সাহিদা পারভীন, কালুখালী (রাজবাড়ী) প্রতিনিধিঃ মানুষের মৌলিক চাহিদার সুষম বন্টন ও নাগরিক সেবার মান বাড়াতে সরকার ২০১০ সালে রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলা প্রশাসনের কার্যক্রম শুরু করে। এরই মধ্যদিয়ে নতুন আশায় বুক বেঁধে উঠে দাঁড়ায় অবহেলিত ৭ ইউনিয়নের পোনেদুই লক্ষ মানুষ। সেই আশার অনেকখানী প্রতিফলন হলেও অনেকটা এখনো বাঁকী। নতুন এই প্রশাসনিক কেন্দ্রে আইন শৃংখলা, রাস্তাঘাট, ব্রীজ, কালভাটসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সরকারী করন করা হয়েছে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে। চন্দনা নদীর উপর তৈরি হয়েছে নান্দনীক ব্রীজ, দুপারে গড়ে তোলা হচ্ছে পর্যটক নগরী। তারপরও নাগরিক সেবার মান কালুখালী অনেকটা পিছিয়ে। গুরুত্বপূর্ন বেশ কিছু দপ্তর এখনো অবহেলিত রয়ে গেছে। বছরের পর বছর কর্মকর্তা না থাকলেও এদিকে কোন খেয়াল নেই কারো। ফলে নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনা চলছে কর্মকর্তাহীন দপ্তরগুলোতে।
উপজেলা প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন পদ উপজেলা নির্বাহী অফিসার। দীর্ঘদিন ধরে কালুখালী উপজেলা প্রশাসনের এই পদটি শূন্য। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) তার নিজ দপ্তরের পাশাপাশি এই দপ্তর দেখেন। দুটি দপ্তরই গুরুত্বপূর্ন হওয়ায় একসাথে পরিচালনা দুরুহ ব্যাপার। তারপরও মন্দের ভালো।
মানুষের মৌলিক অন্যতম একটি শিক্ষা। দেশের উন্নয়নের সাথেও শিক্ষার নিবিড় সম্পর্ক। এসব বিবেচনায় রেখে সরকার শিক্ষা দপ্তরকে ৩ ভাগে ভাগ করে মানুষের এই মৌলিক অধিকার রক্ষা করে। কিন্তু কালুখালীর ৩ দপ্তরেই কর্মকর্তা নেই। প্রায় ৫ বছর আগে কালুখালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কর্মকর্তা হীন। কাগজে কলমে শিক্ষা অফিসার থাকলেও আসলে তিনি ডেপুটেশনে ঢাকায় থাকেন। বড় কর্মকর্তার সাথে যোগসাজসে এই সুযোগ নিয়েছেন বলে জানালেন সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র। শিক্ষা অফিসার না থাকায় নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার মধ্যদিয়ে কালুখালীর প্রাথমিক শিক্ষা অফিস পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিনিয়তই নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠছে এই দপ্তরের বিরুদ্ধে। কোন কোন কর্তা এখানে বছরের পর বছর থেকেও থাকার সাধ মেটেনা। ঘুষ চাওয়ায় এক কর্তাকে অফিস কক্ষে লাঞ্চিত করে ভ‚ক্তভোগী এক যুবক। তারপরও বেচারা লজ্জা পায়না। চেয়ার আঁকড়ে বসে থাকে। অসম্ভব এক লোভনীয় চেয়ারের নাম কালুখালী প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসেও কর্মকর্তা নেই। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অধীনে মাধ্যমিক অফিস। এখানেও নানা অনিয়ম। সরকার সব ধরনের শিক্ষা ফি আদায় বন্ধ করলেও কালুখালী মাধ্যমিক স্কুলগুলো নানাবিধ ফি আদায়ের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। এসব ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসারের চোখের ইশারায় হচ্ছে বলে দাবী অবিভাবকদের। এছাড়া এখানকার শিক্ষক নিয়োগে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে ভারপ্রাপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে। একাধিক শিক্ষক অফিস চলাকালীন সময় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নানা ধান্দাবাজি করে বেড়ান বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে। স্কুল চলাকালীন সময় এসব ধান্দাবাজদের মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কক্ষে আড্ডা মারতেও দেখা যায়। সাংবাদিক নামধারী এক শিক্ষকের জাল সনদে চাকুরীর নেওয়ার অভিযোগ থাকলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার। এদিকে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জয়ন্ত কুমার দাস একাধারে ১১ বছর কালুখালীতে কর্মরত আছেন। ফলে নানা জনের সাথে তার ব্যক্তিগত সখ্যতা গড়ে উঠেছে।
সরকার উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি আন্তরিক হলেও কালুখালীতে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর কোন প্রোগ্রাম অফিসার নেই। চলতি বছর কালুখালী উপজেলায় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার একটি প্রকল্প চালুর কথা রয়েছে। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়,এই প্রকল্পের ব্যয় প্রায় দেড় কোটি টাকা। প্রোগ্রাম অফিসারহীন উপজেলায় এই প্রকল্প কিভাবে চলবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম আরো একটি হলো স্বাস্থ্য। এই সেবার দিক থেকেও কালুখালী অনেকটা পিছিয়ে। উপজেলাটির ১১ বছরেও গড়ে ওঠেনি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র। ফলে পরিবার পরিকল্পনা প্রশিক্ষন,উপকরনসহ নানাবিধ গুরুত্বপূর্ন সংকটে অন্য উপজেলার দিকে চেয়ে থাকতে হয় কালুখালীকে।
নির্বাচন অফিসার,হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা,আনসার ভিডিপি অফিসার, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা, খাদ্য নিয়ন্ত্রক, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী, সাবরেজিষ্ট্রার, পরিসংখ্যান অফিসার, মৎস্য সম্প্রসারন অফিসার, অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা, কৃষি সম্প্রসারন অফিসার পদে কর্মকর্তা নেই। অন্য উপজেলার কর্মকর্তাগন ১০/১৫দিন পর একদিন এসে এখানকার কাজ করে যান। ফলে এসব দপ্তরের নাগরিক সেবা নেই বললেই চলে।
উপজেলার শুরুতে শিল্পকলা ও ক্রীড়া সংস্থা বেশ সরব থাকলেও সম্প্রতী এই দুই সংস্থা ঘুমিয়ে পরেছে । আগের মত এখন আর বুঝার উপায় নেই এখানে এই এ দুটি সংস্থার কার্যক্রম ছিলো।
কালুখালীকে ভিক্ষুকমুক্ত ও বাল্যবিবাহ মুক্ত উপজেলা ঘোষনা করার লক্ষে কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। প্রথমদিকে জড়িপ ও তদারকির কাজও চলছিলো। কিন্তু কাজ সম্পন্ন না হতেই থেমে যায় সব পরিকল্পনা । এজন্য নির্ধারন ছিলো বিশেষ বাজেট। কোথায় গেল সেই বাজেট তা কেউ জানেনা।
আর কদিন পরেই এক যুগপূর্তি উৎসব পালন করবে কালুখালী উপজেলা। জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি সেই মাহেন্দ্রক্ষনের আগে নাগরিক সেবার মান বাড়াতে হবে। তা না হলে মানুষ ভুলেই যাবে তারা নতুন এক উপজেলার বাসিন্দা।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply