর মধ্যেই হামলার ঘটনা ঘটে। পরে সাংবাদিক এনায়েত করিম বিজয়কে উদ্ধার করি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বাসাইল থানার অফিসার ইন চার্জ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এরপর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কাউলজানি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান চৌধুরী হবি বলেন, ‘সাংবাদিক বিজয় আমার পূর্ব পরিচিত। পাশাপাশি গ্রামের মানুষ। ওই পরিবারটি ইউনিয়ন পরিষদের জায়গার গাছ কেটে সেখানে ঘর তোলার চেষ্টা করে। এতে স্থানীয়রা বাধা দেয়। চেয়ারম্যান হিসেবে আমিও বাধা দেই। এ সময় সাংবাদিক বিজয়কে ডেকে আনি। তিনি সেখানে এসে ছবি তুলছিলেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সরে যাওয়ায় সাংবাদিক বিজয়ের ওপর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় আমি ভীষণ দুঃখিত ও মর্মাহত।’
বাসাইল প্রেসক্লাবের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দরা জানান বিয়টি নিয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
বাসাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ বলেন, হামলার ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহান জানান, কাউলজানি ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন একটি জমি নিয়ে পরিষদের সঙ্গে গ্রামের একটি পরিবারের বিরোধ চলছে। মারামারির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন। তবে ওই স্থানে কোনো সাংবাদিকের ওপর হামলা চালানো হয়েছে, এমন অভিযোগ পাইনি।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply