এম শহিদুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ
কোরবানি ঈদ উপলক্ষে টাঙ্গাইলে চাদিহার চেয়ে বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে। তারপরও পশু বিক্রি এবং ন্যায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কায় খামারিরা। কর্তৃপক্ষ অনলাইনে পশু বিক্রিতে উৎসাহিত করলেও জেলার অধিকাংশ খামারির এ সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকায় দুশ্চিন্তা আরো বেড়েছে। ঈদে গরু বিক্রি করতে না-পারলে অনেকেই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়বেন বলে জানা গেছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্র জানায়, জেলার ১২টি উপজেলায় ছোট-বড় ৬ শতাধিক গরু মোটাতাজাকরণের খামার রয়েছে। খামারগুলোতে ৯৫ হাজার ২০০ কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে। সরকারি হিসেবে জেলায় কোরবানির জন্য ৮৪ হাজার ২২০টি পশুর চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ৬৮ হাজার ৮১টি গরু-মহিষ এবং ২৭ হাজার ১১৯ টি ছাগল-ভেড়া। এই হিসাব অনুযায়ী জেলায় চাহিদার চেয়ে ১০ হাজার ৯৭৭টি পশু বেশি প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়াও জেলার কৃষক পর্যায়ে প্রায় ৫০ হাজার পশু মোটাতাজা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
করোনাভাইরাসের কারণে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ১৩টি ‘অনলাইন পশুর হাট’ পেইজ খোলা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুক পেইজে খোলা হাটগুলোর মধ্যে জেলার ১২টি উপজেলায় ১২টি এবং জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে একটি অনলাইন পশুর হাট। এসব পেইজে ৮ জুলাই পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৮১টি পশুর বিবরণসহ ছবি আপলোড করা হয়েছে। সরকারি এসব অনলাইনে ইতোমধ্যেই ১৩২টি কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে।
খামারি জহিরুল ইসলাম শুকুর বলেন, অন্য বছরের মতো এ বছরও ৪টি ষাঁড় মোটাতাজা করেছি। করোনার মধ্যে খর, কুড়া, ভুষিসহ অন্য খাবার অতিরিক্ত দামে কিনতে হয়েছে। তবে করোনার মধ্যে কোরবানির পশুর হাট বসবে কিনা এবং ন্যায্যমূল্য পাবো কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি। ঋণ করে ষাঁড়গুলো বড় করলেও ঈদে বিক্রি করতে না পারলে উল্টো আরো ঋণ বেড়ে যাবে।
খামারি হাফিজ মিয়া বলেন, নিজেরা খেয়ে না খেয়ে খুব কষ্ট করে ৭টি ষাঁড় গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছি। অনলাইন হাট সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। দুইতিন জনের সাথে পরামর্শ করেছি তারাও অনলাইন হাট সম্পর্কে ধারণা দিতে পারেনি। বাড়িতে খুচরা ক্রেতা ও পাইকাররা আসছে। তবে কেউ নেয়ার মতো দাম বলছে না। এ বছর দাম ভালো না পেলে আগামী বছর থেকে আর গরু পালবো না।
তবে অনলাইনে ভালো সাড়া পেয়েছেন দুলাল হোসেন চকদার। তিনি করোনার কারণে এবার অনলাইনে গরু বিক্রির উপর জোর দিয়েছেন। ফেইসবুক পেইজ খুলে গরুর ছবি দিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই অনলাইনে লোকজন যোগাযোগ করছেন, পাইকাররাও ফেইসবুকে গরুর ছবি দেখে স্বশরীরে খামারে আসছেন। ২৬টি গরু অনলাইনে বিক্রি করেছেন তিনি।’
টাঙ্গাইল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রানা মিয়া বলেন, কঠোর লকডাউনের কারণে হাট-বাজার বন্ধ। কোরবানির পশু বেচাকেনা করতে জেলা প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উদ্যোগে একটি এবং ১২টি উপজেলায় ১২টি মোট ১৩টি ফেইসবুক পেইজ খোলা হয়েছে। অনেকেই এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে গরু বিক্রি করছেন। সরকারি নির্দেশনা পেলে তবেই পশুর হাট বসবে বলে জানান তিনি।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply