নিজস্ব প্রতিনিধিঃ যশোর থেকে।
যশোর আবারো করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। যশোর ও নড়াইলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকা ভারত থেকে আগত তিনজনের নমুনা পরীক্ষায় এ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। এ নিয়ে গত ১০ দিনে যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারে ৫ জনের শরীরে ভয়াবহ এ ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, জিনোম সেন্টারের স্পাইক প্রোটিনের সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে তিনজনের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিশ্চিত হওয়া গেছে। গবেষণাটি সার্বিক তত্ত্বাবধান করেন যবিপ্রবির উপাচার্য ও জিনোম সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন। ইতিমধ্যে ভারতীয় ধরণ শনাক্তের বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, আইইডিসিআরবি, যশোর ও নড়াইলের স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। গবেষক দলটি ভারত থেকে আগত সবাইকে করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ হওয়া সাপেক্ষে সঙ্গনিরোধে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। ভারত ফেরত কোনো রোগীর করোনা পজিটিভ হলে জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে ধরণটি শনাক্ত আবশ্যিক বলে মনে করছেন গবেষকরা। এছাড়া বাংলাদেশে ভারতীয় ধরণ শনাক্ত হওয়ায় সীমান্ত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্যিক বা অন্য কোনো কারণে চালক ও সহকারীদের কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও পরীক্ষার প্রয়োজন বলে অভিমত দিয়েছেন।
অধ্যাপক ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, গত ১২ মে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দু’জনের শরীর থেকে নমুনা ও ১৬ মে নড়াইল থেকে একজনের নমুনা পরীক্ষার জন্য যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারে পাঠানো হয়। তাদের নমুনায় করোনা পজিটিভ হয় এবং তারা ভারতফেরত যাত্রী হওয়ায় শরীরে থাকা করোনার ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের জন্য স্পাইক প্রোটিনের সিকোয়েন্স করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় গতকাল মঙ্গলবার তাদের নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বি ১.৬১৭.২ এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
জিনোম সেন্টার থেকে বলা হয়েছে, শনাক্ত রোগীদের মধ্যে দু’জন পুরুষ ও একজন নারী। দু’জন পুরুষের মধ্যে একজনের বয়স ৬১ এবং অপরজনের বয়স ৩৭ বছর। আর নারী রোগীর বয়স ২৭ বছর। তারা সবাই ভারত থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বর্তমানে তারা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।
গবেষক দলটি জানিয়েছে, ভারতীয় এ ধরণটি ২০ শতাংশের বেশি সংক্রমনের সক্ষমতা রাখে। ভ্যাকসিন পরবর্তী ‘সেরাম ও মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি’ এ ধরণকে কম শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করতে পারে। এছাড়া দ্রুত আমাদের ভ্যাকসিনের কার্যক্রম শেষ করতে হবে। তাহলে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকবে। এছাড়া মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানা ও ভারত থেকে মানুষের যাতায়াত কমানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জিনোম সেন্টারে ভারতীয় ধরণ শনাক্তকরণে গবেষক দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন, ড. তানভীর ইসলাম, ড. হাসান মোহাম্মদ আল-ইমরান, অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, শোভন লাল সরকার, এএসএম রুবাইয়াত-উল-আলম, সাজিদ হাসান, আলী আহসান সেতু প্রমুখ।
এর আগে গত ৮ মে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টারে আরো দু’জনের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। এ নিয়ে গত ১০ দিনে যবিপ্রবিতে ৫ জনের শরীরে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হলো।
যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন কিছুই জানেন না বলে জানান। তিনি বলেন, এ জাতীয় কোনো তথ্য থাকলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআরবি তাদেরকে জানাবেন।
এ ব্যাপারে যশোর জেলা প্রশাসক ও জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি তমিজুল ইসলাম খান বলেন, যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারে শনাক্তকৃতদের তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআরবিতে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সব তথ্য উপস্থাপন করবেন বলে তিনি বলেন।
বিষয়টি নিয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, যবিপ্রবিতে করোনা পরীক্ষার ফলাফল সবার আগেই যশোর স্বাস্থ্য বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআরবি পাঠানো হয়। ফলে তথ্য পেয়েও কেউ অস্বীকার করলে তাদের কিছুই করার নেই। তারা সরকারি নিয়ম মেনেই ও সর্বাধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরীক্ষাগারে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের পরীক্ষা আধুনিক ও শতভাগ সঠিক বলে তিনি জানায়।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply