নিজস্ব প্রতিবেদকঃ করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কারণে চলমান বিধিনিষেধ লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর প্রস্তাবে অনুমোদন এর কারণে
গত শনিবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চলমান করোনার কারণে বিধিনিষেধে ১৭/২৩ মে নতুন করে অনুমোদন দিয়েছেন। রোববার এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ১৭-২৩ মে আগের যে বিধিনিষেধ ছিল তা চলমান থাকবে। ঈদের পর ২২ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আমাদের ধারণা। এজন্য বিধিনিষেধ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
ঈদের ছুটি শেষে রোববার (১৬ মে) প্রথম কর্মদিবস, সেই কর্মদিবসে লকডাউন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রজ্ঞাপন হবে। তবে সেখানে আগের বিধিনিষেধ রাখা হবে বলে জানান ফরহাদ হোসেন।
চলতি বছর করোনা সংক্রমণ বাড়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ঢিলেঢালা লকডাউন পালন হলেও সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ায় ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর লকডাউন’ ঘোষণা করে সরকার। সবশেষ তা ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
এদিকে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে গতকাল রোববার (১৬ মে) থেকে ১৫ দিনের জন্য লকডাউন জারি করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই বলেছিলেন, ‘রাজ্যে করোনার বিরুদ্ধে লড়তে এমন একটা ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়েছে। গত শনিবার রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় লকডাউন ঘোষণা করলেন। এর আগেই রাজ্যের তরফে থেকে বেশ কিছু বিধি-নিষেধ জারি করা হয়েছিল। এবার সেই বিধি-নিষেধ আরও কঠোর করা হলো।
বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি চালু থাকবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন উভয় দেশের বন্দর ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ীরা। কারণ ভারতীয় পত্র-পত্রিকায় বলা হয়েছে, লকডাউনে রাজ্যের মধ্যে ও রাজ্যের বাইরে জরুরি পরিষেবা (যেমন ওষুধ, সংবাদমাধ্যম, দুধ ইত্যাদির জন্য যান চলাচল করতে পারবে) ছাড়া আন্তঃরাজ্য ট্রাক চলাচল ও পণ্য সরবরাহ বন্ধ থাকবে।
গোপাল শেঠ বলেন, বনগাঁর করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। অবিলম্বে বাইরের ট্রাক ঢোকা বন্ধ করা না গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেবে। ইতোমধ্যেই চলে আসা ট্রাকগুলি দ্রুত খালি করে ফেরত পাঠানোরও আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি।
ভারতের পেট্রাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শশঙ্ক শেখর ভট্রাচার্য জানান, এবারের ১৫দিনের লকডাউনে সব কিছু বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে, আমদানি-রফতানি চালু থাকবে কি না সে ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যেহেতু বনগাঁ পৌর পার্কিং ও পেট্রাপোল ল্যান্ড পোর্টের ওয়্যার হাউজে যেসব পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে সেসব ট্রাকে কোন বাধা নিষেধ থাকবে না বলে তিনি জানান।
আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নতুন সিদ্ধান্তে স্কুল, কলেজ, সরকারি-বেসরকারি অফিস, বাস, ট্যাক্সি, অটো, প্রাইভেট গাড়ি, রাজ্যের মধ্যেকার ও রাজ্যের বাইরে যায় এমন গাড়ি, মেট্রো, ফেরি সার্ভিস জরুরি পরিষেবা ছাড়া অন্য পণ্য পরিবহনের গাড়ি আগামী ১৫ দিন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাত নয়টা থেকে সকাল পাঁচটা পর্যন্ত বাইরে বের হওয়া বন্ধ থাকছে। গতবার রাতে বিনোদনের জন্য হুল্লোড় করেছেন অনেকে। এটা এবার চলবে না। বন্ধ থাকছে মদের দোকান ও সমস্ত রকমের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষামূলক জমায়েত। আগামীকাল রোববার ভোর ছয়টা থেকে ৩০ মে সকাল ছয়টা পর্যন্ত রাজ্যে করোনা নিয়ন্ত্রণে এই কঠোর বিধিনিষেধ জারি হচ্ছে। এই নিয়ম না মানলে বিপর্যয় মোকাবেলা আইনে আইন ভঙ্গকারীকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। চিকিৎসকরা রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন
এর আগে বেনাপোল চেকপোস্টের বিপরীতে পেট্রাপোল স্থলবন্দরে বাণিজ্য-সংক্রান্ত কাজে মানা হচ্ছে না করোনা-বিধি, এমনটাই অভিযোগ করেছিলেন পেট্রাপোলের ক্লিয়ারিং এজেন্টরা।
এ ব্যাপারে পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, গত বছর করোনা পরিস্থিতিতে পেট্রাপোল বন্দরে করোনা-বিধি মেনে বাণিজ্য-সংক্রান্ত কাজ চলছিল। কিন্তু এখন সংক্রমণ বাড়লেও বন্দর এলাকা স্যানিটাইজার করা হচ্ছে না। ট্রাকের চালক-খালাসিদের কোভিড পরীক্ষা হচ্ছে না। মাস্ক-স্যানিটাইজার বিলি কিছুই করা হচ্ছে না। এর ফলে সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ক্লিয়ারিং এজেন্টদের দাবি, সংক্রমণের আশঙ্কা নিয়েও তারা সামনে থেকে বাণিজ্যের কাজ করছেন। সরকারি আধিকারিকদের প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলেও তাদের প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যবস্থা হয়নি।
কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, গত বছর সিডাব্লিুউসি কর্তৃপক্ষ বন্দর এলাকায় স্যানিটাইজ করতেন। এ বার তাদের হাতে দায়িত্ব নেই। ল্যান্ড পোর্ট অথরিটি এখন নিজেরাই দায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু স্যানিটাইজার করা হচ্ছে না। দৈনিক ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শ’য়ে শ’য়ে পণ্য-বোঝাই ট্রাক নিয়ে বন্দরে আসেন চালক-খালাসিরা। অনেকের মুখে মাস্ক নেই। নেই পিপিই। কেউ কেউ একই পিপিই একাধিকবার ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বাইরে থেকে পেট্রাপোল বন্দরে আপাতত ট্রাক আসা বন্ধ করার দাবি তুলে ভারতের উত্তর ২৪ পরগণা জেলা পরিষদের মেন্টর গোপাল শেঠ মুখ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারনণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘আমরাও চিন্তিত না আমদানি-রফতানি হবে কি না। যেহেতু বাংলাদেশে রোববার (১৬ মে) অফিস আদালত খুলছে এবং ভারতে লকডাউন শুরু হচ্ছে সেহেতু ওইদিন সকালে ভারত থেকে পণ্যবাহী ট্রাক না এলে জানা যাবে আমদানি-রফতানি চালু থাকবে কি থাকবে না, আমাদের সে পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply