আনোয়ার হোসেন তরফদার ভালুকা প্রতিনিধি ঃ
ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা উপজেলার সিডষ্টোর বাজার হতে বাটাজোর হয়ে সখীপুর উপজেলা সদর পযর্ন্ত শহীদ শমসের সড়কটির ভালুকা উপজেলার প্রায় ১৪ কিলোমিটার অংশের প্রায় সবটুকুই দীর্ঘদিন যাবত ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে যান চলাচল অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কটি দিয়ে বর্তমানে যাত্রী ও পণ্যবাহী কোন যান চলাচল না করায় এলাকাবাসীর জন্য অভিশাপ ও মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে।
সড়কটি দিয়ে যান চলাচল করতে না পাড়ায় একদিকে উপজেলার শিল্পাঞ্চল হবিরবাড়ী, কাচিনা ও ডাকাতিয়া ইউনিয়নসহ পাশ্ববর্তী সখিপুর উপজেলার বেশীর ভাগ এলাকার কৃষকদের উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে পারছেন না। ফলে কৃষকরাও ব্যাপক ক্ষতি সাধনের সম্মূর্খীন হচ্ছে। অপরদিকে সড়কটির দু’পাশে শতাধিক শিল্প উদ্যোক্তারা বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের লক্ষে জমি ক্রয় করলেও শিল্প –কারখানা স্থাপনের কাজ করতে পারছেন না। শিল্প স্থাপনে প্রয়োজনীয় মালামাল আনা-নেওয়া করতে না পাড়ায় শিল্পায়নে সৃষ্টি হয়েছে বড় বাঁধা। আর যে সব শিল্প প্রতিষ্ঠান ইতি মধ্যেই স্থাপিত হয়ে চলমান রয়েছে সে গুলোর উৎপাদিত পন্য বাজারজাতের জন্য সরবরাহ বা কাঁচামাল আনার ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে।
উপজেলা প্রকৌশলৗ অফিস সূত্রে জানাযায়, দীর্ঘদিন যাবত ভূক্তভোগীরা এ গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি মেরামত করার দাবী জানিয়ে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসুচীর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসলে, দুই বছর পূর্বে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আরটিআইপি-২ প্রকল্পের আওতাধীন রাষ্ট্রীয় ও বিশ্ব ব্যাংক আইডিএ এর অর্থায়নে, ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ে হতে সীডস্টোর- সখিপুর হেড কোয়াটার সড়কের ভালুকা উপজেলাধীন ১৩.৭০ কিঃ মিঃ সড়ক পাকা করণের জন্য ২৪ কোটি ৯৫ লক্ষ ৩৩ হাজার ২শত ৩৩ টাকা ব্যয় নির্ধারণ পূর্বক দরপত্র আহবান করে। ওই প্রকল্পের জন্য রাফিয়া কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মনোনিত হয়ে কার্যাদেশ প্রাপ্ত হয়ে গত ০৮/১০/২০১৯ খ্রিঃ তারিখে কাজ শুরু করেন। ০১/০৩/২০২১ খ্রিঃ কাজ শেষ হওয়ার তারিখ থাকলে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শুরুতে ২/৩ মাস সময় নিয়মিত কাজ করে দুই কিঃমিঃ এর কিছু বেশী অংশ মেকাডাম পর্যন্ত করে প্রকল্পের মূল কাজের আনুমানিক ২০/২৫ শতাংশ সম্পন্ন পূর্বক নির্বাহী প্রকৌশলী, এলজিইডি ময়মনসিংহ বরাবর ১০ কোটি টাকার আংশিক বিল জমা দেয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজের অগ্রগতি যাচাই-বাছাই পূর্বক ১ কোটি টাকার আংশিক বিল প্রদান করেন। বিল নেওয়ার কিছুদিনের মধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হঠাৎ কাজ বন্ধ করে লাপাত্তা হয়ে যায়। এলাকাবাসী জানান হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন ভাবে দাবি জানিয়ে আসছে, এমনকি মানববন্ধনসহ বহুবার বিভিন্ন কর্মসুচী পর্যন্ত পালন করা হয়েছে। অবশেষে ২০১৯ সালের শেষের দিকে রাস্তাটির নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় এলাকাবাসীর মাঝে স্বস্থি ফিরে আসছিল। বর্তমানে সামান্য বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হওয়া অসংখ্য খানা-খন্দরে পানি জমে থাকে, এসব গর্তে প্রায়ই মালবোঝাই গাড়ী উল্টে যাচ্ছে, চাকা আটকে যাচ্ছে, যাত্রী বাহী বাস, লেগুনা, সিএনজি, টেম্পু এসব চলতে না পারায় জন সাধারণ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তিনি আরও জানান, এ সড়কটি দিয়ে একটি কলেজ, দুইটি ফাজিল মাদ্রাসা ও তিনটি দাখিল মাদ্রাসা, একটি গার্লস হাই স্কুলসহ বেশ ক’টি হাই স্কুল ও প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ছাত্রীরা দীর্ঘদিন যাবত ঝুঁকি নিয়ে কষ্ট করে প্রতিদিন যাতায়ত করে আসছে। তিনি আরো বলেন, এ সড়কটি এলাকাবাসির জন্য বর্তমানে অভিশাপ ও মরণ ফাঁদে পরিনত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সড়কে চলাচলকারীরা জানান, দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তার ওপর এই সড়কের লাউতি খালের উপর ব্রিজটি ভেঙ্গে কয়েক মাস পরপর বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তার সাথে ব্রীজটিও দ্রুত নির্মাণ করা অতীব জরুরি । উপজেলা প্রকৌশলৗ ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, কিছুদিন কাজ করার পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে কোনরুপ অবহিত না করেই হঠাৎ সড়ক নির্মাণে কাজ বন্ধ করে দেন। কার্যাদেশের শর্তানুযায়ী কাজ সম্পন্ন করার জন্য ওই প্রতিষ্ঠানকে মৌখিক ও লিখিত ভাবে বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও কাজ শুরু করেননি।
অবশেষে গত ০৫/১০/২০২০ খ্রিঃ তারিখে যথাযথ কর্তৃপক্ষ ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল করেন। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ অতি গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি নির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগের লক্ষ্যে গত ডিসেম্বরে নির্বাহী প্রকৌশলী ময়মনসিংহ ও ভালুকা উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের সমন্বয়ে আট সদস্যের ম্যাজারমেন্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই ম্যাজারমেন্ট কমিটি গত ডিসেম্বরে কার্যাদেশ বাতিলকৃত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতে পুনঃরায় ম্যাজারমেন্ট করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ নির্বাহী প্রকৌশলী, ময়মনসিংহ বরাবর দাখিলের পর ওই প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে ঠিকাদার নিয়োগের জন্য গত তিনমাস পূর্বে পুনঃরায় দরপত্র আহবান করা হয়েছে। কিন্ত বাতিলকৃত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে বাস্তবায়নকৃত কাজসহ নানা বিষয়ে চুড়ান্ত নিস্পত্তি ও দাপ্তরিক কাজকর্ম সম্পন্ন না হওয়ায় পরবর্তী ঠিকাদারকে কার্যাদেশ প্রদানে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।
ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা খাতুন জানান, পূর্বের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিলের পর দ্রুত ওই রাস্তার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাহী প্রকৌশলী ময়মনসিংহের সাথে জন গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সমন্বয় করে আসছি। আশা করি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ওই সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply