এম শহিদুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ
শ্বশুর শাশুড়ির সহিত সৌজন্য মূলক আচরণ ও সেবা করা পুত্রবধুদেরকে বিশেষ উপহার ও সম্মাননায় ভুষিত করছেন মানবিক বান্ধব এক পুলিশ কর্মকর্তা। শ্বশুর-শ্বাশুরির প্রতি সৌজন্য মুলক ব্যবহার ও সেবার এমন উৎসাহ ও অনুপ্রেরনা মূলক ব্যতিক্রম ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন টাঙ্গাইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মীর মোশারফ হোসেন।
তিনি শ্বশুর-শ্বাশুরির সেবা ও তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করা পুত্রবধুদের সন্ধান পেলেই নিজে বাড়ি গিয়ে উপহার পৌঁছে দিচ্ছেন। উপহারের মধ্যে রয়েছে টাঙ্গাইলের তাঁতেরশাড়ী, পোড়াবাড়ির চমচম মিস্টি ও ক্রেস্ট। সেই সাথে পরিবারকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন ফুল দিয়ে। তার এমন উদ্যোগের কারণে চারদিক থেকে প্রশংসিতও হচ্ছেন ব্যাপক।
স্থানীয় সংবাদকর্মী নওশাদ রানা সানভী জানান, আমি নিউজ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে টাঙ্গাইল সদর থানায় যাই। ভিতরে প্রবেশ করেই একটি ফেস্টুন আমার নজরে আসে। সেটিতে লেখা ছিলো ‘বৃদ্ধাশ্রম নয়, পরিবারই হোক বাবা-মায়ের নিরাপদ আবাস’। পুত্রবধূ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তার শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত করে আল্লাহ তাকে আখিরাতে পুরস্কার প্রদান করবেন। সেখানে আরও লেখা ছিলো শ্বশুর শাশুড়িকে যে সেবা যত্ন করবে এবং একসাথে বসবাস করবে সেই ভাগ্যবতীকে পুরস্কৃত করা হবে এবং যোগাযোগের জন্য ফোন নাম্বার উল্লেখ করা ছিলো।
উদ্যোগটি ভালো লাগায় আমি ফেস্টুনের ছবি তুলে ফেসবুক গ্রুপ টাঙ্গাইল জেলা সংবাদে পোস্ট করি। বিষয়টি মানুষ ইতিবাচক ভাবে গ্রহণ করে এবং মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
কলেজ পাড়ার শিউলি জানান, আমি টাঙ্গাইল জেলা সংবাদে একটি পোস্ট দেখতে পাই। সেটি দেখে আমার খুব ভালো লাগে। আমিও আমার শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের বাবা-মায়ের মতো ভালোবাসি এবং তাদের সেবা যত্ন করি। তাদের সেবা করে আমি আত্মতৃপ্তি পাই। বিষয়টি অবগত করার জন্য আমি পোস্টে উল্লেখিত নাম্বারে ফোন করি। পরবর্তীতে বিকেল বেলায় দেখি ওসি স্যার নিজে এসে আমাকে উপহারগুলো তুলে দেন।
মাহমুদা আক্তার জানান, আমি পুরস্কার পেয়েছি। পুরস্কার পেয়ে নিজের প্রতি আরও আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। আমি আমার শ্বশুর শাশুড়িকে এমনিতেই দেখাশুনা করি। ভবিষ্যতেও একই রকম তাদের সেবা করে যাবো।
শ্বশুর কাজী মুজিবুর রহমান জানান, আমার মেয়ে আমাকে যেমন ভালোবাসে, আমার ছেলের বউও ঠিক তেমনি ভালোবাসে। আমাদের দেখভাল ও সেবাযত্নে কোন ত্রুটি করে না। এমন ছেলে বউ পেয়ে আমরা সত্যিই ভাগ্যবান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর হোসেন জানান, আমার ছেলে ও ছেলে বৌ আমাদের সাধ্য অনুযায়ী সেবা করে। একজন পুলিশ অফিসার আমার বৌমাকে পুরস্কৃত করেছে। পুরস্কার পেয়ে সে তো আত্মহারা।
এ বিষয়ে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর মোশারফ হোসেন জানান, আমি লক্ষ্য করেছি বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের অবহেলায় বাবা ও মা অযত্মে জীবন যাবন করেন। অনেকেই ঠিকমত খাবারও দেয় না। আর্থিক অবস্থা ভালো সন্তানেরা বাবা-মাকে ছেড়ে বউ বাচ্চা নিয়ে আলাদা বসবাস করে। অনেক সন্তানরাই ভুলে যায় এই বাবা-মা দিনরাত পরিশ্রম করে এই সন্তানের মুখে আহার তুলে দেন এবং উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেন। তারা এও ভুলে যায় তাদের একদিন বৃদ্ধ হতে হবে। অনেক সন্তানরা কাজের প্রয়োজনে বাহিরে ব্যস্ত থাকে। তাদের বাবা-মা পুত্রবধূর কাছে বেশি সময় কাটায়। আমার উদ্দেশ্য ওই পুত্রবধূদের উৎসাহিত করা।
তিনি আরও জানান, যারা বাবা মাকে ছেড়ে দুরে চলে যায় এবং অনেকের একাধিক সন্তান থাকার কারণে বাবা-মাকে ভরণপোষন নিয়ে ঠেলাঠেলি করে দুরে সরিয়ে দেয়। সেই সব সন্তান ও পুত্রবধূর প্রতি প্রতিবাদ স্বরূপ এই আয়োজন করেছি। যাতে কোন বাবা- মাকে অবহেলা ও বৃদ্ধাশ্রমে যেতে না হয়।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply