আনোয়ার হোসেনঃনিজস্ব প্রতিনিধি।
বাড়ির টানে নিজের ছোট মেয়ে সাথীকে দেখতে গিয়েছিলে রাজধানী ঢাকা শহরে মা রাশিদা (৫০)। সেখানে কয়েকদিন থাকার পর মেয়ে সাথীকে নিয়ে লাশ হয়ে ফিরলো দেশের বাড়িতে।
কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছাড়ার ঘন্টা দেড় পর ট্রেনটি জয়দেবপুর পৌঁছানোর কিছু সময় আগেই রাশেদা বেগম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। মেয়ে সাথী মাকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করেন।
শনিবার(১৩মার্চ) রাতে ঢাকা থেকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন যোগে নিজ বাড়ি শার্শার চটকাপোতাই আসছিলেন। ট্রেনের সিডিউল অনুযায়ী মা-মেয়ে রাত ১১টায় ট্রেনে ওঠে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বেনাপোলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
নিজের কাছে থাকা বোতলের পানি মায়ের মাথায় দিতে থাকেন। মাকে সুস্থ করে বাঁচানোর জন্য এ প্রচেষ্টা। কিন্তু মেয়ের সব আকুতি শেষ করে পরপারে চলে যায় মা রাশেদা। মধ্যরাতে সাথীর মা নিস্তেজ হয়ে পড়লে সাথীর বাঁধভাঙ্গা আহাজারিতে ট্রেনের কম্পার্টমেন্টের সমস্ত যাত্রী জেগে ওঠে। ট্রেনের আশপাশের আসন থেকে লোকজন ছুটে এসে বুঝতে পারে তিনি আর ইহকালে নেই। কিছু আগেই তিনি পরপারে চলে গেছেন ।
সাথী এ সময় কাঁদে আর বলতে থাকে ট্রেনের ভিতরে চিকিৎসা সেবা পেলে তার মাকে বাঁচানো সম্ভব হত। বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে এক হাজারের অধিক যাত্রীর জন্য যদি আজ একজনও ডাক্তার থাকত তাহলে তার মাকে এভাবে অকালে চলে যেতে হতো না।
পাশের যাত্রী খোদেজা বেগম বলেন, আমার চোখের সামনে ছটফট করে মহিলাটি মারা গেল আমরা কিছুই করতে পারিনি। এত বড় ট্রেনটিতে এক হাজারের অধিক সিট রয়েছে। প্রতিটি সিটে একজন করে যাত্রী থাকেন। ট্রেনে প্রতিটি যাত্রীকে ঢাকা থেকে বেনাপোল ও বেনাপোল থেকে ঢাকা পৌঁছানোর জন্য ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা সময় লাগে। এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে ট্রেনের ভিতর অবস্থানকালে অনেক সুস্থ যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন।
কিন্তু এ সময় প্রয়োজন হয় একজন চিকিৎসক ও ওষুধের। কিন্তু ট্রেনের ভিতর চিকিৎসা না থাকায় প্রতিনিয়ত অসুস্থ হয়ে মানুষ জীবন হারাচ্ছে। এটা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত একটা ঘটনা। দেশে ট্রেনগুলোতে ভাড়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও এখনো পর্যন্ত যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পায়নি।বিষয়টি নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রীর দৃষ্টি দেয়া উচিত বলে তিনি জানান।
বেনাপোল জি আরপি পুলিশ অফিসার ইনচার্জ কামাল উদ্দিন বলেন, রোববার সকাল সাড়ে আটটার দিকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা থেকে বেনাপোল প্লাটফর্মে এসে পৌঁছায়। এ সময় দেখি বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ৭৯ নম্বর কোচে, ট নম্বর বগিতে লোকজন ভিড় করছে। সামনে এগিয়ে দেখি মধ্যবয়সী এক নারী ট্রেনের সিটের অবস্থানকালে স্টোক জনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে।
ওই নারীকে তার স্বজনরা থেকে নামানোর চেষ্টা করে। তবে এটা খুবই দুঃখজনক ট্রেনের ভিতরে থাকা অবস্থায় স্ট্রোক জনিত কারণে মারা যাওয়া। তবে যদি ট্রেনের ভিতর একজন ডাক্তার থাকতো তাহলে হয়তো তাকে বাঁচানো যেত বলে তিনি জানান ।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply