এম শহিদুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ
উৎপাদন খরচ না ওঠায় ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে টমেটো
উৎপাদন খরচ না ওঠায় ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে টমেটো
অন্যান্য বছরের তুলনায় টাঙ্গাইলে এবার টমেটোর ফলন হয়েছে বেশ ভালো। কিন্তু বাজারে এখন টমেটোর দাম ও চাহিদা তুলনামূলকভাবে একেবারেই কম। ক্ষেত থেকে টমেটো তুলতে কর্মচারীর খরচও উঠাতে পারছেন না চাষিরা। বাজারে নিয়েও বিক্রি করতে না পেরে টমেটো ফেলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। বিক্রি করতে না পেরে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে অসংখ্য কৃষকের টমেটো। প্রক্রিয়াজাতকরণ বা সংরক্ষণের উপায় না থাকায় বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের টমেটো চাষিরা।
জানা যায়, টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় এবার ৭৭৩ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের টমেটোর আবাদ করা হয়েছে। এবার এ অঞ্চলে ফলনও হয়েছে বাম্পার। বাজারে টমেটো বিক্রির শুরুতে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি করা যেতো। কিন্তু বর্তমানে বাজারে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা মণ করে বিক্রি করা যাচ্ছে।
উৎপাদন খরচ না ওঠায় ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে টমেটো
সরেজমিনে জেলার বাসাইল উপজেলার আদাজান গ্রামে গিয়ে চোখে পড়ে বিশাল চক। এই চকে টমেটো, কাঁচা মরিচ, বেগুন, ডাটা, শসা, আলু, গম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করা হচ্ছে। সেখানে কথা হয় টমেটো চাষি মালম খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় ৮০ শতাংশ জমিতে টমেটোর আবাদ করেছি। এ পর্যন্ত আমার খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। বাজারে ২০০ টাকা মণ করে টমেটো বিক্রি করতে হচ্ছে। যেখানে অন্যান্য বছর বিক্রি করতাম ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা মণ। টমেটো তুলতে কর্মচারী ও বাজারে নেওয়ার খরচই উঠছে না। এখন টমেটো ক্ষেতেই পচে যাচ্ছে।’
উৎপাদন খরচ না ওঠায় ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে টমেটো
টমেটো চাষি আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আমি ৫০ শতাংশ জমিতে টমেটোর আবাদ করেছি। এ পর্যন্ত আমার ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বাজারে টমেটোর দাম একেবারেই কম। বাজারে দুই থেকে তিন টাকা কেজি দরে টমেটো বিক্রি হচ্ছে। অনেক সময় বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে না পেয়ে ফেলে দিয়েও আসতে হয়। টমেটো তুলতে কর্মচারী ও বাজারে নেওয়ার জন্য গাড়ির খরচই উঠছে না।’
উৎপাদন খরচ না ওঠায় ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে টমেটো
সুলতান নামের আরও এক চাষি বলেন, ‘আমি ২৮ শতাংশ জায়গায় টমেটোর আবাদ করেছি। আমার খরচ হয়েছে ১৭ হাজার টাকা। এখন আর বিক্রি করতে পারছি না। এজন্য টমেটো ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে। এবার আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’
উৎপাদন খরচ না ওঠায় ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে টমেটো
বাসাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজনীন আক্তার বলেন, ‘বাসাইলে প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের হাইব্রিড ও স্থানীয় জাতের টমেটোর আবাদ করেছেন কৃষকরা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ফলন বেশ ভালো। কৃষকরা এই মুহূর্তে বাজারে বিক্রি করছেন। তবে যেহেতু এটা শীতকালীন মৌসুমের একেবারে শেষ পর্যায়ে। এই মুহূর্তে এসে চাষিরা কাঙ্ক্ষিত বাজার মূল্য পাচ্ছেন না।’
উৎপাদন খরচ না ওঠায় ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে টমেটো
টাঙ্গাইলের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এবার টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় ৭৭৩ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ করা হয়েছে। সরকার করোনাকালে কৃষকদের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ করেছে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার টমেটোর ফলনও ভালো হয়েছে। তবে ফলন ভালো হওয়ায় বাজারে টমেটোর দাম কমে গেছে।’
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply