নারায়ণগঞ্জ শহরের ৫৩৯ বছরের পুরোনো মসজিদের ওয়াক্ফ এস্টেটের প্রায় ৮৩ শতাংশ জায়গা দখল করে পার্ক ও মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) এর মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে। শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শহরের মণ্ডলপাড়ায় ৫৩৯ বছর আগে মুঘল সম্রাট বাবরের আমলে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। আমাদের পিতামহ মরহুম মীর শরিয়ত উল্লাহর পূর্বপুরুষ ও তার পরবর্তী বংশধররা এই মসজিদ এবং আশপাশের জমি খাদেমি সূত্রে দেখভাল করছেন কয়েকশত বছর ধরে।
১৯৩৫ সালে মসজিদ ও আশপাশের মোট ৮২ দশমিক ৯০ শতাংশ জায়গা মরহুম মীর শরিয়ত উল্লাহ ওয়াক্ফ এস্টেট হিসেবে তালিকাভুক্ত (নং-২০৪০) হয় এবং ব্রিটিশ পর্চা (সিএস ৩২০ দাগ) অনুযায়ী মোট ১৬ শতাংশ জমি পাকা মসজিদ হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। পাশাপাশি সিএস ৩২১ দাগ অনুযায়ী বাকি জায়গাটি শরিয়ত উল্লাহর বংশধরদের নামেই লিপিবদ্ধ হয়। এসএ পর্চা অনুয়ায়ী (৫৬৬ ও ১৯৩) জায়গাটি শরিয়ত উল্লাহর বংশধরদের ও মসজিদের নামেই লিপিবদ্ধ হয়। আরএস পর্চাতেও (৭০৬, ৭০৭) ওই ৮২ দশমিক ৯০ শতাংশ জমি মসজিদ কমিটি ও এস্টেটের নামেই লিপিবদ্ধ হয়েছে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘মেয়র আইভী ওয়াক্ফ এস্টেটের জায়গাটি কখনও সিটি করপোরেশনের, কখনও নিজের পৈতৃক সম্পত্তি বলে দাবি করে আসছেন। এরই অংশ হিসেবে তার নির্দেশে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে পার্শ্ববর্তী স্থাপনা উচ্ছেদের সময় আমাদের মসজিদের পাশে এস্টেটের নিজস্ব সম্পত্তিতে উচ্ছেদ চালিয়ে মসজিদের ১৬টি ঘরের মধ্যে ১১টি ঘর ভেঙে ফেলা হয়। বিষয়টি আমরা ওই বছরের ৮ আগস্ট বাংলাদেশ ওয়াক্ফ প্রশাসনের প্রশাসক বরাবর লিখিতভাবে জানাই।
ওয়াক্ফ প্রশাসন দুইদিন পর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনকে অবগত করে এবং ওয়াক্ফ সম্পত্তির সীমানা চিহ্নিত করে সীমানার অভ্যন্তরে উচ্ছেদ না চালাতে অনুরোধ করে। কিন্তু আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া ওয়াক্ফ এস্টেটের তথা মসজিদের নিজস্ব জায়গার উত্তর-পূর্ব কোণে পুকুর পাড় ঘেঁষে সিটি করপোরেশন রাস্তা নির্মাণকাজ শুরু করে। বিষয়টি পুনরায় আমরা লিখিতভাবে ওয়াক্ফ প্রশাসনকে অবগত করি।
এই পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াক্ফ প্রশাসকের কার্যালয় থেকে মসজিদ কমিটিকে সিটি করপোরেশনের এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার আদেশ দেয়। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হয়।
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, মেয়র আইভী গায়ের জোরে ২২ ফেব্রুয়ারি মসজিদটি ভেঙে পুরো এস্টেটটি দখলের চেষ্টা করেন। এ অবস্থায় আমরা নারায়ণগঞ্জ ৪র্থ সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করলে বিচারিক আদালত উক্ত স্থানে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
অভিযোগের বিষয়ে মেয়র আইভী বলেন, শামীম ওসমানের মাথা থেকে এসব উদ্ভট চিন্তাভাবনা এসেছে। এই মসজিদের কোনো জমি নিয়ে নাসিকের কোনো পরিকল্পনা নেই। এটি সরকারের প্রকল্প। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গণপূর্ত বিভাগ এটি বাস্তবায়ন করছে। সিটি করপোরেশন শুধু সহযোগিতা করছে। নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য শামীম ওসমান তার লোকজনকে দিয়ে এসব বলাচ্ছে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply